ফাঁকা গ্যালারি পেয়ে হাত পা ছাড়িয়ে রাজার হালে খেলা দেখছিলেন মার্ক
ফাঁকা গ্যালারি পেয়ে হাত পা ছাড়িয়ে রাজার হালে খেলা দেখছিলেন মার্ক

ফাঁকা গ্যালারিতে ইংলিশ দর্শকের ‘অন্তর্বাস’

আভাসটা আগের দিনই পাওয়া গিয়েছিল। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে নিয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তেমন কোনো হইচই নেই। সকালে বাংলাদেশ দল অনুশীলনে, বিকালে ইংল্যান্ড। সচরাচর যেমন থাকে, উৎসুক দর্শকের ভিড় নেই। ভিড় নেই টিকিট কাউন্টারেও। আজ স্টেডিয়ামে প্রায় দর্শকশূন্য গ্যালারি দেখে তাই অবাক হননি অনেকেই। যেন এমনই হওয়ার কথা।

অথচ দর্শক নিয়ে চট্টগ্রামের সব সময়ই একটা গর্ব ছিল। খেলাটা যদি হয় সাদা বলের, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি দেখে মনে হয়েছে, ওয়ানডে নয়, খেলা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট। লাল বলের খেলায় চট্টগ্রামে এমন মাঠ গ্যালারি দেখে অভ্যস্ত সবাই, সাদা বলে নয়।

কিন্তু এখানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে ম্যাচ, তারপরও গ্যালারিতে এমন শূন্যতার হাহাকার! মিরপুরেই সিরিজের মীমাংসা হয়ে যাওয়াই কি তাহলে কারণ? একটা সময় বাংলাদেশ নিয়মিতই সিরিজ হারত, মাঝখানে প্রায় নয় বছর এমন কিছু হয়নি বলেই হয়তো নতুন প্রজন্মের দর্শক ‘মরা’ ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারপরও যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সম্ভবত ক্রিকেটের পাঁড় দর্শক।

প্রথাগত পতাকার মতো নয়। আকৃতিটা ঠিক পুরুষের অন্তর্বাসের মতো

যেকোনো খেলাতেই গ্যালারিতে থাকা যাঁদের অভ্যাস। এমনই একজনকে একাকী বসে থাকতে দেখা গেল গ্যালারির একটা অংশে। ফাঁকা গ্যালারি পেয়ে হাত পা ছাড়িয়ে রাজার হালে খেলা দেখছিলেন। বিষয়টা তিনি উপভোগও করছিলেন, ‘এত ফাঁকা গ্যালারিতে আগে কখনো খেলা দেখিনি। সারাদিন এমনই থাকুক।’

মিরপুরেও বেশ কিছু ইংলিশ দর্শকের দেখা মিলেছে। এখানেও ছিলেন তাঁরা। গ্যালারির যে অংশটাতে ডিজিটাল স্কোরবোর্ড, সেখানে পাওয়া গেল এমন দুজনকে। ঘটনাচক্রে দুজনের নামই মার্ক। স্থানীয় অনেক দর্শক তাদের সঙ্গে একের পর সেলফি তুলেই যাচ্ছেন। তাঁরাও হাসিমুখে ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছেন।

কিছুক্ষণ পর এক মার্ক ফাঁকা জায়গায় বসে খেলা দেখতে শুরু করলেন। আরেক মার্ক গেলেন ‘পতাকা’ টানাতে। ‘পম্পি’ ও ‘গালস’ লেখা পতাকার আকৃতিটা অদ্ভুত। একেবারেই প্রথাগত পতাকার মতো নয়। আকৃতিটা ঠিক পুরুষের অন্তর্বাসের মতো।

মার্ক সেটিই নিশ্চিত করলেন, ‘আমরা বার্মি আর্মিদের মতো পতাকা বানাতে চাইনি। সবাই তো একই রকম পতাকা বানায়। আমরা একটু অন্যরকম করলাম। দেখছেন তো, আন্ডারওয়্যারের মতো আমাদের পতাকা।’ সেখানে লেখা ‘পম্পি’ আর ‘গালস্’ দুই মার্কের শহরের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ।

বাংলাদেশ–ইংল্যান্ড তৃতীয় ওয়ানডেতে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি ফাঁকা

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রথম দুই ওয়ানডেও মাঠে বসে দেখেছেন মার্ক। কিন্তু সেখানে এই পতাকা টানাতে দেওয়া হয়নি। চট্টগ্রামে মার্ক যখন এটি গ্যালারির গ্রিলে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন, কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী এসে বুঝতে চাইলেন, জিনিসটা কী। কী বুঝেছেন কে জানে, তবে মার্ককে বাধা দেননি তাঁরা। মিশন সফল করতে পেরে মার্কের মুখে তাই যুদ্ধজয়ের হাসি। এর আগে ইংল্যান্ডের খেলা দেখতে ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছেন। ব্যতিক্রমী এই পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছেন সেখানেও।

মুঠোফোনে এই দুই দেশের গ্যালারিতে তাদের বিশেষ পতাকা ওড়ানোর ছবিও দেখালেন তিনি, ‘আমরা চেষ্টা করি, ইংল্যান্ডের খেলা দেখতে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়েছিলাম। এর আগে ভারতও গিয়েছি। আমরা চেষ্টা করি যেখানেই যাই, সেখানকার সংস্কৃতিটা বোঝার চেষ্টা করি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মিশি।’

১০৫.৬৩ স্ট্রাইক রেটে ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেছেন সাকিব আল হাসান

সে জন্যই নাকি মার্ক ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ট্রেনে করে আসতে চেয়েছিলেন। টিকিট না পাওয়ায় বাসে আসতে হয়েছে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে যে কয়দিন সময় থাকবে, তাতে চট্টগ্রামের আশপাশটা ঘুরে দেখার ইচ্ছা এই দুই ইংলিশম্যানের, ‘শুনেছি, এখান থেকে খুব কাছেই সমুদ্র। আশপাশে পাহাড়ও আছে। ভাবছি, কাল-পরশু ঘুরে দেখব।’

বাংলাদেশের মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ একটু অবাকই করেছে মার্ককে। যেমন অবাক হয়েছেন গ্যালারিতে এত কম দর্শক দেখে। নিজেই প্রশ্ন করলেন, ‘এমন হওয়ার কারণ কী? বাংলাদেশকে তো ক্রিকেট পাগল বলে জানি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলে হয়তো দর্শক বেশি হতো। মিরপুরে দেখেছি, শুক্রবার গ্যালারিভর্তি দর্শক ছিল। টি-টোয়েন্টিতে নিশ্চয়ই আরও দর্শক হবে।’

৯ মার্চ চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টিও দেখতে আসবেন দুই মার্ক। সেদিনও গ্রিলে ওই অন্তর্বাস আকৃতির ব্যতিক্রমী পতাকাটা ঝুলিয়ে দিতে চান গ্যালারিতে।