বাংলাদেশের সহজ জয়েও থাকছে কিছু প্রশ্ন

কাঙ্ক্ষিত জয়টা এত সহজে আসবে, কেউই বোধ হয় সেটি প্রত্যাশা করেনি। আফগানিস্তানকে এভাবে হারানোয় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন।

টসে জিতে কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা বাংলাদেশ পেয়েছে। তবে শুরুতে উইকেট থেকে তিন পেসারের কেউই সুবিধা আদায় করতে পারেনি। গুরবাজদের শুরু দেখে মনে হচ্ছিল বড় স্কোর হবে। তবে আগে যেটি বলেছিলাম, নাসুম না থাকলে সাকিবকে পাওয়ারপ্লেতে আসতে হবে। সেটাই করেছে সে, অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি দিয়ে পরাস্ত করেছে ইব্রাহিম জাদরানকে। আফগানিস্তানের জন্য প্রথম ধাক্কা ছিল সেটিই।

প্রথম দুটি উইকেটই সাকিব পেয়েছে ব্যাটসম্যানদের দারুণভাবে প্রলুব্ধ করে। হাশমতউল্লাহ শহীদি আসার পরই ওদের সুরটা কেটে যায়, ডট বলের কারণে চাপও বাড়ে। হয়তো তাতেই মেজাজ হারায় রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তবে তখনও শেষের দিকের ওভার কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল আফগানিস্তানের।

সাকিবের বলে প্রলুব্ধ হয়ে উইকেট দিয়েছেন আফগান ব্যাটসম্যানরা

তিন পেসার শুরুতে তেমন ভালো না করায় প্রত্যেককে দিয়ে ১০ ওভার করানো যাবে কি না, সাকিব নিশ্চয়ই এমনও ভেবেছে। মাহমুদউল্লাহর ১ ওভারেই বোঝা গেছে, আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষেও ষষ্ঠ বোলার হিসেবে তাকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না বাংলাদেশ দল। তাতে সাকিবের দুশ্চিন্তা বাড়ার কথা। তবে সাকিবের অধিনায়কত্ব দারুণ ছিল।

সে মুহূর্তে গুরবাজের মেজাজ হারানো ও মোস্তাফিজের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং বাংলাদেশকে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরায়। সেটিকেই সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট বলব আমি। এরপর আফগানদের মধ্যে নিজেদের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে পারফর্ম করার চেষ্টা দেখেছি, তাতে হয়তো বাংলাদেশকে হারাতেই হবে, এমন একটা মানসিকতা কাজ করেছে। তবে ৩৭.২ ওভারের মধ্যে ওদের আটকে দেওয়া বড় অর্জন। মিরাজ ও সাকিবের বোলিংই ভিত গড়ে দিয়েছে পেসারদের জন্য। বাংলাদেশের ফিল্ডিংও বেশ ভালো ছিল।

প্রস্তুতি ম্যাচে নজরকাড়া তানজিদ ব্যাটিংয়ে কেমন করে, সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম। বড় রান তাড়ার চাপ না থাকলেও তার খেলার ধরন ও অ্যাপ্রোচ দেখে বিস্মিত হয়েছি। রানআউটটাও দৃষ্টিকটু। আশা করি, নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ থেকে ভুলগুলো বুঝতে পারবে।

অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচসেরা হয়েছেন মিরাজ

মিরাজকে অভিনন্দন, জীবন পেয়েও ফিফটি করেছে। তবে তাকে তিনে দেখে একটা ধাক্কা খেয়েছি। তিন নম্বর একটা বিশেষায়িত পজিশন। নাজমুল এখানে বিশেষজ্ঞ, ফর্মে আছে। এমন অবস্থায়ও সে মুজিব-ফারুকিকে সামলাতে পারবে না, টিম ম্যানেজমেন্ট যদি এমন ভাবে, তার ওপর আস্থা রাখতে না পারে—তাহলে সেটি তার জন্য একরকম অপমানজনক। আর তাকে তো মিরাজের কয়েক বল পরই উইকেটে আসতে হয়েছে!

মিরাজ সব সময় এভাবে খেলতে পারবে না। অফসাইডে কাভার পয়েন্ট, কাভার, এক্সট্রা কাভারে সে বেশি খেলে। বড় দলগুলো সেখানে বল করবে না। সেমিফাইনালের লক্ষ্যে অটল থাকতে গেলে ওপরের ব্যাটসম্যানের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আর মিরাজের ব্যাটিং-সামর্থ্যের কথা কি এত দিন দল জানত না?

বিশ্বকাপে এসে টপ অর্ডারে এত অদলবদল কোনো দলের জন্যই ভালো পরিকল্পনা হতে পারে না। মনে হয়েছে, বড় পরিসরে ভাবার চেয়ে ম্যাচ জেতার ভাবনাই কাজ করেছে বেশি। সাকিব, তাওহিদ হৃদয় ক্রিজে মিরাজের আগে আসতে পারত। তবে নাজমুলের ফর্ম দেখে ভালো লাগছে। বড় ম্যাচ জিততে গেলে যে বড় ইনিংস দরকার, সেটির জন্য ওর দিকে তাকিয়ে থাকাই যায়।

ধর্মশালার মাঠে বাউন্ডারি ঠেকাতে গিয়ে মাটি উঠে এসেছে। অল্পের জন্য চোটে পড়েননি আফগানের মুজিব

৫ জন বোলার নিয়েই আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে আটকে দেওয়া গেল। তবে ষষ্ঠ বোলার না থাকায় আরেকটু হলেই সমস্যায় পড়তে হতো সাকিবকে। এমন প্রতিপক্ষের সঙ্গে আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা নেতিবাচক ভাবনা। এমন মানসিকতা নিয়ে সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকাও মুশকিল। আট নম্বরে এমন কারও খেলা উচিত, যে ভালো বোলার এবং একটু ব্যাটিংও করতে পারে।

শেষে একটি কথা বলতে চাই ধর্মশালার মাঠ নিয়ে। এমন আউটফিল্ডে চোটে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কীভাবে এমন মাঠে বিশ্বকাপের খেলা হয়! এটা বিস্ময়কর।

✍️গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক