ভারতের হারে পাকিস্তান সমর্থকেরা খুশি আর পাকিস্তানের হারে ভারত সমর্থকেরা—উপমহাদেশীয় ক্রিকেট বাস্তবতার এই চিত্র এবারের বিশ্বকাপে অন্য মাত্রা পেয়েছে। রোহিত শর্মা ও বাবর আজমদের হার বা ব্যর্থতায় শুধু খুশিই নয়, চরম মাত্রার উল্লাস-উচ্ছ্বাস আর উদ্যাপনে মাততে দেখা গেছে অপর দলের সমর্থকদের।
অপরের ব্যর্থতায় উদ্যাপনের এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করেন ওয়াসিম আকরাম ও গৌতম গম্ভীর। পাকিস্তান ও ভারতের দুই সাবেক ক্রিকেটারের মতে, ক্রিকেট শেষ পর্যন্ত একটা খেলা। অপর দলের হারে উদ্যাপন না করা সমর্থকদের নিজ দলের পারফরম্যান্সে মনোযোগী হতে হবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্পোর্টসক্রীড়াকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে ওয়াসিম বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের হার যেভাবে উদ্যাপন করেছে, তা দেখে একটা কথাই বলতে পারি ‘‘যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই।’’’
সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে বাবরদের ভারতের কাছে হার ও লিগ পর্ব থেকে বিদায়ের পর পাকিস্তানকে নিয়ে ভারতীয় সমর্থকদের উল্লাস করতে দেখা যায়। আবার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পর পাকিস্তান সমর্থকেরাও উল্লসিত হয়েছিলেন।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আকরাম মনে করেন, অপরের হারে উল্লাসের পেছনে দুই দেশের কিছু ব্যক্তির নেতিবাচক প্রচারণার ভূমিকা আছে, ‘আমি কারও নাম বলছি না, কিন্তু দুই দেশেই এমন কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন, যাঁদের কর্মকাণ্ড এটাকে উসকে দেয়। আপনার দেশের প্রতি আপনার টান আছে, আমার দেশের প্রতি আমার টান আছে। ব্যাপারটা এখানেই শেষ করে দিন। যখন সবাই ধুঁকছে, তখন একে অপরের প্রতি সদয় থাকুন। দিন শেষে এটা কিন্তু স্রেফ একটা খেলাই।’
পাকিস্তান কিংবদন্তির মতো একই ভাবনা ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ওপেনার গৌতম গম্ভীরেরও। অপরের হারে খুশি হওয়ার কোনো অর্থ নেই মন্তব্য করে সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, ‘অপরের হারে আনন্দিত হওয়ার চেয়ে নিজের দলের জয় উদ্যাপনে মনোযোগী হোন। আরেক দলের হার উদ্যাপন করার কোনো মানে হয় না। পাকিস্তান হারলে ভারতের মানুষ খুব খুশি হয়। একই ব্যাপার ভারত হারলে পাকিস্তানেও ঘটে। এটা খুবই নেতিবাচক মানসিকতা। এটা বদলাতে হবে, অন্তত খেলাধুলার ক্ষেত্রে।’
কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি ভারত ও পাকিস্তান সমর্থকদের মধ্যে অপরের হার উদ্যাপন উসকে দেন বলে আকরাম যে মন্তব্য করেন, সেটি মূলত কিছু সাবেক ক্রিকেটারকে উদ্দেশ্য করে বলা। গম্ভীরের মতে, ব্যক্তির নিজের প্রচার পাওয়ার ইচ্ছা এসব ঘটনাকে তীব্র করে তুলছে, ‘আরেকজনের দুঃখে নয়, নিজের সুখে আনন্দিত থাকুন। এসব করে কী লাভ? একজন ক্রীড়াবিদের এভাবে ভাবা উচিত নয়। মানুষ এসব করে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী এবং মনোযোগ পাওয়ার জন্য।’
আকরাম, গম্ভীররা তো বললেন। কিন্তু অপরের হার উদ্যাপন করা ক্রিকেট অনুসারীরা কি সেটা শুনবেন?