সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নার্ভাস থাকবে ভারত, বলছেন রস টেলর
সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নার্ভাস থাকবে ভারত, বলছেন রস টেলর

এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নার্ভাস থাকবে ভারত

আগামী বুধবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। ২০১৯ সালের সেমিফাইনালে ভারতকেই হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, সে ম্যাচে খেলেছিলেন রস টেলর। আইসিসিতে লেখা এক কলামে ওল্ড ট্রাফোর্ডের দিকে ফিরে তাকিয়েছেন সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টেলর, জানিয়েছেন মুম্বাইয়ের ম্যাচ নিয়ে নিজের ভাবনাও—

২০২৩ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড যখন ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, ২০১৯ সালের ম্যাচটির দিকে ফিরে না তাকিয়ে পারা যায় না।

চার বছর আগে ম্যানচেস্টারের সেমিফানালে ভারত নেমেছিল টুর্নামেন্টের ফর্মে থাকা দল হিসেবে। আর আমাদের নজর ছিল সেমিফাইনালে জায়গা করে নিতে পাকিস্তানকে নেট রান রেটের হিসাবে বাইরে রাখার ব্যাপারটি নিশ্চিত করার দিকে। এবার তো ভারত আরও বেশি ফেবারিট। ঘরের মাঠে গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত খেলেছে তারা। কিন্তু যখন হারানোর কিছু নেই, নিউজিল্যান্ড বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কোনো একটা দলের মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে যদি ভারত নার্ভাস হয়ে থাকে, সেটি এই নিউজিল্যান্ড দলই।

আমরা এমন কিছুর মুখোমুখিই হচ্ছি, তবে ২০১৯ সালেও তাই ছিল। দুই দিনের এক ওয়ানডে ম্যাচ ছিল সেটি! আমার জন্য অদ্ভুত এক পরিস্থিতি ছিল, অপরাজিত থেকে রাত কাটাতে হয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটেই সেটি স্নায়ুর ওপর অনেক চাপ তৈরি করে, আর ওয়ানডেতে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হলে তো কথাই নেই!

ওল্ড ট্রাফোর্ডে আমার মতে সমর্থকদের ৮০ শতাংশ ছিল ভারতীয়। নিউজিল্যান্ড দলের কিছু বন্ধু ও পরিবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, আর ছিল কিছু ইংলিশ।

আমাদের নিজেদের খেলার ওপর ভরসা করতে হতো। দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্রই ৩০০ রান করেছিল। ফলে বেশির ভাগ ধারাভাষ্যকার ভেবেছিলেন আমাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, কারণ আমরা ধীরে ধীরে রান করছিলাম। কিন্তু কেইন উইলিয়ামসন ও আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, ২৪০-২৫০ রানই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবে। তেমন রানই করেছিলাম। ম্যাট হেনরি ও ট্রেন্ট বোল্ট এরপর দ্রুত উইকেট এনে দিয়েছিল। আমরা জানতাম সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হবে।

‘কেইন উইলিয়ামসন ও আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, ২৪০-২৫০ রানই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবে।’

সে ম্যাচের আরেকটি ব্যাপার মনে পড়ে। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে মার্টিন গাপটিলের রানআউট করা। অবশ্যই সবাই ফাইনালে গাপটিলের রানআউট হওয়া মনে করতে পারে, কিন্তু সেমিফাইনালের ওই রানআউটটা নিউজিল্যান্ডে বেশ প্রচারই পেয়েছিল। সে ম্যাচে আমিও রানআউটের শিকার ছিলাম। বাউন্ডারি থেকে সেটি করেছিল রবীন্দ্র জাদেজা। আমার কিছু হবে না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকলেও সে সরাসরি থ্রোয়ে আউট করেছিল। সে সত্যিই খ্যাপাটে। আমি নিশ্চিত এ ম্যাচেও সে গুরুত্বপূর্ণ একজন হবে।

মুম্বাইয়ের মাঠে আপনি বড় স্কোরই আশা করবেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বড় পরীক্ষা হবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। টস গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নিউজিল্যান্ড যদি ব্যাট ও বলে ভালো শুরু করতে পারে, লড়াইয়ে থাকার ক্ষেত্রে তারা আত্মবিশ্বাস পাবে। দুই ইনিংসেই প্রথম ১০ ওভার গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় প্রথম ১০ ওভারে দু-তিনটি উইকেট নিয়ে তাদের চাপে ফেলতে চাইবেন। শুরুর তিনজন দুর্দান্ত ব্যাটসম্যানের ওপর তারা অনেক নির্ভর করে। বিশ্বের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান শুবমান গিল, এরপর রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। আমাদের দ্রুত উইকেট নিয়ে মিডল অর্ডারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। তেমন কিছু করতে পারলে তাদের চেপে ধরা যাবে। কত দ্রুত তারা আধিপত্য বিস্তার শুরু করতে পারে, তার ওপর প্রভাব ফেলবে সেটি।

‘শুরুর তিনজন দুর্দান্ত ব্যাটসম্যানের ওপর ভারত অনেক নির্ভর করে’

ভারতের বোলিংয়ের সময়ও ব্যাপারটি একই। আপনি রান করতে চাইবেন। কিন্তু যশপ্রীত বুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ ও মোহাম্মদ শামির মতো অস্ত্রের বিপক্ষে আমাদের উইকেট হাতে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। তারা ছুটতে শুরু করলে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, স্পিনাররা এরপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু যদি উইকেট হাতে রাখেন, তাহলে ব্যাপারটি একটু সহজ হয়ে উঠবে। ম্যাচের পিছু ধাওয়া করতে হবে না।

‘রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারের সমন্বয়ে যখন আপনার নাম রাখা হয়েছে, ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলাটা বিশেষ কিছুই।’

রাচিন রবীন্দ্রর জন্য বড় একটা দিন হতে যাচ্ছে। রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারের সমন্বয়ে যখন আপনার নাম রাখা হয়েছে, ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলাটা বিশেষ কিছুই। টুর্নামেন্টে আমাদের কারও অনেক রান করার দরকার ছিল। আমি নিশ্চিত, অনেকেই ভাবেননি সেটি রাচিন করবে। কিন্তু আমি সত্যিই মুগ্ধ। শুধু রান করেছে, তা নিয়ে নয়, কিন্তু যেভাবে করেছে। তার ছন্দ, স্থিতধী ভাব। সে ছোটবেলায় যেভাবে ব্যাটিং করত, সেভাবেই খেলছে। নিজের ওপর চাপ নেয়নি। আশা করি, এমনই করতে থাকবে।

সেমিফাইনাল এবং ভবিষ্যতে নিউজিল্যান্ডেরে হয়ে বড় ভূমিকা রাখার আছে তার। এটা ভেবে হাসিই পায়, মাইকেল ব্রেসওয়েল থাকলে হয়ত সে বিশ্বকাপে সুযোগই পেত না! ভাগ্য নিশ্চিতভাবেই ভূমিকা রেখেছে এতে। আমাদের সবারই সেটি দরকার।

আশা করি, ভাগ্য নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেই থাকবে বুধবার।