জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের খেলা শেষে মাঠ ছাড়ছেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের খেলা শেষে মাঠ ছাড়ছেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা

চট্টগ্রাম টেস্ট

শ্রীলঙ্কার আক্ষেপ থাকতে পারে, বাংলাদেশেরও

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩১৪/৪ (প্রথম দিন শেষে)

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচে টস জিতলে অধিনায়কের সিদ্ধান্তটা একেবারেই সহজ। চোখ বুজে ব্যাটিং। এই মাঠে টস জিতে কোনো অধিনায়কের ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়াই বিরল। কারণটাও খুব সরল। চট্টগ্রামের উইকেট সব সময়ই ব্যাটিংবান্ধব। তা ব্যাটিং উইকেটে যেকোনো দলই আগে ব্যাটিং করে বড় রান করতে চাইবে। তাতে আরেকটা সুবিধাও পাওয়া যায়। পরে উইকেট যদি একটু ভাঙে, তাতে চতুর্থ ইনিংসে চাপে ফেলা যাবে প্রতিপক্ষকে। যে কারণে এই মাঠে এর আগের ২৩টি টেস্টে টস জেতার পর মাত্র তিনবারই কোনো অধিনায়ক ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সর্বশেষ সেই ২০১১ সালে, যখন পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ–উল হক টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন।

আজ সকালে টসে জেতার পর শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দুবার ভাবেননি। যে কারণে এই সিদ্ধান্ত, তা মোটামুটি সফলও বলা যায়। যদিও দিনটা আরও ভালো হতে পারত ভেবে আক্ষেপ থাকতেই পারে ধনঞ্জয়ার। তিন লঙ্কান ব্যাটসম্যান নিশান মাদুষ্কা, দিমুথ করুনারত্নে ও কুশল মেন্ডিস হাফ সেঞ্চুরি করে আউট হয়েছেন। করুনারত্নে ও মেন্ডিস তো সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে। টেস্ট অভিষেকে ২ উইকেট নেওয়া হাসান মাহমুদ ছিলেন বাংলাদেশের দিনের সেরা বোলার। শ্রীলঙ্কা দিন শেষ করেছে ৪ উইকেটে ৩১৪ রানে। ক্রিজে আছেন দিনেশ চান্ডিমাল (৩৪) ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা (১৫)।

হাসান মাহমুদ দিনের সেরা বোলার। ২টি উইকেট নেন

তবে আক্ষেপ করতে পারে বাংলাদেশও। ৪ উইকেট তুলে নেওয়া গেছে, কিন্তু দিনটা তো আরও ভালো হতে পারত। তা হয়নি দিনের প্রথম সেশনে তিনটি সুযোগ হাতছাড়া করায়। দুই লঙ্কান ওপেনার করুনারত্ন ও মাদুষ্কার দুটি ক্যাচ পড়েছে, ছিল রানআউটের সুযোগও। যে কারণে ভালো বোলিং করেও প্রথম সেশনে উইকেটশূন্যই থেকে যেতে হয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভার থেকেই দারুণ বোলিং করা হাসানের তৃতীয় ওভারে (ইনিংসের ষষ্ঠ) দ্বিতীয় স্লিপে ম্যাচ তোলেন মাদুষ্কা। কিন্তু মাহমুদুল হাসান সহজ সেই ক্যাচ ফেলে দেন। তখন ৯ রানে থাকা মাদুষ্কা শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ৫৭। সেটিও রানআউট।

২২তম ওভারে হাসানের বাউন্সারে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে ক্যাচ তোলেন করুনারত্নে, কিন্তু একটু এগিয়ে দাঁড়ানোয় সাকিব ক্যাচটি ধরতে পারেননি। উল্টো তা ছয় হয়ে যায়। করুনারত্নে তখন ২২ রানে। এর আগে করুনারত্নেকে সরাসরি থ্রোতে রানআউট করার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। শেষ পর্যন্ত করুনারত্নে আউট হয়েছেন ৮৬ রানে। উইকেটটি অবশ্যই হাসানই পেয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর প্রথম উইকেট।

দ্বিতীয় সেশনে ভাগ্য বাংলাদেশের দিকে ফিরে তাকায়। ২৯তম ওভারে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন মাদুষ্কা। তাতে ৯৬ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙে। যদিও উইকেট পতনে শ্রীলঙ্কার খুব একটা ক্ষতি হয়নি। তিনে নামা কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে ১১৪ রানের আরও একটি জুটি গড়েন করুনারত্নে। নিজেও হাফ সেঞ্চুরি করে এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে।

৮৬ রান করা করুনারত্নে হাসানের বলে বোল্ড হন

কিন্তু আঁটসাঁট লাইন-লেংথে বল করে যাওয়া হাসান এসে করুনারত্নেকে থামান। ৫৫তম ওভারে হাসানের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্টাম্পে বল টেনে আনেন করুনারত্নে। ১২৯ বলে ৮৬ রানে থামে তাঁর ইনিংস, ৮টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল তাতে।

করুনারত্নের চেয়েও সেঞ্চুরির বেশি কাছে গিয়ে আউট হয়েছেন কুশল মেন্ডিস। নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যাওয়া মেন্ডিস খেলছিলেন স্বচ্ছন্দ্যেই। বল পুরোনো হয়ে গেছে, কোনো টার্ন কিংবা বাউন্সের চ্যালেঞ্জ নেই। লম্বা সময় এমন নির্বিষ বোলিংয়ের পর হঠাৎই সাকিবের করা ৭২তম ওভারের একটি বল টার্ন পেল, বাউন্সও। সেটাই মেন্ডিসের জন্য কাল হয়ে গেল। লাফিয়ে ওঠা সেই বল সামনে এসে ডিফেন্স করা মেন্ডিসের ব্যাটের কাঁধ ছুঁয়ে যায় স্লিপে থাকা মিরাজের হাতে। ১৫০ বলে ৯৩ রানে থামে মেন্ডিসের ইনিংস।

কুশল মেন্ডিসও সেঞ্চুরি পাননি। ৯৩ রানে আউট হন

দ্বিতীয় নতুন বলও বাংলাদেশকে নিরাশ করেনি। শেষ বেলায় ৮১তম ওভারে বোলিংয়ে এসে হাসান ফেরান অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে তৃতীয় স্লিপে দাঁড়ানো মিরাজের হাতে ক্যাচ তোলেন ম্যাথুস (২৩)। দিনের বাকি সময় আর কোনো ক্ষতি হতে দেননি আরেক অভিজ্ঞ দিনেশ চান্ডিমাল ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। দুজন ২৫ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থেকেই মাঠ ছাড়েন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ১ম ইনিংসে ৯০ ওভারে ৩১৪/৪ (মাদুশকা ৫৭, করুনারত্নে ৮৬, মেন্ডিস ৯৩, ম্যাথুস ২৩, চান্ডিমাল ৩৪*, ধনাঞ্জয়া ১৫*; খালেদ ০/৪১, হাসান ২/৬৪, সাকিব ১/৬০, মিরাজ ০/৪৮)।

* প্রথম দিন শেষে।