হায়দরাবাদে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি–টোয়েন্টিতে নামছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেনদের চার সপ্তাহের ভারত সফর শেষ হচ্ছে এ ম্যাচ দিয়ে। তবে ম্যাচটির বড় ট্যাগলাইন এখন ‘মাহমুদউল্লাহর বিদায়ী টি–টোয়েন্টি’।
এই ম্যাচের ধারা বিবরণী, তথ্য ও পরিসংখ্যান জানতে চোখ রাখুন প্রথম আলো লাইভে।
সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো টসে জিতলেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। নিয়েছেন ব্যাটিং। প্রথম টি–টোয়েন্টির মতো আজও রান তাড়ায় ব্যাট করবে বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচের দল থেকে দুটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। একাদশে এসেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান ও স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান। তাঁদেরকে জায়গা করে দিতে বাদ পড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও জাকের আলী।
বাংলাদেশ একাদশ: পারভেজ হোসেন, লিটন দাস, তানজিদ হাসান, নাজমুল হোসেন, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
ভারত সিরিজ জিতেছে আগেই। তবু শেষ ম্যাচে বড় পরিবর্তন আনা হয়নি। বাঁহাতি পেসার অর্শদীপ সিংয়ের জায়গায় স্পিনার রবি বিষ্ণয়ের সংযোজনই একমাত্র পরিবর্তন।
ভারত একাদশ: সঞ্জু স্যামসন, অভিষেক শর্মা, সূর্যকুমার যাদব, নীতিশ রেড্ডি, হার্দিক পান্ডিয়া, রিয়ান পরাগ, রিংকু সিং, ওয়াশিংটন সুন্দর, বরুণ চক্রবর্তী, রবি বিষ্ণয় ও মায়াঙ্ক যাদব।
টসে হেরে যাওয়া নাজমুলকে রবি শাস্ত্রী জিজ্ঞেস করেছেন, জিতলে কী নিতেন? বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘প্রথমে বোলিংও চলে। টস কোনো ব্যাপার নয়।’ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বাজে হারের এবার শেষ ম্যাচে বিশেষ কিছু করার আশাও শুনিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। এ জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। আশা করি ৪০ ওভারে বিশেষ কিছুই করব আমরা।’
শুরুটা হয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর ২০০৭। ভেন্যু ছিল কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি। ১৭ বছর পর আজ ১২ অক্টোবর ২০২৪–এ ভারতের হায়দরাবাদে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিকে বিদায় বলছেন মাহমুদউল্লাহ।
শেষটা কি রঙিন হবে বাংলাদেশের সাবেক টি–টোয়েন্টি অধিনায়কের? সতীর্থরা কি পারবেন তাঁকে বিদায়ী উপহার দিতে?
সাধারণত ফিল্ডিং দলের হয়ে সবার আগে মাঠে নামেন অধিনায়ক। তবে আজ বাংলাদেশ দলকে মাঠে নামার নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। বোঝাই যাচ্ছে, বিদায়ী ম্যাচে এই সংস্করণের সাবেক অধিনায়ককে সম্মান জানানোর অংশ।
বাংলাদেশ বোলিং শুরু করেছে মেহেদী হাসানকে দিয়ে। জুনে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন, আবার নামলেন ভারতের বিপক্ষেই।
মেহেদীর প্রথম ওভারে একটি চার মেরেছেন অভিষেক শর্মা। অপর প্রান্তে সঞ্জু স্যাসমন।
১ ওভার শেষে ভারতের রান বিনা উইকেটে ৭।
প্রথম দুই বলে রান নেই। তাসকিনকে যেন একটু দেখেই খেলতে চাইলেন সঞ্জু। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পরের চার বলেই বাউন্ডারিতে পাঠালেন ভারতের উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান।
২ ওভারে ভারত বিনা উইকেটে ২৩। সঞ্জু ১৯, অভিষেক ৪।
তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই উইকেট হারাল ভারত। প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আসা তানজিম হাসানকে পুল করতে চেয়েছিলেন অভিষেক শর্মা। বল গেল মিড উইকেটের দিকে। কিছুটা পিছিয়ে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন মেহেদী হাসান। অভিষেককে ফিরতে হল ৪ বলে ৪ রান নিয়ে।
ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকে ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টা ছিল তানজিমের। বল তাঁর পায়ে লেগে উইকেটের পেছনে যায়। তানজিমের মনে হয়েছে এটি এলবিডব্লু। এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, রিভিউও নিলেন।
কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেল স্টাম্পের ধারেকাছেও নেই বল। একটি রিভিউ অপচয় বাংলাদেশের।
এই ওভারের চতুর্থ বলে ৬ আর ষষ্ঠ বলে ৪ মেরে ১০ রান তুলে নিয়েছেন সূর্যকুমার।
ভারতের রান ৩ ওভারে ১ উইকেটে ৩৫।
ওপেনার অভিষেক শর্মাকে হারালেও ভারতের রানের গতি থামেনি। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ৫০ রানের ঘরে পৌঁছে গেছে ভারত।
তাসকিনের করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে এসেছে দুটি চার, ১টি ছয়। একটি চার লেগ বাই থেকে, আরেকটি সঞ্জুর ব্যাট থেকে। আর শেষ বলে ছক্কা মেরেছেন সূর্যকুমার।
৫ ওভার শেষে ভারতের রান ১ উইকেটে ৬৩। সঞ্জু ১৭ বলে ৩৬, সূর্যকুমার ৯ বলে ১৭ রানে ব্যাট করছেন।
পাওয়ার প্লেতে রীতিমতো ঝড়ই বইয়ে দিলেন সঞ্জু স্যামসন ও সূর্যকুমার যাদব। দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম ৬ ওভারে ৮২ রান তুলেছে ভারত।
তানজিমের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে উঠেছে ১৯ রান। ৩ চার ১ ছয়ে ১৮ রানই নিয়েছেন সূর্যকুমার। ভারত অধিনায়কের রান ১৩ বলে ৩৫, সঞ্জু খেলছেন ১৯ বলে ৩৭ রান নিয়ে।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ৬ ওভারে করেছে ১ উইকেটে ৮২ রান। এর আগে ২০২১ বিশ্বকাপে দুবাইয়ে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও পাওয়ার প্লেতে ৮২ রান করেছিল, তবে সে বার হারিয়েছিল ২ উইকেট।
প্রথম বলটা ব্যাটে নিতে পারেননি, লেগেছিল প্যাডে। রিশাদ তাতে ‘বেঁচে’ই গেছেন। ছয় বলে ছয় ছক্কা তো আর হয়নি!
ইনিংসের দশম ওভারে রিশাদের শেষ পাঁচ বলে টানা পাঁচ ছক্কা মেরেছেন সঞ্জু স্যামসন। দুটি সোজাসুজি বোলারের মাথার ওপর দিয়ে, একটি করে লং অফ ও লং অন দিয়ে। টানা চার ছক্কার পর শেষ বলে রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়েছিলেন রিশাদ। নিস্তার মেলেনি। বল বাউন্ডারি পেরিয়েছে মিড উইকেট দিয়ে। এক ওভারে উঠল ৩০ রান।
১০ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ১৫২।
ভারতের হয়ে এক ওভারে সর্বোচ্চ ৩৬ রান নিয়েছেন দুজন—২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যুবরাজ সিং, ২০২৪ সালে বেঙ্গালুরুতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে রোহিত শর্মা ও রিংকু সিং। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ রান হলো আজ রিশাদের বিপক্ষে সঞ্জু স্যামসনের, গত বছর অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বিপক্ষে ৩০ রান নিয়েছিলেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড–তিলক ভার্মারা।
আজ না হলে আর কবে হবে! বাংলাদেশের বোলারদের ওপর টর্নেডো বইয়ে দেওয়ার দিনে প্রথম সেঞ্চুরিটা করে নিয়েছেন সঞ্জু স্যামসন। সেটাও মাত্র ৪০ বলে, ৯ চার আর ৮ ছক্কায়। ৩৩ টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এর আগে তাঁর ফিফটিই ছিল মাত্র দুটি।
অবশেষে উইকেটের দেখা মিলল বাংলাদেশের। মোস্তাফিজের বলে ডিপ স্কয়ারে মেহেদীর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন সঞ্জু স্যামসন। কিন্তু যাওয়ার আগে বাংলাদেশের বোলিংকে রীতিমতো বিধ্বস্ত করে গেছেন।
খেলেছেন ৪৭ বল, তাতেই ১১টি চার, ৮টি ছক্কা। সেঞ্চুরি করেছেন ৪০ বলে, বাংলাদেশের বিপক্ষে যা দ্বিতীয় দ্রুততম (২০১৭ সালে পচেফস্ট্রৃমে ডেভিড মিলার করেছিলেন ৩৫ বলে)।
১৪তম ওভারের শেষ বলে মোস্তাফিজের বলে সূর্যকুমারের চারে ২০০ ছুঁয়ে ফেলল ভারত। সূর্যকুমার ব্যাট করছেন ৩৩ বলে ৭১ রান নিয়ে। সঙ্গে নতুন ব্যাটসম্যান রিয়ান পরাগ।
ভারতের রান যে দিকে ছুটছে, মাহমুদউল্লাহকে জয় উপহার দিকে ‘দুঃসাধ্য’ কিছুই করতে হবে বাংলাদেশকে। তার আগে মাহমুদউল্লাহ নিজেই বিদায়ী টি–টোয়েন্টিতে একটি উপহার নিলেন। ফেরালেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকে।
মিডউইকেট বাউন্ডারিতে রিশাদকে ক্যাচ দিয়ে সূর্যকুমার ফিরলেন ৩৫ বলে ৭৫ রান করে। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার, ৫টি ছয়।
মাহমুদউল্লাহর একই ওভারের শেষ বলে রিয়ান পরাগ মেরেছেন ছয়।
ভারত ১৫ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ২১৩। পরাগের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে হার্দিক পান্ডিয়া।
ধারাভাষ্যে আছেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল। ভারতের ব্যাটসম্যানরা ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ স্টাইলে একের পর বাউন্ডারি মেরে যাচ্ছেন। তামিম বললেন, তাঁর ক্যারিয়ারে এমন কিছু তিনি কখনোই দেখেননি।
পাঠক, আপনি দেখেছেন?
কাগজে–কলমে ইনিংসের ডেথ ওভার শুরু হয় ১৬ ওভারের পর। তবে ভারতের জন্য আজ পুরো ২০ ওভারই ডেথ ওভার। শুধুই ব্যাট চালিয়ে যাওয়া। এলোমেলো লাইনে বল করে বাংলাদেশের বোলাররা যাতে ‘সহায়তা’ও করছেন।
১৬.৪ ওভারে আড়াই শ রানে পৌঁছে গেছে ভারত। হার্দিক পান্ডিয়া ও রিয়ান পরাগ ছুটছেন তিন শর দিকে।
১৭ ওভার শেষে ভারতের রান ৩ উইকেটে ২৫২।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বড় বড় শটের কারণে ফিল্ডারদের এতক্ষণ তেমন কিছুই করার ছিল না। তাও দৃষ্টিকটু কোনো ফিল্ডিং দেখা যায়নি। কিন্তু ভারতের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বোলারদের মতো ফিল্ডাররাও ভেঙে পড়েছেন।
১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে রান নিতে গিয়ে একপ্রান্তে একত্র হয়ে গিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া–রিয়ান পরাগ। রান আউটের সহজ সুযোগ। কিন্তু বল কুড়িয়ে নেওয়া লিটন দাস থ্রো পাঠালেন নন স্ট্রাইক স্টাম্পের অনেক পেছনে। তারপরও সুযোগ ছিল অধিনায়ক নাজমুলের সামনে। কিন্তু বল তিনি হাতেই নিতে পারলেন না। পৃথিবীর সহজতম আউট মিস!
ঠিক পরের বলে রিয়ান পরাগ বল তুললেন আকাশে। মিড উইকেট বাউন্ডারি থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করলেন পারভেজ হোসেন। অল্পের জন্য হাতে নিতে পারেননি। অথচ কাছেই দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ। ধারাভাষ্যে তামিম ইকবাল জোরের সঙ্গেই বললেন, এটি ইমনের ক্যাচ নয়। এটি অবশ্যই মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ।
৩০০ রানে পৌঁছাতে শেষ ওভারে ১৮ রান দরকার ভারতের। উইকেটে হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে রিংকু সিং। ভারত কি পারবে?
