২০২২ সালের ডিসেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ঋষভ পন্ত। ভারতের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের অবস্থা এমন হয়েছিল যে আর কখনো ক্রিকেট খেলতে পারবেন কি না, শুরু হয়েছিল সেই আলোচনাও।
২০২৩ সালটা পন্তের কাটে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ২০২৪ আইপিএল দিয়ে ফেরা, এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়। সড়ক দুর্ঘটনার সেই দুঃসহ স্মৃতি পেছনে ফেলে পন্ত নিজেকে প্রমাণ করেছেন দারুণভাবেই। বিশ্বকাপ জিতেই তাই যেন কিছুটা আবেগপ্রবণ পন্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন সৃষ্টিকর্তাকে।
আইপিএলের সবশেষ মৌসুমে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ১৩ ম্যাচে করেছেন ৪৪৬ রান। তবে উইকেটকিপিং নিয়ে দুশ্চিন্তাটা ছিলই। বিশেষ করে দুর্ঘটনায় তাঁর হাঁটু মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর সেই হাঁটু খেলার অবস্থায় ফেরাতে পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠখড়। হাঁটুর পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটা ছিল জটিল ও কষ্টকর। স্টাম্পের পেছনে নিজেকে আগের অবস্থানে ফেরাতে তাই আলাদাভাবে ঘাম ঝরিয়েছিলেন তিনি।
তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উইকেটকিপার হিসেবে দারুণই করেছেন পন্ত। ১৩টি ক্যাচ আর ১টি স্টাম্পিংয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উইকেটকিপার হিসেবে রেকর্ডই করেছেন সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালের। ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত পন্ত। ৮ ম্যাচে ২৪.৪২ গড়ে করেছেন ১৭১ রান। স্ট্রাইক রেট ১২৭.৬১। সবচেয়ে বড় কথা দেশকে জেতাতে পেরেছেন বিশ্বকাপের শিরোপা।
গত দেড় বছরে অবর্ণনীয় অনিশ্চয়তা আর কষ্টকর শারীরিক অবস্থা থেকে হয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পন্ত লিখেছেন, ‘আমি ধন্য, আমি বিনীত ও কৃতজ্ঞ। অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার নিজস্ব একটা পরিকল্পনা থাকে।’
পন্ত যে অবস্থার মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন, তাতে সৃষ্টিকর্তার ভাবনা তো আসবেই। ২০২৩ বিশ্বকাপে খেলার কোনো সুযোগই ছিল না। বিশ্বকাপ খেলা তো দূরের কথা, ক্রিকেটে ফেরাটাই ছিল চ্যালেঞ্জের। বার্বাডোজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের পর তাঁর ক্রাচে ভর দেওয়া সেই দিনগুলো নিশ্চিতভাবেই মানসপটে ভেসে উঠেছে।
আইপিএলের আগপর্যন্ত সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের উইকেটকিপারের জায়গাটা লোকেশ রাহুলের জন্য বাঁধাই ছিল। কিন্তু পন্ত আইপিএলে নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই নিজেকে রাহুলের চেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণ করেছেন। পন্ত সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনার কথা বলেছেন, কিন্তু গত দেড় বছরে তাঁর নিজের যে পরিশ্রম, একাগ্রতা, মানসিক দৃঢ়তা—তা তো অনন্যই।