পাকিস্তান সরকার তাদের ক্রিকেট দলকে বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে পাঠাবে কি না, এ নিয়ে প্রচুর তর্ক–বিতর্ক, বৈঠক, আলোচনা হয়েছে গত কয়েক মাসে। অবশেষে বিশ্বকাপ শুরুর দুই মাস আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
আজ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে পাকিস্তান। তবে ভারতের মাটিতে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই গেছে তাদের।
বিশ্বকাপ নিয়ে শুরু থেকেই আইসিসির সঙ্গে সব রকম আলোচনায় অংশ নিয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আয়োজক দেশ ভারত হওয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে ছিল সংস্থাটি। এশিয়া কাপ খেলতে ভারতীয় দল পাকিস্তানে যেতে অস্বীকৃতি জানানোর পর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেয় সরকারও। একপর্যায়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে দেন।
১৪ সদস্যের ওই কমিটি গত সপ্তাহে বৈঠক করে ভারত সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় জানিয়ে লেখা হয়, ‘পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে যে খেলাধুলাকে রাজনীতির সঙ্গে মেশানো উচিত নয়। তাই আসন্ন আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩–এ অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান তার ক্রিকেট দলকে ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বিবৃতিতে এশিয়া কাপের জন্য ভারতের পাকিস্তান সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করা হয়—ভারতের একরোখা মনোভাবের বিপরীতে পাকিস্তানের সিদ্ধান্তটি তার গঠনমূলক এবং দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছে। কারণ, এশিয়া কাপের জন্য ভারত তাদের ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে পাঠাতে অস্বীকার করেছিল।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিরোধের জেরে ২০১৩ সালের পর থেকে ভারত–পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে না। এ সময় দুই দল শুধু আইসিসি টুর্নামেন্ট বা এশিয়া কাপে খেলেছে।
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সিদ্ধান্ত অনুসারে এ বছরের এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ভারত সরকার তাদের ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে অচলাবস্থার জেরে এশিয়া কাপ আয়োজনই হুমকির মুখে পড়ে। পরে শ্রীলঙ্কাকে দ্বিতীয় ভেন্যু বানিয়ে ‘হাইব্রিড মডেলে’ এশিয়া কাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। যে মডেলে এশিয়ার অন্যান্য দেশ পাকিস্তানে খেলতে গেলেও ভারত শুধু শ্রীলঙ্কার মাটিতে খেলবে। ভারত যেহেতু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পাকিস্তানে যাবে না, পাকিস্তানও নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ভারতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে হুমকিও দেন পিসিবির চেয়ারম্যান।
অবশেষে পাকিস্তান সরকার ভারতে দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে রেখেছে। এ নিয়ে আইসিসি ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানানো হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে, ‘পাকিস্তান তার ক্রিকেট দলের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এই উদ্বেগ আইসিসি ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরছি। আশা করি, ভারত সফরে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’
আগামী ৫ অক্টোবর আহমেদাবাদে ইংল্যান্ড–নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এবারের বিশ্বকাপ। পাকিস্তান তাদের প্রথম ম্যাচটি খেলবে ৬ অক্টোবর হায়দরাবাদে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। রাউন্ড রবিন পদ্ধতির বিশ্বকাপে অন্যান্য দলের মতো পাকিস্তানও প্রথম পর্বেই ৯টি ম্যাচ খেলবে।
অবশ্য গত জুনে বিশ্বকাপের সূচি ঘোষিত হলেও পাকিস্তানের একাধিক ম্যাচের সূচিতে পরিবর্তন আসতে পারে। ১৫ অক্টোবর আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি ১৪ অক্টোবর হতে পারে। একই কারণে এগিয়ে আসতে পারে ১২ অক্টোবরের পাকিস্তান–শ্রীলঙ্কা ম্যাচ।
আবার ১২ নভেম্বর কলকাতায় পাকিস্তান–ইংল্যান্ড ম্যাচের সূচিতেও বদল হতে পারে। ভারত–পাকিস্তান, পাকিস্তান–ইংল্যান্ড দুটি ম্যাচের দিন সনাতন ধর্মালম্বীদের উৎসব থাকায় সূচি বদলের অনুরোধ জানিয়ে রেখেছে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ।