চট্টগ্রামের কোচ মাহবুব আলী জাকি ভাবলেন একটু অন্যভাবে। দলের বেশ কয়েকজন জাতীয় দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে থাকায় এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে তাঁকে মাঠে নামাতে হয়েছে একঝাঁক নবীন ক্রিকেটারকে। তিনি ভাবলেন, খেলবেই যখন, টি-টোয়েন্টির রসায়ন যতটা সম্ভব বুঝে খেলুক।
এই ভাবনা থেকে জাকি কখনো কড়া নাড়লেন অন্য দলের কোচের, কখনো অন্য দলের ক্রিকেটারের। ব্যাটসম্যানদের সাহায্য করতে যেমন সিলেটের কোচ রাজিন সালেহকে ডেকে এনে টিপস দেওয়ালেন একদিন।
আরেক দিন বরিশালের পেসার কামরুল ইসলাম (রাব্বি) এসে চট্টগ্রামের পেসারদের দিয়ে গেলেন ইয়র্কার আর বাউন্সারের টোটকা। মুমিনুল হকের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে কথা বলিয়ে দিলেন ব্যাটসম্যানদের। আর তামিম ইকবাল তো দলেই ছিলেন। উঠতে–বসতে সবাইকে বুঝিয়েছেন টি-টোয়েন্টি কী ও কাকে বলে।
বিপিএলের প্রস্তুতিই বলুন কিংবা বিপিএলের বাইরের ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টির দীক্ষা দিতে, সিলেটে আট দলের এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে কাল।
একদমই নতুন ও অপরীক্ষিত উইকেটে ফাইনালটা অবশ্য হয়েছে লো স্কোরিং। ঢাকা মহানগরকে মাত্র ৬২ রানে অলআউট করে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন রংপুর। তবে ৫২ বল হাতে রেখে জেতা ম্যাচে ৫ উইকেট হারিয়ে শঙ্কায় পড়তে হয়েছিল চ্যাম্পিয়নদের।
প্রথম ৩ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৩ রান তোলা রংপুর ৫ রানের মধ্যে হারিয়ে বসেছিল ৪ উইকেট। ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ফাইনালের সেরা রংপুরের পেসার মুকিদুল ইসলাম, টুর্নামেন্ট-সেরা মহানগরের আবু হায়দার।
চট্টগ্রামের কোচ জাকির মতো টুর্নামেন্টের অন্য কোচ এবং ক্রিকেটাররাও ২০ লাখ টাকা প্রাইজমানির (চ্যাম্পিয়ন) এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টকে নিয়েছিলেন শেখার জায়গা হিসেবে। অনেকটা খেলতে খেলতে শেখা।
চ্যাম্পিয়ন রংপুরের কোচ জাতীয় দলের সাবেক পেসার সাইফুল ইসলামের বিশ্বাস, ‘বিপিএলের আগে এই টুর্নামেন্ট অনেকের ঘাটতি দূর করবে, আবার নতুনেরাও সুযোগ পেয়েছে বিপিএলের জন্য নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর। টি-টোয়েন্টিতে আমরা দুর্বল। তরুণদের জন্য এই টুর্নামেন্ট কাজে লাগবে।’
খুলনার কোচ তুষার ইমরান খুব করে চাইছেন, বিসিবি যেন প্রতিবছর নিয়ম করে বিপিএলের আগে এনসিএল টি-টোয়েন্টি আয়োজন করে। নিজ দল এবং অন্য দলের ক্রিকেটারদেরও তিনি দেখেছেন খুব ইতিবাচকভাবে টুর্নামেন্টটাকে নিতে। সিলেটের দুই মাঠে ক্রিকেটারদের ভালো করার তাগিদ তাঁকে মুগ্ধ করেছে।
এই টুর্নামেন্টে তরুণ ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টির অ, আ, ক, খ শেখার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। সেই হিসাবে রংপুর বিভাগের ক্রিকেটাররা ট্রফি জিতলেও টুর্নামেন্ট থেকে প্রাপ্তি আছে সবার।
টুর্নামেন্টটা এত ভালো হয়েছে দেখে জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটসম্যানের বিশ্বাস, দু-তিন মৌসুম পর এখানেও ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আগ্রহ দেখাবে, ‘এটি যদি নিয়মিত হয়, দেখবেন টুর্নামেন্টটা আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আসতে চাইবে। এটা খুব ভালো একটা উদ্যোগ।’
বিসিবি এনসিএল টি-টোয়েন্টি নিয়মিত মাঠে রাখবে—তুষার, সাইফুল, জাকির মতো এই আশা রানার্সআপ ঢাকা মহানগর কোচ মিজানুর রহমানেরও।
এনসিএল টি-টোয়েন্টি আয়োজনকে ‘যুগোপযোগী’ সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে তাঁর কথা, ‘শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, নিয়মিত হলে এটা আমাদের পুরো ক্রিকেটই বদলে দেবে। টি-টোয়েন্টিতে অনেক স্কিল লাগে। এটার জন্য যখন ক্রিকেটাররা প্র্যাকটিস শুরু করবে, তাদের অন্য সংস্করণের খেলায়ও সেটার ইতিবাচক ছাপ ফেলবে।’
তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এই টুর্নামেন্টের অন্য একটা তাৎপর্যও দেখছেন মিজানুর, ‘আমাদের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই তো টি-টোয়েন্টি খেলার স্বাদটা পায় না। এখানে তারা সেটা পেয়েছে। এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেললে বিপিএলে সুযোগ হবে, বিপিএলে খেললে জাতীয় দলে সুযোগ আসবে। সে জন্যই তারা এই টুর্নামেন্ট নিয়ে বেশি রোমাঞ্চিত।’
চট্টগ্রামের কোচ জাকির চোখেও ধরা পড়েছে বিষয়টা, তবে তারও আগে তিনি দেখেছেন তরুণ ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টির অ, আ, ক, খ শেখার চেষ্টা। সেই অর্থে রংপুরের ক্রিকেটাররা যদিওবা ট্রফি জিতল, এই টুর্নামেন্ট থেকে প্রাপ্তি আছে সবারই।