নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে শেষ ম্যাচটি জিতেছে বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাস কি টি–টোয়েন্টি সিরিজে কাজে লাগাতে পারবে নাজমুল হোসেনের দল
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে শেষ ম্যাচটি জিতেছে বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাস কি টি–টোয়েন্টি সিরিজে কাজে লাগাতে পারবে নাজমুল হোসেনের দল

নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টিতেও ‘প্রথম’-এর অপেক্ষা

গত বছর এল টেস্ট জয়। এবার ওয়ানডে। পরপর দুই বছর দুই সংস্করণের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে হারানোর স্বাদ পেয়েছে। আগামীকাল থেকে দুই দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজ, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আরও একটি ‘প্রথম’-এর আশা তো করতেই পারে বাংলাদেশ!

সেই ‘প্রথমটা’ আসুক তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুটির মধ্যেই, এটাও হয়তো চাওয়া। ওয়ানডে সিরিজের মতো সিরিজের শেষ ম্যাচে জ্বলে উঠতে চায় না বাংলাদেশ। বরং নেপিয়ারের সেই দাপুটে জয়ের আত্মবিশ্বাসটা টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুতে কাজে লাগিয়ে চমক দেখাতে চায় নাজমুল হোসেনের দল। এ বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টির তখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একই কাজ করেছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হাতছাড়া করলেও শেষ ম্যাচে বাটলারদের হারানোর আত্মবিশ্বাসটা বয়ে নিয়ে যায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে।

গত মার্চে ইংল্যান্ডকে টি–টোয়েন্টি সিরিজে হারায় বাংলাদেশ

আর গত মার্চের সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফলটা তো সবার মনে থাকার কথাই। বাংলাদেশ ইংলিশদের ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে চমক দেখায়। কাল টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচের ভেন্যু নেপিয়ার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় দলের কোচিং স্টাফের এক সদস্য তা মনে করিয়ে দিলেন, ‘ওয়ানডের মতো বেশি দেরি করা যাবে না। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই কিছু করতে পারলে সিরিজটা দুই দলের জন্যই খুলে যাবে। এটা টি-টোয়েন্টি, যেকোনো কিছুই হতে পারে।’

নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান না থাকলেও টি-টোয়েন্টি দলটা নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কারণ, এই সংস্করণে এ বছর বাংলাদেশের রেকর্ড। ইংলিশদের ধবলধোলাইয়ে শুরু করা ২০২৩-এ বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি খেলেছে ৮টি, হেরেছে মাত্র ১টিতে।

তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, বাংলাদেশ ম্যাচগুলো খেলেছে ঘরের মাঠে। এবার পরীক্ষাটা ছোট সীমানার নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং–স্বর্গে। যেখানে এর আগে বাংলাদেশ দল ৯ ম্যাচ খেলে জয়ের দেখা পায়নি একটিতেও। যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল এক পেশে।

সৌম্য-লিটনরা অবশ্য কিউইদের ওদের মাঠে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে হারানোর খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন ২০২১ সালে। সেবার নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও ডাকওয়ার্থ-লুইসে ২৮ রানে হেরে যায়। কোন ম্যাচের কথা বলা হচ্ছে তা বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের মনে পড়ার কথা। বৃষ্টির কারণে ছোট হয়ে আসা (১৭.৫ ওভার) সে ম্যাচে ৫ উইকেটে ১৭৩ রান করে নিউজিল্যান্ড। যা তাড়া করতে নামার আগে বাংলাদেশের লক্ষ্য কতো তা কেউই জানত না। বিগ স্ক্রিন, ব্ল্যাক ক্যাপসের এক্স অ্যাকাউন্ট, আইসিসি ওয়েবসাইট—সবখানে বাংলাদেশের লক্ষ্য দেখাচ্ছিল ১৬ ওভারে ১৪৮ রান। পরে প্রথমবার সংশোধনী দিয়ে নতুন লক্ষ্য দেওয়া হয় ১৭০ রান। শেষ পর্যন্ত সঠিক লক্ষ্য ছিল ১৭১ রান!

ওয়ানডে সিরিজে শতক পাওয়া সৌম্য কি টি–টোয়েন্টি সিরিজেও আলো ছড়াতে পারবেন

বাংলাদেশ দল তা জানতে পারে ইনিংসের ১৩তম ওভারে। পরে জানা যায়, মাঠে ফটোকপি মেশিন না থাকায় ডিএলএস শিট দলগুলোর কাছে পৌঁছানো যায়নি। বাংলাদেশ দল শেষ পর্যন্ত ১৬ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪২ রান করে। সৌম্য সরকার ২৭ বলে ৫১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন। শেষ পর্যন্ত ২৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ, যা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের মাটিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম ব্যবধানের হার। বাংলাদেশ দলের তখনকার কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ম্যাচ শেষে অব্যবস্থাপনার কড়া সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘আমি জীবনে এমন ম্যাচ দেখিনি যেখানে ব্যাটসম্যানরা লক্ষ্য না জেনে ব্যাট করতে নেমেছে।’

সেই বিতর্কিত ম্যাচটিও ছিল নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে। যে মাঠে এবার কিউইদের প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। ২০ ওভারের সিরিজের প্রথম ম্যাচটাও নেপিয়ারেই। সেই বিতর্কিত ম্যাচের অনেকেই এবার বাংলাদেশ দলে আছেন। মুখে না বললেও কিউইদের মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়টা নিশ্চয়ই এ মাঠেই পেতে চাইবেন নাজমুলরা।

টি–টোয়েন্টি সিরিজে ভালো করার প্রত্যাশায় বাংলাদেশ দল

অন্য কারণেও সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে বাংলাদেশ এই ৩ ম্যাচসহ মোট ১১টি টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পাবে। স্বাভাবিকভাবেই এ ম্যাচগুলোর তাই বাড়তি গুরুত্ব আছে। খেলোয়াড়েরাও নিজেদের প্রমাণে মুখিয়ে থাকবেন।

সব মিলে রোমাঞ্চকর এক টি-টোয়েন্টি সিরিজের পূর্বাভাসই পাওয়া যাচ্ছে।