বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সামনে মিনহাজুল আবেদীনের নেতৃত্বে তিন নির্বাচক, শেষ দিকে সেখানে যোগ দিলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুসও। গতকাল দুপুরের পর বিসিবি সভাপতির কর্মস্থল ধানমন্ডির বেক্সিমকো কার্যালয়ের এই সভাকে বলা হচ্ছে একটি ‘রুটিন আলোচনা’, যে আলোচনা সাধারণত প্রতিটি দল ঘোষণার আগেই নির্বাচকদের সঙ্গে হয়ে থাকে নাজমুল হাসানের।
কিন্তু ‘রুটিন’ আলোচনাও কি সব সময় রুটিন মেনে হয়? পরিস্থিতির কারণেই তাতে যোগ হতে পারে বাড়তি কোনো অধ্যায়। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ সামনে রেখে নির্বাচকেরা ২০-২১ সদস্যের দল ঘোষণা করবেন। কালকের ‘রুটিন’ আলোচনা মূলত সেটি নিয়ে হলেও তার সবকিছুই ঢাকা পড়ে থাকল আরেকটি আলোচনার ছায়ায়—তামিম ইকবালের ভবিষ্যৎ কী?
‘ভবিষ্যৎ’ এখানে একাধিকই খুঁজতে হবে। লন্ডন থেকে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে ফিরে আপাতত কয়েক দিন বিশ্রামে থাকার কথা তামিমের। এরপর সপ্তাহখানেক ফিটনেস ট্রেনিং করে নামার কথা মাঠের অনুশীলনে। এই সবকিছু প্রক্রিয়া মেনে হয়ে যাবে ধরে নিয়ে নির্বাচকেরা তাঁকে রেখেই ২০-২১ সদস্যের দলটা দাঁড় করাচ্ছেন। ইনজেকশনের কর্মক্ষমতাকে ব্যর্থ করে দিয়ে কোমরের ব্যথাটা ফিরে না এলে এটুকুতে তামিমের ভবিষ্যৎ নিয়েও কোনো সংশয় নেই।
কিন্তু এর সঙ্গে সম্পূরক যে প্রশ্ন আসে, দল নির্বাচন করতে সেটার উত্তর জানাটাই সবার আগে দরকার নির্বাচকদের—তামিম কি অধিনায়ক হিসেবেই থাকবেন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের দলে? ওই ২০-২১ ক্রিকেটারের মধ্য থেকেই যেহেতু এই দুই বড় টুর্নামেন্টের জন্য দল গড়া হবে, খেলোয়াড় নির্বাচনের আগে অধিনায়কের মতটাও যে জানা জরুরি নির্বাচকদের জন্য!
বিসিবি সভাপতি যদিও আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, তাঁদের খাতায় বিশ্বকাপ পর্যন্ত তামিমই ওয়ানডে অধিনায়ক, তবু এখানে শেষ কথাটা তামিমেরই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের আকস্মিক ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পরদিনই সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। কিন্তু ফিরে আবার অধিনায়ক হিসেবেই খেলা চালিয়ে যাবেন কি না, সেই প্রশ্নে একটা কিন্তু রেখে দিয়েছেন তিনি নিজেই।
দুবাইয়ে ছুটি কাটাতে যাওয়ার আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিম বলেছেন, অধিনায়কত্বে ফেরা না ফেরার অনেক কিছুই নির্ভর করবে বোর্ডের সঙ্গে তাঁর আলোচনার ওপর। সাক্ষাৎকারে তামিম কিছু সমস্যার ‘সমাধান’ চাওয়ার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ‘যেসব কারণের জন্য অবসর নিয়েছিলাম, সেগুলো নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলব।’
তাঁর সঙ্গে যা চলছে, সেসব জানা থাকা উচিত বোর্ডের, করেছেন এমন মন্তব্যও। বিসিবিকে সবকিছুই তিনি বলতে চান খোলামেলাভাবে। তারপর যা সিদ্ধান্ত হয়, মেনে নেবেন সেটা। বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে তামিম বলেন, ‘তাদের সঙ্গে ওই মিটিংয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’ বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় বাকি সবকিছু চূড়ান্ত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
নির্বাচকদের দল নির্বাচনের সবুজ সংকেত দেওয়ার আগে বিসিবিও এখন আছে তামিমের কথা শোনার অপেক্ষায়। তামিম যেহেতু বলেছেনই, দেশে ফিরে আগে বিসিবির সঙ্গে কথা বলবেন, তাঁকে সেই সুযোগ দিতে চায় বোর্ড। বিসিবিরও কৌতূহল, কী বলবেন তামিম? তামিম যদিও জানিয়েছেন, ‘চেইন অব কমান্ড’ মেনে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুসকেই সব বলবেন। তবে জানা গেছে, এই আলোচনায় থাকতে পারেন স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও।
৮ আগস্ট থেকে পুরোদমে অনুশীলন শুরু হওয়ার আগে নির্বাচকদের ২০-২১ সদস্যের দল ঘোষণা করার কথা ৫ আগস্ট। নাজমুল হাসান ও জালাল ইউনুসের সঙ্গে তামিমের আলোচনাটা হবে তার আগেই, অর্থাৎ আজ থেকে ৪ আগস্টের মধ্যে যেকোনো দিন। এরপর মাঠে ফেরার পরিকল্পনা ঠিক করতে তামিম বসবেন বিসিবির চিকিৎসক ও ফিজিও ট্রেইনারদের সঙ্গেও। তামিমের সঙ্গে বিসিবির আলোচনার ওপর ভিত্তি করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ থেকে যে নির্দেশনা যাবে, সেটি অনুসরণ করেই দল নির্বাচনের কাজে এগোবেন নির্বাচকেরা।
তার আগপর্যন্ত একটাই কৌতূহল, বিসিবিকে আসলে কী বলবেন তামিম?