রানপ্রসবা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে ব্যাটসম্যানরা সহজেই থিতু হবেন, জুটি গড়বেন, বল পুরোনো হলে দ্রুত রান তুলবেন, উইকেট নিতে বোলারদের পরিশ্রম করতে হবে—চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন এসব অনুমিতই ছিল।
বাংলাদেশ দলের বোলাররা পরিশ্রম করেছেনও। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করেছেন হাসান-সাকিবরা। শ্রীলঙ্কা ৩১৪ রান করলেও খুইয়েছে ৪ উইকেট। উইকেটের সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারত। তিনটি ক্যাচ, একটি রানআউটের সুযোগ নিতে পারলে প্রথম দিন শেষে ম্যাচের ছবিটা অন্য রকম হতে পারত। ক্যাচ ফেলা বা রানআউটের সুযোগ হারানো যদি খেলার অংশও ধরা হয়, রিভিউ নেওয়াটা তো ক্রিকেটীয় বিবেচনার ওপর নির্ভর করে। সেখানেও খুবই বাজে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
সুযোগ হাতছাড়ার গল্পটা অবশ্য বাংলাদেশ দলের জন্য নতুন নয়। সিলেট টেস্টের প্রথম সকালেও ৫৭ রানে ৬ উইকেট তুলে নেওয়ার পরও ক্যাচ ছুটে যাওয়ায় লঙ্কানদের থামিয়ে রাখা যায়নি। তাই ব্যাটিং–স্বর্গে ৪ উইকেট নেওয়ার পরও খচখচানি থেকেই যাচ্ছে। ম্যাচ শেষে দলের পেস বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামসের কথায়ও সেই আভাসই পাওয়া গেল, ‘আমরা সকালে সুযোগ সৃষ্টি করেছি। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারিনি। প্রথম টেস্টেও একই ঘটনা ঘটেছে।’
পরে যোগ করেন, ‘হাসান দারুণ বোলিং করেছে। আমরা ক্যাচ ফেলেছি, যা আমাদের ক্ষতি করেই যাবে যদি এভাবে চলতে থাকে। সিলেট টেস্টে যেমন আমরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চাপ ধরে রেখেছি, এরপর হাল ছেড়ে দিয়েছি। দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পারছি না। ভালো করতে হলে এই জায়গায় আরও উন্নতি করতে হবে।’ চট্টগ্রাম টেস্টে টিকে থাকতে হলে আগামীকাল সকালের সেশনের গুরুত্বটা মনে করিয়ে দিয়েছেন অ্যাডামস, ‘খুব ভালো বোলিং করতে হবে সকালে। আজকের চেয়েও ভালো এবং লম্বা সময়ের জন্য। ওদের দুজন ভালো ব্যাটসম্যান ক্রিজে আছে। বেঞ্চে আছে আরও একজন ব্যাটসম্যান। যদি লম্বা সময় ধরে ভালো না করি, তাহলে ওরা ম্যাচটাকে ছিনিয়ে নেবে।’
অথচ খেলার মৌলিক দিকগুলো ঠিক রাখতে পারলে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দিন নিয়ে এতটা ভাবতে হতো না। অ্যাডামসও কোনো রাখঢাক না করেই বললেন, ‘আপনি যদি ক্যাচ ফেলতে থাকেন, তাহলে ভুগতে থাকবেন। আমি দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দেখছি, বাংলাদেশের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং বেশ ভালো। বেশ কিছু ভালো ক্যাচ ধরতে দেখেছি। কিন্তু যখন আপনি ইনিংসের শুরুতে ক্যাচ ফেলবেন, সেটার মূল্য তো দিতেই হবে। আমরা অনেক বেশি ক্যাচ ফেলছি। ওরা এটা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু ক্যাচও ফেলছে।’
আজ রিভিউ নিয়েও আলোচনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ দল। তাইজুল ইসলামের বল কুশল মেন্ডিসের ব্যাটের মাঝখানে লাগার পরও নাজমুল হোসেন এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়েছেন। প্রসঙ্গটি এসেছে সংবাদ সম্মেলনেও। অ্যাডামস অবশ্য নিজেদের রিভিউ–সমস্যার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘আমরা এটা নিয়ে আলাপ করছি। আমরা রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব ভালো করছি না। এটা পরিষ্কার। এখন পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে আমরা জঘন্য। আমাদের একটা ভালো পন্থা বের করতে হবে। এটা পুরোটাই অধিনায়ক ও উইকেটকিপারের দায়িত্ব। হয়তো পয়েন্ট ফিল্ডারেরও। এখন পর্যন্ত এই পন্থা কাজে দিচ্ছে না। আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি আবেগ দিয়ে। ওই বল ঠিক ব্যাটের মাঝে লেগেছে। এটা বাজে রিভিউ ছিল। তবে রিভিউ নিয়ে কেউ ভয় পাক, আমি এটাও চাইব না। তবে আমাদের আরেকটু ভালো পন্থা বের করতে হবে।’