ভারত ম্যাচটা আসলে কোথায় হারল?
অনেকের মতে ১৮তম ওভারে। যখন পেসবান্ধব পার্থের উইকেটে বোলিং করতে এলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, এরপর প্রথম দুই বলেই ছয় হাঁকিয়ে সমীকরণ সহজ করে ফেললেন ডেভিড মিলার। ২ বল বাকি থাকতে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে যায় ৫ উইকেটে। কেউ কেউ আবার ভারতের রানই কম হয়ে গেছে বলে মনে করেন। উইকেট যতই ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন হোক, ১৩৩ রানের পুঁজি টি-টোয়েন্টিতে কমই।
তবে ভারতের পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ব্যাটিং বা বোলিংকে দায় দিতে রাজি নন। তাঁর মতে, ভারত হেরেছে আসলে ফিল্ডিংয়ে। আর ফিল্ডিংয়ের ‘খলনায়ক’ এদিন অধিনায়ক রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলি।
রান তাড়া করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। ভুবনেশ্বর, মোহাম্মদ শামি আর হার্দিক পান্ডিয়াদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৪০ রান তুলতে পারে প্রোটিয়ারা।
ডেভিড মিলার-এইডেন মার্করামদের সামনে শেষ দশ ওভারে লক্ষ্য ছিল ৯৪ রানের, ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে নয় করে। রান তোলার চাপে থাকা দুই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান তখন হাত খুলতে গিয়ে সুযোগ দেন ভারতকে।
১২তম ওভারে অশ্বিনের বলে মিড উইকেট বাউন্ডারিতে ক্যাচ দেন মার্করাম। সোজা হাতে গিয়ে পড়া বলটি দুইবারের চেষ্টাতেও মুঠোয় রাখতে পারেননি কোহলি। অশ্বিনের চোখেমুখে যতটা না হতাশা, তার চেয়ে বেশি ছিল বিস্ময়। কোহলির মতো কেউ এমন ক্যাচ ছাড়তে পারে!
পরের ওভারে আরও অবাক করেন অধিনায়ক রোহিত। সিঙ্গেলের জন্য দৌড়ানো মিলারকে পরিষ্কার রানআউট করার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। হেঁটে গিয়ে উইকেট ভাঙলেও হয়তো রানআউট করতে পারতেন রোহিত, এমন দূরত্ব থেকেই কিনা তিনি করলেন এলোমেলো এক থ্রো। হাতছাড়া হয়ে গেল মিলারকে আউটের আরও একটি সহজ সুযোগ।
শেষ পর্যন্ত মিলার আর মার্করাম মিলে গড়েন ৭৬ রানের জুটি, যা দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের প্রান্তে নিয়ে যায়।
ম্যাচ শেষে ভারতীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা ভুবনেশ্বরকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ফিল্ডিং ভালো হলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারত কি না?
৩.৪ ওভারে ২১ রান দেওয়া পেসার হ্যাঁ সূচকই উত্তর দিয়েছেন, ‘হ্যাঁ। ক্যাচ নিতে পারলে ফলটা ভিন্ন হতে পারত। ক্যাচ ম্যাচ জেতায়।’কোহলির ক্যাচ ফেলার বিষয়টি তিনি বলেছেন এভাবে, ‘ওই ক্যাচ ধরতে পারলে ব্যবধান তো হতোই।’
ভুবনেশ্বর অবশ্য কোহলি-রোহিতের ক্যাচ ও রানআউট মিসের সময়টিকে ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়ার মুহূর্ত হিসেবে বলতে নারাজ। তবে আগে-পরে মিলিয়ে যা বলেছেন, ম্যাচ হারার দায় তাতে রোহিত-কোহলিরই ওপরই বর্তায়, ‘ক্যাচ আর রানআউট মিসে ম্যাচের মোড় ঘুরে গেছে, ব্যাপারটা ঠিক এ রকম নয়। তবে ওগুলো ঠিকঠাকভাবে হলে পার্থক্য হতে পারত। আমি এভাবে মুহূর্ত ধরে কিছু বলতে চাই না।’
বাজে ফিল্ডিংয়ের প্রভাব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন অধিনায়ক রোহিতও। ম্যাচ শেষের পুরস্কার বিতরণীতে ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘ফিল্ডিংয়ে আমরা যথেষ্ট ভালো করতে পারিনি। সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। আমিসহ কয়েকটি রানআউটও মিস করেছি।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে ভারতের শেষ দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দুই ম্যাচ জিতলে তো বটেই, একটি ম্যাচ জিতেও শেষ চারে যেতে পারে রোহিত শর্মার দল। তবে বাংলাদেশ বা জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে গেলে অনেক যদি-কিন্তুর সমীকরণেও পড়ে যাবে তারা।