রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কাছে স্পিনের ‘ক্লাস’ করেছেন বাংলাদেশের নাঈম হাসান
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কাছে স্পিনের ‘ক্লাস’ করেছেন বাংলাদেশের নাঈম হাসান

অশ্বিনের ‘মাস্টারক্লাসে’ নাঈম

ভারতের শুবমান গিলের সঙ্গে বাংলাদেশের নাঈম হাসানের বন্ধুত্ব বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে। দুজনই নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন। কাল কানপুর টেস্ট শেষে নাঈম তাঁর বন্ধু শুবমানের কাছে যান একটা আবদার নিয়ে। ভারতের অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে একটু কথা বলিয়ে দিতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে ৫২৭ উইকেটের মালিক অশ্বিনের কাছে অফ স্পিনের পাঠ নিতে চান নাঈম।

কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে সেরা খেলোয়াড় হওয়ায় অশ্বিন তখন একের পর এক সাক্ষাৎকারে দিতে ব্যস্ত। পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে একবার, এরপর হিন্দি ধারাভাষ্যকারদের সঙ্গে এবং তারপর ইংরেজি ধারাভাষ্যকারদের সঙ্গেও কথা বললেন। সবশেষে সংবাদ সম্মেলনেও যেতে হয়েছে। তাই মাঠে আর অশ্বিনের সঙ্গে কথা হয়নি নাঈমের। তবে দুই দল একই হোটেলে থাকায় বিকেলে অশ্বিনের রুমে গিয়ে অফ স্পিনের ‘মাস্টারক্লাস’ করে আসেন নাঈম।

ক্লাসে যাওয়ার আগে নাঈম অবশ্য পড়াশোনা করে গিয়েছেন। চেন্নাই থেকেই অশ্বিনের বোলিং মনোযোগ দিয়ে দেখছেন ২৪ বছর বয়সী এই অফ স্পিনার। কখন সাইড স্পিন করছেন, কখন টপ স্পিন, ফিল্ডিং কেমন সাজাচ্ছেন…বোলিংয়ের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করেছেন। যে কারণে অনেক প্রশ্ন নিয়ে অশ্বিনের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পেরেছেন নাঈম।
অভিষেক টেস্টে নাঈম হাসান

ক্লাসে যাওয়ার আগে নাঈম অবশ্য পড়াশোনা করে গিয়েছেন। চেন্নাই থেকেই অশ্বিনের বোলিং মনোযোগ দিয়ে দেখছেন ২৪ বছর বয়সী এই অফ স্পিনার। কখন সাইড স্পিন করছেন, কখন টপ স্পিন, ফিল্ডিং কেমন সাজাচ্ছেন…বোলিংয়ের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করেছেন। যে কারণে অনেক প্রশ্ন নিয়ে অশ্বিনের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পেরেছেন নাঈম। ১০ টেস্টে ৩৬ উইকেট নেওয়া নাঈমকেও মুখস্থ অশ্বিনের। প্রতিপক্ষ দলের স্পিনার বলে কথা! নাঈমের শক্তি, দুর্বলতা—সবই অশ্বিনের জানা। কাল মুঠোফোনে নাঈমই জানালেন, ‘উনি দেখলাম সবই জানেন। আমি কবে কেমন করেছি সবই তাঁর জানা।’

এরপর অশ্বিনের সঙ্গে অফ স্পিন নিয়ে কী কথা হলো তার একটা ধারণা দিলেন নাঈম, ‘আমি খেয়াল করেছি, তিনি শুরুতেই সাইড স্পিন দিয়ে শুরু করছেন। বেশির ভাগই দেখলাম সাইড স্পিন। তাঁর কাছে সাইড স্পিনের ব্যাপারে জানতে চেয়েছি, কেন এত বেশি সাইড স্পিন করেন এটা জানার ইচ্ছে ছিল।’

অশ্বিন কৌতূহল মিটিয়েছেনও। নাঈমের মুখেই শুনুন, ‘তিনি বলেছেন, সাইড স্পিন উপমহাদেশের কন্ডিশনের জন্য ঠিক আছে। এই কন্ডিশনে বেশির ভাগ সময় সাইড স্পিনই করা উচিত। বাইরের দেশে উল্টো। ওখানে টপ স্পিনটা বেশি করতে হয়। আমার তো টপ স্পিন ভালো হয়। আমার সাইড স্পিনে আরও ভালো করতে হবে। তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। তাঁর গ্রিপ আর আমার গ্রিপ প্রায় একই দেখলাম। উনি সাইড স্পিন করার সময় বলটাকে আরও ভেতরে রাখেন। আমাকেও বলেছেন বলটা যেন হাতে লুকিয়ে ফেলি ছোড়ার আগে।’

টেস্টে ৫২৭ উইকেট রবিচন্দ্রন অশ্বিনের

কোন ব্যাটসম্যানের জন্য কেমন ফিল্ডিং সাজানো উচিত, সেটা নিয়েও দুজনের মধ্যে কথা হয়েছে। এই যেমন রান থামাতে বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং রাখাটাকে অশ্বিন ‘নেতিবাচক বোলিং’ মনে করেন। নাঈমের মুখেই শুনুন অশ্বিনের যুক্তি, ‘উনি আমাদের মুশফিক ভাইয়ের উদাহরণ দিয়ে বলছিলেন, “মুশফিক যেহেতু সুইপ ভালো খেলে, আমি শুরুতেই সুইপের জন্য ফিল্ডার বাইরে রাখব। কারণ, ওই শটটা মুশফিকের শক্তির জায়গা। এখন সে যদি সুইপ খেলে বাউন্ডারির জায়গায় ১ রান পায়, তাহলে একটা সময় পর সে চাপে পড়বে। এমন শট খেলবে যে শটটা সে সেরকম ভালো খেলে না। তখন আমার উইকেট নেওয়ার সুযোগ বাড়বে।”’

অফ স্পিন বোলিংয়ের বদলে যাওয়ার গল্পও হয়েছে দুজনের। ডিআরএসের যুগে অফ স্টাম্পের বাইরে বল ফেলে টার্ন করে ভেতরে ঢোকানো বলের চেয়ে স্টাম্প সোজা বোলিং বেশি কার্যকর মনে করেন অশ্বিন। নাঈম নিজেই কথাটার সূত্র ধরে ব্যাখ্যা দিলেন, ‘আপনি ব্যাটসম্যানদের রুম (জায়গা) দিতে পারবেন না। দিলে মারবেই, ম্যাচে যেকোনো অবস্থায়। অশ্বিন বলছিলেন, বল স্টাম্পে রেখেই ভেতর–বাহির করাতে। যেন ব্যাটসম্যান সামনে খেলতে বাধ্য হয়।’

মেহেদী হাসান মিরাজকে অফ স্পিনের টিপস দিচ্ছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন

বাংলাদেশ দল প্রথমবার ভারতে টেস্ট খেলতে গিয়েছিল ২০১৭ সালে। হায়দরাবাদে একমাত্র টেস্টের সেই সফর শেষে সদ্য টেস্টে অভিষেক হওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে অফ স্পিন নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলেন অশ্বিন। এবার আধুনিক ক্রিকেটে সফলতম স্পিনারের তালিম নিলেন নাঈমও।