দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম। আজ এ মাঠেই হবে বাংলাদেশ–ভারত দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচ
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম। আজ এ মাঠেই হবে বাংলাদেশ–ভারত দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচ

বাংলাদেশের সামনে ‘নতুন’ দিল্লির চ্যালেঞ্জ

বছর দুয়েক আগেও অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের সঙ্গে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের তুলনা করা হতো। একটি ঢাকার মাঠ, আরেকটি দিল্লির। মিলটা ছিল উইকেটের চরিত্রে—মন্থর গতি ও নিচু বাউন্সে।

২০১৯ সালে দিল্লির এই মাঠেই ভারতকে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন তখন বাংলাদেশ দলের কম্পিউটার অ্যানালিস্ট। হায়দরাবাদের ছেলে হলেও থাকেন মুম্বাইয়ে।

আইপিএল দল লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের হয়ে কাজ করায় ভারতের সব মাঠের ডেটা শ্রীনির মুখস্থ। কাল তাঁকে চার বছর আগের সে ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দিতেই মজা করে বললেন, ‘দিল্লি তখন ছিল ঠিক মিরপুরের মতো।’ এরপর জানালেন নতুন দিল্লির উইকেটের কথা, ‘এখন দিল্লির উইকেট একেবারে ভিন্ন—পেস, বাউন্স আর ব্যাটিং–স্বর্গ।’

ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ একমাত্র জয়টা পেয়েছিল দিল্লিতেই

শ্রীনির কথার সঙ্গে মিলে যায় এই মাঠে সর্বশেষ ম্যাচের রেকর্ড। ২০২২ সালে সেই টি–টোয়েন্টি ম্যাচে ভারত ৪ উইকেটে ২১১ করেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিততে পারেনি। আইপিএল রেকর্ডও প্রায় একই। ২০২৪ আইপিএলে ৫টি ম্যাচ হয়েছে এখানে। ১০ ইনিংসের ৮টিতেই রান হয়েছে ২০০–এর বেশি, অন্য দুটির একটিতে ১৯৯। যেখানে আগের দুই আসরে ২০০ হয়েছে মাত্র দুবার।

এ মাঠেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদের দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ও ট্রাভিস হেড দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতেই (প্রথম ৬ ওভারে) ১২৫ রান তোলেন। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে এলে এখনো কেউ না কেউ সেদিনের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের আলাপটা তোলেন। সেই অভিষেক আবার এখন ভারতীয় দলেরও ওপেনার।

অতীতের সুখস্মৃতি থাকলেও আজ সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচের আগে তাই স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। ভালো ব্যাটিং উইকেটে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে আকাশ–পাতাল পার্থক্য। ছোট বাউন্ডারির এই স্টেডিয়ামে যে চার-ছক্কার ঝড় উঠবে, তা গতকাল ভারতের নেট সেশন থেকেও অনুমান করা যাচ্ছিল।

দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচ সামনে রেখে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের ছাদে উড়ছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

কাল লম্বা নেট সেশন শেষে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব সতীর্থ অভিষেককে বলছিলেন, ‘এই নেটের উইকেটগুলো ভালো। খুবই ভালো। ওই পাশেরগুলো আগের দিল্লির মতো। অনেক মন্থর ও নিচু। এটা ভালো।’

এমন মারকুটে ব্যাটিংয়ের আবহ কোনো বোলারেরই পছন্দ হওয়ার কথা নয়। ভারতের অর্শদীপ সিং–ও ব্যতিক্রম নন। কাল যেমন অর্শদীপের ‘মুড’ বদলে গেল দিল্লির মাঠে সর্বশেষ আইপিএলের রেকর্ড শুনে। ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকায় কাল তাঁর মাঠে আসারই কথা ছিল না। তবু মাঠের পাশে একটু অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হোটেল থেকে বেরিয়েছিলেন। ভারতের মিডিয়া ম্যানেজারও সেই সুযোগে অর্শদীপকে সংবাদ সম্মেলনে নিয়ে আসেন।

এর মধ্যে তাঁকে আইপিএলের মারদাঙ্গা ব্যাটিংয়ের কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি উত্তরে বলেন, ‘এবারের আইপিএলে এ মাঠে আমাদের কোনো ম্যাচ ছিল না। কিন্তু এখানে ওই রকম রান হয়েছে শুনে আমি আর উইকেট দেখতে চাইছি না। কাল আসব, কোচরা যা পরিকল্পনা দেবেন, সেটা শুনব। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।’ পরে হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘আপনি তো ভয় পাইয়ে দিলেন। ম্যাচ নিয়ে আজ ভাবতেই চাইনি। আমার ছুটির দিন ছিল আজ।’

বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা মাহমুদউল্লাহর সংবাদ সম্মেলনে টি–টোয়েন্টি থেকে তাঁর অবসরের ঘোষণাই বড় হয়ে থাকল। তবে ম্যাচের প্রসঙ্গ তো একটু না একটু আসবেই, যা আসতেই মাহমুদউল্লাহ গোয়ালিয়রের ম্যাচটা ভুলে নতুন শুরুর কথা বললেন, ‘বোলিং ইউনিট হিসেবে আমি একটা কথাই বলব, আমাদের যে বোলিং ইউনিট আছে—পেস এবং স্পিন—তারা গত কয়েক বছর ধরে খুবই দারুণ করে যাচ্ছে। আমার মনে হয় আমরা গত ম্যাচে খুব বাজেভাবে হেরেছি, ব্যাটিংটা খুব ভালো হয়নি, বোলিংটাও হয়নি। তবে আমাদের সেটা নিয়ে এখন ভেবে লাভ নেই। আমাদের সামনে তাকাতে হবে।’

অনুশীলনে মাহমুদউল্লাহ। গতকাল দিল্লিতে

সামনে তাকানো মানে আজকের দ্বিতীয় ম্যাচ। সিরিজে টিকে থাকতে হলে যেটিতে জিততেই হবে। অবসরের ঘোষণা দেওয়া মাহমুদউল্লাহর জন্য হলেও যে সিরিজে বাংলাদেশ দল বিশেষ কিছু করতে চায়। সেই ‘বিশেষ কিছু’ যদি হয় নতুন দিল্লির উইকেটে, তাহলে তো কথাই নেই।