টেস্টে এত রান করার পর জো রুটের মতো ব্যাটসম্যানের ‘বাজবল’ খেলার দরকার নেই বলে মনে করেন সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন। তাঁর শঙ্কা, অনেক ‘দারুণ’ কাজ করলেও বেন স্টোকসদের দলটি তেমন কিছু জিতবে না—এমন হতে পারে। ‘উইকেট ছুড়ে এলে’ ভারতেও সিরিজ জিতবে না ইংল্যান্ড, এমন মত ভনের।
হায়দরাবাদে স্পিন–সহায়ক উইকেটে ভারতকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড, তবে বিশাখাপট্টনমে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং–ধসের পর হেরে গেছে তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯৯ রানের রেকর্ড লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ২৯২ রানে আটকে যায় সফরকারীরা। হায়দরাবাদে ওলি পোপ ১৯৬ রানের ইনিংস খেললেও দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে অর্ধশতক পেয়েছেন শুধু জ্যাক ক্রলি।
দ্বিতীয় ইনিংসে রুট খেলেছেন খ্যাপাটে এক ইনিংস। ২ চার ও ১ ছক্কায় ১০ বলে ১৬ রানের সে ইনিংস শেষ হয়েছে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে। রুট কেন অমন শট খেলতে গেলেন, সে আলোচনাও চলছে। এমনিতে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও স্টোকসের অধীনে ইংল্যান্ড বেশ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার চেষ্টা করে। যদিও স্টোকস বলেছেন, ‘বাজবল’ বা তাঁদের এই ধরনটি মূলত মানসিকতারই।
তবে সেটির মধ্যে পড়ে রুট নিজের খেলা হারিয়ে ফেলছেন কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন ভন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে এক কলামে ২০০৫ সালের অ্যাশেজজয়ী অধিনায়ক লিখেছেন, ‘প্রথম বল থেকেই তারা পঞ্চম গিয়ারে শুরু করে। তাদের কেউ কেউ এভাবে খেললে আমার কোনোই আপত্তি নেই। কারণ, তারা এসবে ভালো। তবে জো রুটের এসব ভুলে যাওয়া উচিত। জো রুটের মতো করে খেলেই সে ১০ হাজার টেস্ট রান করেছে। তার “বাজবলার” হওয়ার দরকার নেই।’
এ ক্ষেত্রে টিম ম্যানেজমেন্টেরও এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন ভন, ‘ম্যানেজমেন্টের কেউ রুটের কাঁধে হাত রেখে বলবে “দয়া করে নিজের খেলাটাই খেলো”—এ সময়টা চলে এসেছে। আমার মনে হয়, সে বাজবলে বেশি মাথা ঘামিয়েছে, এই রোমাঞ্চ আর বিনোদনের যে তত্ত্ব, বিশেষ করে স্পিনের বিপক্ষে (রুটের নিজের মতো খেলা গুরুত্বপূর্ণ)। গ্রাহাম গুচের সঙ্গে রুটই স্পিনের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান।’
দ্বিতীয় ইনিংসে রুটকে মোটেও তাঁর মতো মনে হয়নি ভনের, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে যেভাবে খেলেছে, এটা তো রুট নয়। এভাবে উইকেট ছুড়ে দিলে ইংল্যান্ড ভারতে জিতবে না। আমি বুঝেছি, কিছু একটা হয়েছে। যখন দুই ইনিংসেই রিভার্স সুইপে প্রথম রান করেছে। সে এভাবে খেলে না। সে সময় নেয়, এরপর ঝুঁকি নেয়। জোয়ের সেই শক্ত ভিতটা হতে হবে, যাকে ঘিরে বাকিরা খ্যাপাটে আক্রমণ চালাবে।’
রুটের এমন খেলা নিয়ে এর আগে প্রশ্ন করা হয়েছিল স্টোকসকেও। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলেছিলেন, কাউকে নির্দিষ্ট কোনোভাবে খেলতে বলা হয়নি, প্রত্যেকেই নিজের কাজটি জানেন। ইংল্যান্ডের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক রুট এ সিরিজে এখন পর্যন্ত ৪ ইনিংসে করেছেন ৫২ রান। রুটের রানে ফেরা নিয়ে অবশ্য কোনো সংশয় নেই কোচ ম্যাককালামের, ‘এখনো তিনটি টেস্ট বাকি, অনেক রান করার সুযোগ এখনো আছে।’
তবে ইংল্যান্ডের দীর্ঘ মেয়াদে সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ভন। তাঁর মতে, ‘আমার চিন্তা হয়—তারা হয়তো এমন একটা দল হয়ে উঠবে, অনেক ভালো কাজ করেও যারা খুব বেশি কিছু জিতবে না।’ গত বছর অ্যাশেজের উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, ‘তারা অ্যাশেজ জেতেনি, যেটি জেতা উচিত ছিল। এখন ভারতকে সিরিজে ফেরার সুযোগ দিয়েছে। ভারতের যখন বিরাট কোহলির মতো বড় খেলোয়াড় নেই, ইংল্যান্ড এ সফরে অনেক কিছুই ঠিক করেছে, আমি বিশ্বাস করি তারা জিততে পারবে। তবে সেটি করতে গেলে ব্যাটিংয়ে দ্রুতই তাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে।’