ক্রিকেটসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা বক্তব্য দিয়ে প্রায়ই আলোচনায় আসেন গৌতম গম্ভীর। ভারতের সাবেক এই ওপেনার এবার সরব হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলে ‘নায়ক–পূজার’ সংস্কৃতি নিয়ে। বলেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটকে নায়ক তোষণের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আর নির্দিষ্ট ক্রিকেটারদের তোষণের সংস্কৃতির জন্য তিনি আঙুল তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী এবং সংবাদমাধ্যমের দিকে।
সম্প্রতি ক্রিকেটসহ নানা বিষয় নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন গম্ভীর। যেখানে ভারতীয় ক্রিকেটে ব্র্যান্ড বানানো নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
গম্ভীর বলেছেন, ‘ড্রেসিংরুমে দানব তৈরি কোরো না। একমাত্র দানব হওয়া উচিত ভারতীয় ক্রিকেট, কোনো ব্যক্তি না। আপনি কি মনে করেন না, এই যে নায়ক–পূজার যে ধারা, তা কি পরবর্তী তারকা তুলে আনার পথকে রুদ্ধ করবে? এই ছায়ায় আসলে কেউ বেড়ে উঠতে পারবে না। এর আগে এটি ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনি, এখন বিরাট কোহলি।’
এশিয়া কাপে ছন্দে ফেরার পর থেকেই আলোচনায় কোহলি। ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে এমন মাতামাতি পছন্দ হচ্ছে না গম্ভীরের, ‘যেদিন কোহলি ১০০ রান করেছে, একই দিন মিরাটের মতো ছোট শহর থেকে উঠে আসা এক তরুণ (ভুবনেশ্বর কুমার) ৫ উইকেট নিয়েছিল। কেউ সে সম্পর্কে কথা বলার প্রয়োজনীয়তাই বোধ করল না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ধারাভাষ্য কক্ষে একমাত্র আমিই এটা নিয়ে কথা বলেছিলাম। সে (ভুবনেশ্বর) ৪ ওভার বল করে ৫ উইকেট নিয়েছে। আমার মনে হয় না কেউ এ ব্যাপারটি জানে। অন্যদিকে কোহলি ১০০ করেছে, যা নিয়ে পুরো দেশ উদ্যাপন করেছে।’
ভারতকে এই নায়ক–পূজার ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেটা হতে পারে ভারতীয় ক্রিকেটে, রাজনীতিতে কিংবা দিল্লি ক্রিকেটে। আমাদের এটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের পূজা করতে হবে কেবল ভারতীয় ক্রিকেটকে।গৌতম গম্ভীর, ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ভারতকে এই নায়ক–পূজার ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেটা হতে পারে ভারতীয় ক্রিকেটে, রাজনীতিতে কিংবা দিল্লি ক্রিকেটে। আমাদের এটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের পূজা করতে হবে কেবল ভারতীয় ক্রিকেটকে।’
ভারতীয় ক্রিকেটে এভাবে নায়ক–তোষণের জন্য কাদের দায় দেখছেন, জানতে চাইলে গম্ভীর বলেছেন, ‘কারা এটা তৈরি করেছে? এটা তৈরি হয়েছে দুটি বিষয় দিয়ে। প্রথমত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অনুসারীরা। যা কিনা দেশের সবচেয়ে ভুয়া জিনিস, কারণ আপনাকে বিচার করা হয় আপনার কত অনুসারী আছে, তা দিয়ে। এটাই ব্র্যান্ড তৈরি করে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমকেও ব্র্যান্ড তৈরির জন্য দোষারোপ করেছেন গম্ভীর। তিনি আরও যোগ করে বলেছেন, ‘দ্বিতীয়ত, এটি তৈরি হয়েছে সংবাদমাধ্যম এবং টেলিভিশন সম্প্রচারকদের দ্বারা। আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি নিয়ে সারা দিন এবং সারা রাত আলোচনা করেন, তবে একসময় তা ব্র্যান্ডে পরিণত হবে। যেভাবে এটি হয়েছিল ১৯৮৩ সালে, যখন ভারত প্রথম বিশ্বকাপ জেতে। এটা ছিল কপিল দেব। আর যখন ২০০৭ ও ২০১১ সালে আমরা বিশ্বকাপ জিতলাম, এটা হয়েছিল ধোনিকে নিয়ে।’
তবে এভাবে ব্র্যান্ড তৈরির জন্য খেলোয়াড়দের কোনো দায় দেখছেন না গম্ভীর, ‘কে এটা তৈরি করেছে? কেউ না। কোনো খেলোয়াড় এটা করেনি, বিসিসিআইও করেনি।’
তাহলে কারা? গম্ভীরের কথা, ‘খবরের চ্যানেলগুলো কি কখনো ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করেছে? ভারতীয় ক্রিকেট যে বিকশিত হওয়া উচিত, এটা নিয়ে তারা কখনো আলাপ করেছে? ভারতীয় ক্রিকেটের স্টেকহোল্ডার দুই–তিনজন মানুষ। তারা ভারতীয় ক্রিকেটকে শাসন করে না, তাদের ভারতীয় ক্রিকেটকে শাসন করা উচিতও না।’
গম্ভীর এরপর যোগ করেন, ‘সবাইকে এখানে অবদান রাখতে হবে। আমি আমার জীবনে কাউকে অনুসরণ করিনি, এটা আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা। সংবাদমাধ্যম এবং সম্প্রচারকারীরাই ব্র্যান্ড তৈরি করে, আর কেউ করে না।’