রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে গতকাল প্রথম দিন শেষে ৯২ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সৌদ শাকিল। এ ইনিংস খেলার পথে ৬৫ বছরের পুরোনো এক রেকর্ড ছুঁয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
টেস্টে পাকিস্তানের হয়ে যৌথভাবে দ্রুততম ১০০০ রানের রেকর্ড এখন শাকিলের। মাইলফলকটি থেকে ৩৩ রানে পিছিয়ে থেকে গতকাল ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০তম ইনিংসে এসে মাইলফলকটির দেখা পেয়ে পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান সাঈদ আহমেদকে মনে করিয়ে দিয়েছেন শাকিল। গত মার্চে প্রয়াত সাঈদ ১৯৫৯ সালে করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে ২০তম ইনিংসে হাজার রানের দেখা পেয়েছিলেন। সাঈদের পাশাপাশি এখন শাকিলের দখলেও পাকিস্তানের হয়ে টেস্টে দ্রুততম ১০০০ রান করার রেকর্ড।
টেস্ট খেলুড়ে অন্য দলগুলোর হয়ে এই সংস্করণে দ্রুততম ১০০০ রানের রেকর্ড কাদের, আসুন জেনে নিই—
১৯২৫ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের ১২তম ইনিংসে ১০০০ রানের মাইফলকের দেখা পান ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি এই ওপেনার। টেস্ট ইতিহাসে যৌথভাবে দ্রুততম ১০০০ রানের রেকর্ড তাঁর দখলে।
ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে বিখ্যাত ‘থ্রি ডব্লুজ’–এর অন্যতম এভারটন উইকসও তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম ইনিংসে ১০০০ রানের মাইলফলকের দেখা পেয়েছিলেন। সেটি ১৯৪৯ সালে ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে। ইনিংসসংখ্যা বিবেচনায় সাটক্লিফের টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম ১০০০ রানের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন উইকস। তবে সাটক্লিফের এই রেকর্ড গড়তে সময় লেগেছিল ২৪৪ দিন। উইকসের লেগেছে ১ বছর ১৩ দিন; যদিও দুজনেই নিজেদের ৯ম ম্যাচে এসে মাইলফলকটির দেখা পেয়েছিলেন।
অনেকের মতেই সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ডন ব্র্যাডম্যান তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম ইনিংসে ১০০০ রানের মাইলফলকের দেখা পেয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে দ্রুততম ১০০০ রানের রেকর্ডও তাঁর দখলে। ১৯৩০ সালে লিডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ডটি গড়েছিলেন ব্র্যাডম্যান। ম্যাচসংখ্যা বিচারে ডনের চেয়ে দ্রুততম সময়ে কেউ ১০০০ রানের মাইলফলকের দেখা পাননি। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৭ম ম্যাচে এসে মাইলফলকটির দেখা পেয়েছিলেন তিনি।
প্রতিভার বিচারে একসময় শচীন টেন্ডুলকারের পাশাপাশি উচ্চারিত হতো তাঁর নাম। কিন্তু বিনোদ কাম্বলি ভারতীয় ক্রিকেটে দীর্ঘশ্বাসের অপর নামই হয়ে রয়েছেন। ১৯৯৪ সালে ওয়াংখেড়েতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভারতের হয়ে টেস্টে দ্রুততম ১০০০ রানের রেকর্ড গড়েন সাবেক এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১৪তম ইনিংসে এসে মাইলফলকটির দেখা পাওয়ার পর এই সংস্করণে আর মাত্র ৭টি ইনিংসে ব্যাট করতে নামার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
২০০৩ সালে লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এই সংস্করণে দ্রুততম ১০০০ রানের রেকর্ড গড়েন গ্রায়েম স্মিথ।
২০২২ সালে করাচিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাইলফলকটির দেখা পান কনওয়ে। সেটি ছিল টেস্ট ক্যারিয়ারে তাঁর ১৯তম ইনিংস। কনওয়ে এই পথে ভেঙেছিলেন ৩৭ বছরের পুরোনো রেকর্ড। ১৯৮৫ সালে জন রিডের গড়া ২০ ইনিংসে ১০০০ রানের মাইলফলক ছোঁয়ার রেকর্ডটি নিজের করে নেন কনওয়ে।
প্রয়াত সাঈদ আহমেদ ১৯৫৯ সালে করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০তম ইনিংসে মাইলফলকটির দেখা পান। ৬৫ বছর পর গতকাল তাঁর রেকর্ড ছুঁয়েছেন সৌদ শাকিল। দুজনেই ক্যারিয়ারের ১১তম ম্যাচে এসে মাইলফলকটির দেখা পান। তবে সময় বিবেচনায় সাঈদের লেগেছিল ১ বছর ৩২১ দিন, সৌদের লেগেছে ১ বছর ২৬৪ দিন।
২০১৪ সালে খুলনা টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাইলফলকটির দেখা পান মুমিনুল হক। টেস্ট ক্যারিয়ারে সেটি ছিল তাঁর ১১তম ম্যাচ। সময় লেগেছে ১ বছর ২৪০ দিন।
১৯৮৫ সালে ক্যান্ডি টেস্টে ভারতের বিপক্ষে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৩তম ইনিংসে এসে মাইলফলকটির দেখা পেয়েছিলেন রয় ডায়াস। সেটি ছিল তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম ম্যাচ। সময় লেগেছিল ৩ বছর ২০৯ দিন। ২৩ বছর পর ২০০৮ সালে প্রভিডেন্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভ্যানডর্টও তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৩তম ইনিংসে ১০০০ রানের মাইলফলকের দেখা পান। ভ্যানডর্টের লেগেছিল ১৫ ম্যাচ; তবে সময় লেগেছিল ৬ বছর ১৯৮ দিন। ১০ বছর পর ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও ১০০০ রানের মাইলফলকের দেখা পান তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৩তম ইনিংসে। সেটি ছিল তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম ম্যাচ। সময় লেগেছিল ১ বছর ১৮৯ দিন।
১৯৯৬ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০০০ রানের মাইলফলকের দেখা পান ডেভ হটন। সেটি ছিল তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫তম ম্যাচ। সময় লেগেছিল ৩ বছর ৮৭ দিন।
অপর দুই টেস্ট খেলুড়ে দেশ আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের কোনো ব্যাটসম্যান এখনো এই সংস্করণে ১০০০ রানের দেখা পাননি।