একবার ভাবুন তো! পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র আপনার কমন পড়ছে, কিন্তু সেই উত্তরটা আপনি ঠিকঠাক দিতে পারছেন না। কেমন অনুভূতি হবে আপনার?
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বর্তমান অনুভূতিটা হয়তো এমনই। ভারত সফরের আগেই তারা জানত, এই সিরিজে তাদের সবচেয়ে বড় হুমকি রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। সে জন্য তো অনুশীলনে মহেশ পিথিয়া নামের এক ভারতীয় তরুণকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল ‘অশ্বিন-রেপ্লিকা’ হিসেবে।
তবে কোনো কিছুতেই খুব একটা কাজ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। প্রথম টেস্টে এই দুই স্পিনার ১৫ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় টেস্টেও অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দুজন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ শামিও। এই তিন ভারতীয়র দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ২৬৩ রানে আটকে ফেলেছে ভারত। জবাবে ভারত দিন শেষে কোনো উইকেট না হরিয়ে তুলেছে ২১ রান।
প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৭৭ রানেই অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসের স্কোরটাকে তাই অস্ট্রেলিয়ার উন্নতির ‘সূচক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। তবে উন্নতিটা আরও বেশি হতে পারত। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে এদিন টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুই করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা মিলে গড়েছিলেন ৫০ রানের জুটি। মোহাম্মদ শামির বলে ১৫ রান করেই বিদায় নেন ওয়ার্নার। শামির রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা আউটসাইড অফ অঞ্চলে করা বলে উইকেটের পেছনে শ্রীকর ভরতের হাতে ক্যাচ দেন ওয়ার্নার। তিন নম্বরে নেমে আইসিসি টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে থাকা মারনাস লাবুশেন খাজার সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়েন।
১ উইকেটে ৯১ রান নিয়ে তখন অস্ট্রেলিয়া হয়তো বড় স্কোরের কথাই ভাবছিল। তবে সেই ভাবনায় বড় ধাক্কা লাগে ২৩তম ওভারে লাবুশেনকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলার পর একই ওভারে স্টিভেন স্মিথকে শূন্য রানে আউট করেন অশ্বিন। দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে একই ওভারে হারিয়ে বিপদেই পড়ে অস্ট্রেলিয়া। আগের টেস্টে না খেলা ট্রাভিস হেডও এই টেস্টের দলে ফিরে ইনিংস বড় করতে পারেননি, ফেরেন মাত্র ১২ রানে।
এক প্রান্তে যদিও খাজা স্বছন্দে খেলে যাচ্ছিলেন। প্রথাগত সুইপ, রিভার্স সুইপে সাজানো তাঁর ৮১ রানের ইনিংসটা শেষ হয় জাদেজার বলে লোকেশ রাহুলের দুর্দান্ত এক ক্যাচে। এই উইকেট দিয়েই একটা মাইলফলক ছুঁয়েছেন জাদেজা। টেস্ট ক্রিকেটে ২৫০০ রান ও ২৫০ উইকেটের ‘ডাবল’ হয়ে গেছে তাঁর। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যে ডাবলের কীর্তি এখন পর্যন্ত ১৪ জনের। তবে এই মাইলফলক জাদেজা ছুঁয়েছেন ৬২ টেস্টে, যা দ্বিতীয় দ্রুততম। দ্রুততম ৫৫তম টেস্টে এই ডাবল পাওয়া ইংলিশ কিংবদন্তি ইয়ান বোথাম।
প্রথম টেস্টে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারি ক্রিজে এসে পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন। এই টেস্টে অশ্বিন তাঁকে রানের খাতাই খুলতে দেননি। ১৬৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়া যে শেষ পর্যন্ত ২৬৩ রান করতে পেরেছে, সেটার কৃতিত্ব পিটার হ্যান্ডসকম্বের। টড মার্ফি, নাথান লায়নরা তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ৭২ রানে অপরাজিত থেকে যান এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর টেস্টে ফিফটি পেয়েছেন হ্যান্ডসকম্ব।
দিল্লি টেস্টের আগে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডার বলেছিলেন, ভারতের মাটিতে সফল হতে হলে অস্ট্রেলিয়ার তিন পেসার নিয়ে মাঠে নামা উচিত। তবে অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্ট করেছে ঠিক উল্টোটা। তারা মাঠে নেমেছে তিন স্পিনার নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল, সেটা অবশ্য আগামীকালই বোঝা যাবে।