টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরির পর মুশফিকুর রহিমের গর্জন। আজ রাওয়ালপিন্ডিতে
টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরির পর মুশফিকুর রহিমের গর্জন। আজ রাওয়ালপিন্ডিতে

রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট

পাকিস্তানে ২১ বছরের যে খরা কাটালেন মুশফিক

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ তকমা এমনি এমনি লাগেনি মুশফিকুর রহিমের গায়ে। দেড় যুগেরও বেশি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এত কিছু করেছেন যে নামের সঙ্গে বিশেষণটা লেপ্টে গেছে। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলাতেও সেই ধারায় হাঁটছেন। এখনো বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগের বড় এই ভরসা আজ পেয়ে গেলেন টেস্ট ক্যারিয়ারে ১১তম সেঞ্চুরি।

মুশফিকের সেঞ্চুরির পরপরই পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিনে সম্ভাব্য সেরা অবস্থানে থেকে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গেছে বাংলাদেশ। ১১৭ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে সফরকারীদের সংগ্রহ ৩৮৯ রান। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে স্বাগতিকদের চেয়ে পিছিয়ে ৫৯ রান। মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন মেহেদী মিরাজ (১৭*)। এর আগে যেমন সঙ্গ দিয়ে গেছেন লিটন দাস (৫৬)। মুশফিকের ইনিংসটা আরও বড় হলে বাংলাদেশ যে লিড নেবে, তা নিশ্চিত করে বলাই যায়।

অথচ আঙুলে ব্যথা নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন মুশফিক। পাকিস্তানের কন্ডিশন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে জাতীয় দলের সঙ্গে সেখানে না গিয়ে ‘এ’ দলের সঙ্গে আগেই গিয়েছিলেন। ইসলামাবাদে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রথম অনানুষ্ঠানিক টেস্ট চলাকালে নেটে অনুশীলনের সময় আঙুলে চোট পান। ওই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংও করতে পারেননি। এমনকি ভারী বর্ষণের কারণে পারেননি টেস্টের ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিতেও।

আঙুলে ব্যথা নিয়ে এই টেস্ট খেলতে নেমেছেন মুশফিক

সেই মুশফিকই টেস্টে ২১ বছর ধরে পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিখরা কাটালেন। তাঁর আগে পাকিস্তানের মাঠে টেস্টে সেঞ্চুরি ছিল হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমরের। ২০০৩ সালের পাকিস্তান সফরে করাচি টেস্টে হাবিবুল ও পেশোয়ার টেস্টে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন জাভেদ। যদিও পেশোয়ারের জাভেদের সেই সেঞ্চুরির পর এবং এই ম্যাচের আগে পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশ মাত্র তিনটি টেস্ট খেলেছে।

এই সিরিজ শুরুর সময় থেকেই মুশফিকের সঙ্গে তামিম ইকবালের নাম উচ্চারিত হচ্ছিল। মুশফিকের কারণে তামিম যেন বাংলাদেশ দলে দীর্ঘ দিন ধরে না থেকেও আছেন! কীভাবে? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫০০০ রানের মাইলফলক থেকে ৩২ রান দূরে থাকতে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন মুশফিক। কাল তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে ফিফটি পূরণের পথে সেই দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে সেই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। প্রথমজন অবশ্যই তামিম (১৫১৯২)।

আজ সেঞ্চুরি করে তামিমকে তো ছাড়িয়েই গেলেন মুশফিক। ইনিংসের ১১৬তম ওভার করতে আসা আগা সালমানের তৃতীয় বলটি ফাইন লেগে খেলে ২ রান নিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন। মুষ্টিবদ্ধ হাতে ব্যাট উঁচিয়ে ধরার পাশাপাশি করলেন গর্জনও। তাঁর সেই গর্জনে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের আত্মবিশ্বাস যেমন বেড়েছে, তেমনি ১১তম সেঞ্চুরি করে পেছনেও ফেললেন তামিমকে (১০ টেস্ট সেঞ্চুরি)। ১২ সেঞ্চুরি নিয়ে মুশফিকের ওপরে এখন শুধুই মুমিনুল।  

২০০৩ সালে পাকিস্তান সফরে টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন জাভেদ ওমর (বাঁয়ে) ও হাবিবুল বাশার

মহামারি করোনার পর থেকে মুশফিকের ব্যাটিংয়ের ধার যেন আরও বেড়েছে। টেস্টে ক্যারিয়ারে তাঁর ব্যাটিং গড় ৩৮.৭৭ হলেও ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ৪৭.০৩। এই তিন বছরে টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি (১৩৩৪)। এই সময়ে তিনি যাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বেশিবার শতক ঊর্ধ্ব জুটি গড়েছেন, সেই লিটন আছেন শীর্ষে (১৬৫৮ রান)।

মুশফিকের দায়িত্বশীল ব্যাটিং দেখে গতকাল তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান রমিজ রাজা। তিনি বলেছিলেন, ‘মুশফিক বাংলাদেশ দলের সব চাপ শুষে নিচ্ছে। সে এভাবে ব্যাটিং করে গেলে বাংলাদেশ এই টেস্টকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বানিয়ে ফেলতে পারে।’

রমিজের ধারণা অনুযায়ী মুশফিক বাংলাদেশকে সে পথেই নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই টেস্টে ইতিবাচক ফল পেতে হলে মুশফিককে ইতিহাসও বদলাতে হবে। ২০০৩ পাকিস্তান সফরে হাবিবুল ও জাভেদ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন এই আগস্ট মাসেই। কিন্তু তাঁদের সেঞ্চুরি বৃথা করে করাচি ও পেশোয়ার টেস্ট জিতে নিয়েছিল পাকিস্তান।

রাওয়ালপিন্ডিতে মুশফিকের সেঞ্চুরি কি পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশকে হারের বৃত্ত থেকে বের করে আনতে পারবে? সময় হলেই তা জানা যাবে।