সামনে প্রেরণা হতে পারে এ ম্যাচ

বাংলাদেশের হয়তো প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল দুটি দলকে হারানোর। নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়েকে পেয়ে হয়তো সেই প্রত্যাশা বেড়েছিলও। তবে জিম্বাবুয়ের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স স্বাভাবিকভাবেই হিসাব–নিকাশ বদলে দেয়। এসবের মধ্যেও দুটি জয়ের পর মনের ঈশান কোণে স্বপ্ন উঁকি দেওয়া শুরু করেছে, এ টুর্নামেন্ট থেকে আমাদের আরও প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে। যদিও সে জন্য পারফরম্যান্সে উন্নতি লাগবে আরও।

ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো উইকেটটি বাংলাদেশ ব্রিসবেনেই পেল। বলে তেমন মুভমেন্ট ছিল না, ব্যাটে দারুণভাবে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ টসটাও পক্ষে এসেছে। নাজমুল ওর মতো খেলতে পেরেছে। তাড়াহুড়ো না করেই ফিফটিটা পেয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিয়েছে।

একজন ওপেনারের কাছ থেকে অন্তত চলনসই একটা পারফরম্যান্স পাওয়া গেল। তবে মাঝের সমস্যাটা এখনো রয়ে গেছে। এমন উইকেটে একটা বড় জুটি আশা করেছিলাম। নাজমুল আরেকটু থাকবে, এমন আশাও ছিল। তবে সাকিব চেষ্টা করেছে, আফিফের ভূমিকাটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশ অনেক দেড়কে দুই বানাতে পেরেছে, বিশেষ করে প্রথম ১০-১৫ ওভারে রানিং বিটুইন দ্য উইকেট বেশ ভালো ছিল।

শেষটা কালও ভালো হয়নি। আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার যৌক্তিকতাও মেলেনি। সাত ব্যাটসম্যান, সঙ্গে সাকিবসহ পাঁচজন বোলার যথেষ্ট। কৌশলগত এ ভুলটি আবার দেখলাম। অষ্টম ব্যাটসম্যান এসে মাত্র দুটি বল পেয়েছে। আর আটজন খেলালে দলের ব্যাটসম্যানের কাছে একটা বার্তাও যায়—তাদের ওপর টিম ম্যানেজমেন্টের তেমন আস্থা নেই। এর থেকে বের হয়ে আসা দরকার দ্রুতই। কাল ব্যাটিং দেখে আরেকটি জিনিস মনে হলো, আমরা আগে ব্যাট করলে তুলনামূলক নির্ভার খেলা হয়। রান তাড়ায় যেমন উইকেট পড়ে, খেলার গতি কমে আসে, প্রয়োজনীয় রান রেটের চাপ বাড়ে।

আফিফ ও নাজমুল নিজেদের জুটিতে দ্রুত রান তুলেছেন

একজন ব্যাটসম্যানের জায়গায় স্বীকৃত একজন বোলার খেলানোর কথা আবার বলব। এমন ম্যাচে বাড়তি একজন পেসারকে খেলানোর সুযোগটা নিতে পারত বাংলাদেশ। তৃতীয় পেসার হিসেবে হাসান ঠিকঠাক না করতে পারলে অধিনায়কের হাতে অপশন থাকত না। জিম্বাবুয়ের হাতে উইকেট বেশি থাকলে কি ওই সময়ে স্পিনার আনতে পারত অধিনায়ক? নেদারল্যান্ডস ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিইনি। বোলাররা যথেষ্ট ভালো করছে, তাদের উইংয়ে আরেকজন দরকার। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করেছে তাসকিন। রান আটকে রেখেছে, উইকেটও পেয়েছে। মোস্তাফিজও দারুণ মিতব্যয়ী ছিল।

মোসাদ্দেক ব্যাটিংয়ে তেমন কিছু করতে পারেনি, মিসফিল্ডও করেছে। তবে বোলিংয়ে নিজের দায়িত্বটা বেশ ভালোভাবে পালন করেছে। প্রতিদিন এমন হবে না। আরও শক্তিশালী প্রতিপক্ষের জেনুইন ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকলে মোসাদ্দেকের পক্ষে এমন চাপ নেওয়া কঠিন হবে। এ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ দিকে সাকিবের দারুণ ফিল্ডিংয়ে ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়

এ ম্যাচে জয়ের অবদানের কথা বললে সাকিবের ওই অসাধারণ রানআউটের কথা বলতে হবে। ওখান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে পড়ে যাওয়ার আগে ১০-১৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল থেকে স্টাম্প ভাঙা—সহজ নয় মোটেও। অনেক দিন পর অসাধারণ একটা রানআউট দেখলাম।

ওই জুটি না ভাঙলে ম্যাচ হয়তো আমাদের অনুকূলে থাকত না। ব্যাটিং-বোলিংয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে না পারলেও অধিনায়ক ঠিক সময়ে দলকে ম্যাচে এনেছে। দলকে উজ্জীবিতও করেছে সেটি।

এখনো অনেক পথ বাকি বাংলাদেশ দলের

এ সংস্করণে এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। তবে এ দুটি ম্যাচ হয়তো পরের বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে। আর শেষটা যদি আরও ভালো হয়, সেটা অসাধারণ হবে। সেমিফাইনাল যেতে পারি কি না, সেসব বাদ দিয়ে ভাবলেও এ ম্যাচ প্রেরণা জোগাতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যাটসম্যানরা যদি নিজেদের একটু মেলে ধরতে পারে, বোলাররা যদি ফর্মটা ধরে রাখতে পারে।