টানা দুই ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপটা ভালোভাবেই শুরু করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এরপর টানা দুই ম্যাচে হার দেখেছে তারা। ভারতের সঙ্গে ৭ উইকেটে হারের পর গতকাল অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে ৬২ রানে। বেঙ্গালুরুতে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ৩০৫ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের এমন হারে হতাশ দেশটির সাবেক গতিতারকা শোয়েব আখতার। পাকিস্তান আসলেই সেমিফাইনাল খেলার মতো দল কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন শোয়েব। এ সময় দলের ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং—তিন বিভাগেরই সমালোচনা করেন শোয়েব।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে শোয়েব প্রশ্ন তুলেছেন টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তেরও, ‘পাকিস্তানের পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত কেন? আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, কেন? আপনি আগে ব্যাট করে ৩২০–৩৩০ রান করে বোলারদের সুযোগ করে দিতে পারতেন। হয়তো তারা প্রতিপক্ষকে আউট করতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি।’
বিশ্বকাপে সম্ভাব্য বড় তারকাদের একজন ভাবা হচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি বাবর। বড় ম্যাচে বাবরকে পারফরম্যান্সের তাগিদ দিয়ে শোয়েব বলেছেন, ‘বাবর আজম দারুণ খেলোয়াড়। কিন্তু দারুণ খেলোয়াড়কে দারুণ ইনিংসও খেলতে হয়। নিজের নাম বড় করতে হলে বড় দলের বিপক্ষে খেলে পারফর্ম করতে হবে। পারফর্ম করেই আপনাকে জানাতে হবে, আপনি বড় খেলোয়াড় এবং বড় ম্যাচে বড় রান করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই আপনার আশা ছাড়া উচিত নয়।’
ইনিংসের শুরুতে পাকিস্তানি বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলায় মেতেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার। তবে শেষ দিকে ম্যাচে ফিরে আসে পাকিস্তানের বোলাররা। দলের বোলিং নিয়ে শোয়েবের মন্তব্য, ‘পাকিস্তান শেষের ১৫ ওভার খুব ভালো করেছে। কারণ, পাকিস্তানের শক্তি হচ্ছে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট। দেখেন শেষে ২০ ওভারে মারকুটে ব্যাটিংয়ের সময় পাকিস্তানের বোলাররা দারুণভাবে ফিরে এল। তারপরও ইফতেখারকে প্রথম বদলি বোলার হিসেবে আনা এবং উসামা মিরের ক্যাচ ছাড়া—এগুলো আমি বুঝতে পারছি না।’
এরপরই পাকিস্তান সেমিফাইনালে খেলার মতো দল কি না, সে প্রশ্ন তোলেন শোয়েব, ‘পাকিস্তানের সুযোগ অনেক কম মনে হচ্ছে। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলা আছে। আপনারা আসলেই কি বিশ্বাস করেন, এই পাকিস্তান দল সেমিফাইনালে খেলার যোগ্য? তারা কি সত্যিই শীর্ষ চারে থাকার মতো দল? আমি আপনাদের কাছে এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতে চাই। দর্শক হিসেবে আপনারাই বলুন। আমি সত্যিই হতাশ।’
বোলারদের মধ্যে একমাত্র শাহিন শাহ আফ্রিদিই কিছুটা সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন শোয়েবকে, ‘পাকিস্তানের খেলায় লড়াইয়ের কোনো তাড়না দেখছি না। যদিও শাহিন অনেক চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় বলের সঙ্গে সে চেষ্টা করেছে এবং তার সুফলও সে পেয়েছে। কিন্তু যখন উইকেটে সিম–সুইং কিছুই হচ্ছে না, তখন আপনার দক্ষতার প্রদর্শন কোথায়? সে সময় কীভাবে আপনি বাঁচবেন এবং রান বাঁচাবেন, সেসব শিখতে হবে। এরপরও তার চেষ্টা ভালো ছিল। সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এবং ৫ জনকে আউট করেছে।’
এরপর আবারও পাকিস্তান সেমিফাইনাল খেলার মতো দল কি না, সে প্রশ্ন সামনে আনেন শোয়েব, ‘কিন্তু আমি আবারও আপনাদের কাছে প্রশ্নটা রাখব, এই দল কি আসলেই সেমিফাইনাল খেলার যোগ্য? তবে পাকিস্তান দলের জন্য আমার শুভকামনা থাকবে। তারা শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসুক। এটাই আমার চাওয়া।’
পাকিস্তানের পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে। ২৩ অক্টোবরের ম্যাচটির নিয়ে পাকিস্তান দলকে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন শোয়েব। তিনি বলেছেন, ‘আফগানিস্তান কিন্তু শক্তিশালী দল। তাদের কাছ থেকে লজ্জা পাওয়া থেকে বাঁচতে হবে। আমি বলছি না আফগানিস্তান বাজে দল। তারা অনেক ভালো দল। পাকিস্তানের মানেরই দল। আর চেন্নাইয়ে খেলা, স্পিন উইকেট হবে এবং বল টার্ন করবে। আফগানিস্তানের সহায়ক কন্ডিশনই হবে। আর শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান যদি হারে, তবে সেটা খুবই বিব্রতকর ব্যাপার হবে।’