একজন আছেন লন্ডনে, আরেকজন ঢাকাতেই। প্রথমজন তামিম ইকবাল, যিনি লন্ডনে গেছেন কোমরের সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। দ্বিতীয়জন মাহমুদউল্লাহ। গত কিছুদিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তিনি এমন নিবিড় অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন যে মনে হচ্ছে সামনে মাঠে নামার যে সুযোগ পাবেন, সেটাকেই লুফে নেবেন।
হঠাৎ করে তামিম–মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে আলোচনার কারণ, বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাতাবরণে ঘুরেফিরে এখন এই দুটি নামই। চিকিৎসাপর্ব সেরে তামিম কি পারবেন আগস্ট–সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপে মাঠে ফিরতে? পারলে তো বিশ্বকাপের দরজাও আশা করা যায় উন্মুক্ত থাকবে তাঁর জন্য, কিন্তু না পারলে! ‘অবসর’, ছুটি এবং চিকিৎসার পর তামিমের ফেরার পথটাই–বা কেমন হবে? তিনি তামিম বলেই প্রাসঙ্গিকভাবে ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্বের প্রসঙ্গটাও চলে আসে। তামিম খেলতে পারলে তো নিশ্চয়ই অধিনায়ক হিসেবেই খেলবেন, কিন্তু খেলতে না পারলে? তামিমের খেলা যত দিন সংশয়ে, ওয়ানডে দলের নেতার মুখটাও তত দিন ঝাপসা হয়েই থাকবে।
মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে আলোচনা এতটা বহুমুখী নয়। সোজা প্রশ্ন—গত মার্চে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলা মাহমুদউল্লাহ কি ফিরতে পারবেন এশিয়া কাপ দিয়ে? মাহমুদউল্লাহর একাগ্র অনুশীলন এবং তাঁকে যাঁরা ফেরাতে পারেন, তাঁদের কিছুটা ইতিবাচক মনোভাবে মনে হচ্ছে, অন্তত হিটেই বাদ পড়ছেন না এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। এশিয়া কাপের দরজা তাঁর জন্য খোলা এবং সেই দরজার ওপর ‘স্বাগত’ লেখা অদৃশ্য একটা ব্যানারও বুঝি ঝোলানো আছে। এখন মাহমুদউল্লাহ দরজাটা দিয়ে ঢুকতে পারলেই হয়।
এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ সামনে রেখে ৩১ জুলাই থেকে মিরপুরে শুরু হবে প্রস্তুতি ক্যাম্প, যাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হবে ২৮ জনের মতো ক্রিকেটারকে। বিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সব ক্রিকেটারেরই থাকার কথা সেখানে। ৩১ জুলাই শুরু হয়ে এই ২৭–২৮ জনকে নিয়ে ৩ আগস্ট পর্যন্ত হবে স্ক্রিনিং পর্ব, যেখানে মূলত মৌলিক কিছু শারীরিক পরীক্ষাই হবে। এরপর একটা বিরতি, যে বিরতির মধ্যে প্রাথমিকভাবে ডাক পাওয়া কয়েকজনকে বাদ দিয়ে ঘোষণা হয়ে যাবে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ সামনে রেখে ২০ থেকে ২৩ জনের প্রাথমিক দল। তাঁদের নিয়ে মূল অনুশীলন শুরু ৮ আগস্ট।
ছুটি কাটিয়ে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেরও সেদিনই ঢাকায় পৌঁছানোর কথা।
এশিয়া কাপের জন্য এই খেলোয়াড়দের মধ্য থেকেই বেছে নেওয়া হবে ১৫ জনকে। বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে সংখ্যাটা হতে পারে ১৬ বা আরও দু–একজন বেশি। আইসিসির নির্দিষ্ট করে দেওয়া সংখ্যার বাইরের ক্রিকেটাররা যাবেন বিসিবির খরচে।
বিশ্বকাপে থাকতে পারা না–পারা যেহেতু অনেকটাই এশিয়া কাপের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভরশীল, আপাতত সবার এশিয়া কাপের দলটাকেই পাখির চোখ করা স্বাভাবিক। মাঝে দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়া মাহমুদউল্লাহর সেই দলে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ২০–২৩ জনের দলে তাঁকে এই আশা নিয়েই রাখা হবে যে তাঁর মতো অভিজ্ঞ একজনকে এশিয়া কাপের ১৫ জনের দলেও জায়গা দেওয়া যাবে।
যতই চোটে ভুগুন না কেন, ২৮ বা ২০–২৩ জনের দলে তামিমেরও না থাকার কোনো কারণ নেই। বিসিবির খাতায় এখনো তিনিই ওয়ানডে অধিনায়ক। কাজেই এটুকু পর্যন্ত তামিম ‘অটোমেটিক চয়েস’ হিসেবেই থাকবেন বলে ধরে নেওয়া যায়। এরপর কী হবে—সেটা গতকাল রাতেই কিছুটা স্পষ্ট হয়ে ওঠার কথা।
লন্ডনের ইস্টবাউন্ড মেডিকেল ক্লিনিকের ডা. টনি হ্যামন্ডের সঙ্গে স্থানীয় সময় কাল সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় মাঝরাত) অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল তামিমের, সঙ্গে থাকার কথা বিসিবির চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরীরও। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে জন্ম এবং সেখানেই পড়াশোনা করা হ্যামন্ডের চিকিৎসার হাত নানা দিকে প্রসারিত। তার মধ্যে অন্যতম, তিনি একজন মেরুদণ্ড বিশেষজ্ঞও।
তামিমের সমস্যা মেরুদণ্ডের কোমরের দিকের অংশে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যে অংশটাকে বলে L-4 ও L-5। তামিম কোমরে যে ধরনের সমস্যা অনুভব করছেন, মেরুদণ্ডের এ দুটি ভাগের মাঝে থাকা তরল শুকিয়ে গেলেই তা হয়। অস্ত্রোপচার এর একটা চিকিৎসা। অস্ত্রোপচারে গেলে যেহেতু পুরোপুরি সুস্থ হতে কমপক্ষে ৩–৪ মাস সময় লেগে যাবে, বিশ্বকাপের আগে সে পথে হয়তো যাবেন না তামিম।
অস্ত্রোপচার ছাড়া চিকিৎসায় ওষুধ বা ইনজেকশন এবং ফিজিওথেরাপির সঙ্গে আছে চিরোপ্র্যাকটিক ম্যানিপুলেশন নামের একধরনের চিকিৎসাও। ডা. হ্যামন্ড মূলত মেরুদণ্ডের এ ধরনের চিকিৎসাই করে থাকেন বলে জানা গেছে। তামিমকে সুস্থ করতে শেষ পর্যন্ত কোন পথে যাওয়া হবে, হ্যামন্ডই তা ঠিক করবেন। জানা গেছে, তামিমের সমস্যাটা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে কালই তাঁকে বিশেষ একটি ইনজেকশন দিয়েছেন হ্যামন্ড।
কোমরের ব্যথা তামিম অনেক দিন ধরেই বয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্যথা থাকায় ২০২১–২২ মৌসুমের বিপিএলে পুরো টুর্নামেন্টই খেলেছেন ইনজেকশন নিয়ে। অবশ্য ইনজেকশন বা অন্য যে চিকিৎসা নিয়েই খেলেন না কেন, তাঁর চোটটাই এমন যে সেটি ফিরে আসতে পারে যেকোনো সময়। সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে তামিম যদি শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপে খেলতে পারেনও, যেকোনো সময় তাঁকে হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিটা তাই থাকবেই।