সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম উইকেটে থাকলেই কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগে!
কথাটা বলা পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়ে। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সফলতম জুটি যে এ দুজনেরই। তাই যদি বলা হয়, তাঁরা দুজন উইকেটে দাঁড়ালে পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন, আশার যে একটা বুদ্বুদ তৈরি হয়, তা কিন্তু মোটেও বাগাড়ম্বর নয়। পরিসংখ্যান কখনো কখনো আস্ত গাধা হতে পারে, কিন্তু সব সময়ই কি আর মিথ্যা বলে?
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সাকিব–মুশফিক জুটি বাঁধার পরপরই টিভির পর্দায় যখন সেই ছকটা দেখানো হচ্ছিল, সমর্থকেরা তখন নিশ্চয়ই বড় কিছুর আশাই করেছেন। আশা যে একেবারে পূরণ হয়নি, তা নয়। ১৫৯ রানের জুটি গড়েছেন সাকিব–মুশফিক। ওয়ানডে হলে এই জুটি নিয়ে আরও বড়াই করা যেত। কিন্তু প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড আর খেলাটা টেস্ট—তাই ভালো জুটি হলেও খচখচানি থাকেই।
খচখচানি থাকবে সাকিবের আউট নিয়েও। আজ দিনের খেলার তৃতীয় ওভারে মুমিনুল হক আউট হওয়ার পর জুটি বাঁধেন সাকিব–মুশফিক। বাংলাদেশের ইনিংসের তখন ১৩তম ওভার। বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে একসঙ্গে ব্যাট করেছেন ৪৪তম ওভার পর্যন্ত।
দ্বিতীয় সেশনে আইরিশ অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের বাইরের নিরীহ–দর্শন স্পিন টেনে লেগে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সাকিব। তাঁর ৮৭ রানের ইনিংসটা শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরিতে রূপ না নেওয়ায় আক্ষেপ হতে পারে, কেন ওই শট খেললেন, তা নিয়েও মাথা ঘামাতে পারেন কেউ কেউ। তবে এটাই সাকিবের ব্যাটিংয়ের ধরন। আর আউট হওয়ার আগে তিনি শক্ত ভিতও গড়ে দিয়ে গেছেন দলের।
টেস্টে এ পর্যন্ত ৬৫ ইনিংসে সাকিব-মুশফিক একসঙ্গে ব্যাটিং করে ২৮০২ রান তুলেছেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে আর কোনো জুটি এত রান তুলতে পারেনি। দুজনের জুটি থেকে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিও—৫টি। আর একটি জুটি থেকেই সাকিব–মুশফিকের সমান ৫টি সেঞ্চুরি এসেছে—হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমর। ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে এই দুই সাবেক ৩২ ইনিংসে জুটি বেঁধে ১৩২১ রান তুলেছেন, সেঞ্চুরি ৫টি, ফিফটিও ৫টি। জুটিতে ব্যক্তিগত ফিফটি–সংখ্যায় অবশ্য সাকিব–মুশফিকের ওপরে কেউ নেই। সর্বোচ্চ ১৭টি ফিফটির দেখা মিলেছে দুজনের জুটিতে।
টেস্টে জুটিতে তোলা মোট রানে সাকিব–মুশফিকের পরই ইমরুল কায়েস–তামিম ইকবাল জুটি। ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৫৮ ইনিংসে একসঙ্গে ব্যাট করে ২৪৩৩ রান তুলেছেন দুই ওপেনার। ইমরুল ২০১৯ সালে সর্বশেষ টেস্ট খেলায় তাঁদের জুটিতে রানসংখ্যা আর বাড়েনি। মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম—বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে জুটিতে সর্বোচ্চ রান তোলার তালিকায় এ দুজন তৃতীয়। ৩০ ইনিংসে ১৫৩৯ রান তুলেছেন এ দুজন।
টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটিও কিন্তু সাকিব–মুশফিকের। সেই যে ২০১৭ সালে ওয়েলিংটন টেস্টে পঞ্চম উইকেটে দুজনের ৩৫৯ রানের মহাকাব্যিক জুটি। ওটা এখনো কোনো জুটি টপকে যেতে পারেনি। তার দুই বছর আগে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ওপেনিং জুটিতে ৩১২ রান তুলেছিলেন ইমরুল–তামিম। এটি টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। শুধু টেস্ট নয়, তিন সংস্করণ মিলিয়েই সর্বোচ্চ রানের জুটি এ দুটি।
তিন সংস্করণের কথা যেহেতু উঠলই, সেখানেও সাকিব–মুশফিকের রানসংখ্যা জানিয়ে রাখা ভালো। ১৯২ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬৮২৭ রান তুলেছেন এ দুজন। ১২টি সেঞ্চুরি ও ৩৮টি ফিফটি এসেছে দুজনের কাছ থেকে।
এ তালিকায় দ্বিতীয় ইমরুল–তামিম জুটি বেশ বড় ব্যবধানে পিছিয়ে। ১২৫ ইনিংসে ৪৪২৫ রান তুলেছেন এ দুজন। ২১টি ফিফটি ও ৬টি সেঞ্চুরি এসেছে তাঁদের কাছ থেকে।
জুটি প্রসঙ্গ নিয়ে যেহেতু কথা হচ্ছে, তাই টেস্টে সর্বোচ্চ রানের জুটি কার—সে প্রশ্নও উঠতে পারে। সে তালিকায় ১৪৩ ইনিংসে ৬৯২০ রান তুলে সবার ওপরে রাহুল দ্রাবিড়–শচীন টেন্ডুলকার জুটি। এক কুড়ি সেঞ্চুরি ও ২৯টি ফিফটি এসেছে দুই কিংবদন্তির জুটিতে।
আর তিন সংস্করণ মিলিয়ে? ২৯৩ ইনিংসে ১৩৩৬৮ রান, ৩৬টি সেঞ্চুরি ও ৬২ ফিফটি, ব্যাটিং গড় ৪৭.৭৪—মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা জুটিই সবার সেরা।