বোলিংয়ে এসেছেন তানজিম হাসান, যিনি আগের তিন ওভারে দিয়েছেন ৫১ রান।
হলো না ভারতের ৩০০ রান। তানজিম হাসানের করা শেষ ওভারে নিতে পেরেছে ১৫ রান। টানা দুই বলে হার্দিক পান্ডিয়া আর নীতিশ রেড্ডি বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়েছেন। তবে শেষ বলে রিংকু সিং ছক্কা মেরে ভারতের দাপট চিহ্ন রেখেই ইনিংস শেষ করেছেন।
২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান তুলেছে ভারত। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে এটিই টি–টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানিস্তানের ২৭৮ এখন দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে।
হায়দরাবাদে নাজমুল হোসেনরা যখন ভারতের বিপক্ষে বোলিংয়ে বিধ্বস্ত হচ্ছিলেন, তখন ভালো খবর নেই দুবাই থেকেও। মেয়েদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলছেন নিগার সুলতানারা। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১০৬ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
আহামরি কোনো বল ছিল না। পারভেজ হোসেনকে প্রথম বলটি শর্ট দিয়েছিলেন মায়াঙ্ক যাদব। কিন্তু সেই বলে না ছাড়তে বা না মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশের ওপেনার।
দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে হার্দিক পান্ডিয়াকে দুটি চার মেরেছেন তানজিদ হাসান। তৃতীয় ওভারে হাত খোলার চেষ্টা করেছেন নাজমুল হোসেনও। মায়াঙ্ক যাদবের প্রথম বলে মেরেছেন ছয়, পঞ্চম বলে চার। মাঝে লেগ বাই থেকে এসেছে আরও চার। সব মিলিয়ে তৃতীয় ওভারে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ হয়েছে ১৮ রান।
৩ ওভার শেষে বাংলাদেশে রান ১ উইকেটে ৩৫।
ওয়াশিংটন সুন্দর একটু জোরের ওপর বল রাখলেন অফ স্টাম্পের বাইরে। তানজিদ কাট শট খেলে ক্যাচ দিলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে পরাগের হাতে। আগের দুই ওভারে কিছুটা ভালো খেলার ইঙ্গিত দিলেও আবারও ধাক্কা। ৩৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারাল বাংলাদেশ।
নতুন ব্যাটসম্যান লিটন দাস। আগের দুই ম্যাচে ওপেনিংয়ে খেলা এই উইকেটকিপার শুরুতে বেশ সতর্কই থাকলেন।
৪ ওভার শেষে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৩৯।
৪,০,৪,৪,৪,৪।
টানা ৪ বলে চারটিসহ নীতিশ রেড্ডির করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ৫টি চার মেরেছেন লিটন দাস। এক ওভারে উঠল ২০ রান।
৫ ওভার শেষে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৫৯ রান।
লিটনের ব্যাটে ভালো একটি ওভারের পরেই আবার ধাক্কা। রবি বিষ্ণয়কে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বল ওপরে তুলে দিয়েছেন নাজমুল হোসেন। ফলাফল: সঞ্জু স্যামসনের হাতে সহজ ক্যাচ। বাংলাদেশ অধিনায়ক ফিরলেন ১১ বলে ১৪ রান করে।
নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমেছেন তাওহিদ হৃদয়। বিষ্ণয়ের ওভারের শেষ চার বলে রান নিতে পারেননি তিনি। উইকেট মেডেন!
বাংলাদেশের রান ৫ ওভার শেষে যা ছিল, তা–ই। বেড়েছে শুধু উইকেটসংখ্যা।
৬ ওভার শেষে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৫৯।
রান তাড়ায় ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৯৪। ওভার প্রতি ৯.৪—বাংলাদেশের আগের দুই ম্যাচের তুলনায় বেশ ভালোই। কিন্তু লক্ষ্যটা আজ ছোটখাট নয়। আগে ব্যাট করে ভারত গড়েছে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের বিশাল পাহাড়। সেই পাহাড় এখনো ২০৪ রান দূরে। হাতে আছে মাত্র ৬০ বল।
ভারত ব্যাটিংয়ে কতটা তাণ্ডব চালিয়েছিল, দেখতে পারেন পরিসংখ্যানের পাতায়। পড়ুন হায়দরাবাদে চার–ছক্কায় ভারতের রেকর্ড ভাঙার উৎসব।
লক্ষ্য যখন প্রায় তিন শ, দেখেশুনে খেলার সুযোগ নেই। লিটন দাসও তাই আক্রমণাত্মক থাকতে চেয়েছেন। তবে থামতে হলো ইনিংসের ১২তম ওভারে।
রবি বিষ্ণয়কে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিডউইকেট বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়েছেন বদলি ফিল্ডার তিলক ভার্মার হাতে। ২৫ বলে খেলা ৪২ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৮টি চার।
নতুন ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ, যিনি টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলছেন।
বাংলাদেশ ১২ ওভারে ৪ উইকেটে ১১২।
ক্যারিয়ারের শেষ টি–টোয়েন্টিতে মনে রাখার মতো কিছু করতে পারলেন না মাহমুদউল্লাহ। নেমেছিলেন ১২তম ওভারে, ফিরলেন ১৫তম ওভারে।
মাঝে ৯ বল খেলে ১ চারে করে গেলেন ৮ রান। ১৪১ টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ার থেমেছে মায়াঙ্ক যাদবের বলে বাউন্ডারিতে রিয়ান পরাগের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৩৩।
প্রতি বলে দরকার বাউন্ডারি। এমন সময়ে ৯ বলে ৩ রান করলেন মেহেদী হাসান। এক বরুণ চক্রবর্তীর বলেই টানা চারটি ডট দিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন নীতিশ রেড্ডির বলে পরাগকে ক্যাচ দিয়ে।
১৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১৩৮।
জয় দূরে সরে গেছে বহু আগে। লক্ষ্য এখন ব্যবধান কমানো। এর মধ্যেই পঞ্চাশের দেখা পেলেন তাওহিদ হৃদয়। আঠারতম ওভারের চতুর্থ বলে রবি বিষ্ণয়কে ছয় মেরে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি পূর্ণ করেছেন এই ডানহাতি। পরের বলে চার মেরে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন ১৫০–এও।
১৮ ওভারে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৫০।
ভারতের ইনিংসে শেষ বল ছিল ছক্কা, বাংলাদেশের ইনিংসে ১ রান। পুরো ম্যাচের চিত্রই যেন ফুটে উঠল দুই দলের ব্যাটিংয়ের শেষ বলে।
ভারতের ৬ উইকেটে ২৯৭ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ২০ ওভার ব্যাট করে তুলেছে ৭ উইকেটে ১৬৪–তে। ম্যাচ হারল ১৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। রানের হিসাবে এটিই টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। রেকর্ড রানে হারের সঙ্গে সিরিজেও ধবলধোলাই হয়েছে নাজমুল হোসেনের দল। হায়দরাবাদের আগে দিল্লি এবং গোয়ালিয়রে হেরেছিল বাংলাদেশ।
রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ম্যাচে রান তাড়ায় প্রথম বলেই পারভেজ হোসেনকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বেশিক্ষণ টেকেননি আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান আর অধিনায়ক নাজমুল হোসেনও। চতুর্থ উইকেটে লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয় গড়েন ৫৩ রানের জুটি। লিটন ২৫ বলে ৪২ রান করে ফেরার পর ম্যাচের শেষ পর্যন্ত এক প্রান্তে টিকেছিলেন হৃদয়। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে অপরাজিত থেকেছেন ৪২ বলে ৬৩ রানে।
তবে প্রায় তিন শ রান সামনে রেখে ব্যাট করা দলের জন্য এ রান যথেষ্ট হয়নি একদমই। উপরন্তু শেষ দশ ওভারের মধ্যে ব্যাট করতে নামা তিন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন রানের চেয়ে বল বেশি খেলে। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলা মাহমুদউল্লাহ ৮ রান করতে খেলেন ৯ বল, মেহেদী হাসান ৯ বলে করেন ৩ রান, আর ৪ বল খেলে রানই করতে পারেননি রিশাদ হোসেন।
স্মরণকালের বাজে বোলিংয়ের পর এমন বেহাল ব্যাটিংয়েই রেকর্ড রানে হেরে ভারত সফর শেষ করল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
ভারত: ২০ ওভারে ২৯৭/৬ (সঞ্জু ১১১, অভিষেক ৪, সূর্যকুমার ৭৫, পরাগ ৩৪, পান্ডিয়া ৪৭, রিংকু ৮*, নীতিশ ০, ওয়াশিংটন ১*; মেহেদী ০/৪৫, তাসকিন ১/৫১, তানজিম ৩/৬৬, মোস্তাফিজ ১/৫২, রিশাদ ০/৪৬, মাহমুদউল্লাহ ১/২৬)। বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৪/৭ (পারভেজ ০, তানজিদ ১৫, নাজমুল ১৪, লিটন ৪২, হৃদয় ৬৩*, মাহমুদউল্লাহ ৮, মেহেদী ৩, রিশাদ ০, তানজিম ৮*; মায়াঙ্ক ২/৩২, পান্ডিয়া ০/৩২, সুন্দর ১/৪, নীতিশ ১/৩১, বিষ্ণয় ৩/৩০, বরুণ ০/২৩, অভিষেক ০/৮)। ফল: ভারত ১৩৩ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সঞ্জু স্যামসন। সিরিজ: ভারত ৩–০ ব্যবধানে জয়ী।