দেরিতে হলেও ২০২৩ বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভারতে গিয়ে বিশ্বকাপ খেলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) পক্ষ থেকে। এবার জানা যাচ্ছে, ডারবানে আইসিসি সভায় পাকিস্তানের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেবেন পিসিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ। পাকিস্তানের আন্তপ্রাদেশিক সমন্বিত মন্ত্রী (ক্রীড়া) আহসান মাজারি বলেছেন এমন। পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ভারতে গিয়ে বিশ্বকাপ খেলার ব্যাপারে পাকিস্তান আপত্তি তুলছে মূলত এশিয়া কাপ নিয়ে ঝামেলা তৈরি হওয়ার পর থেকে। দুই দেশের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকারের অনুমতি না থাকায় পাকিস্তানে গিয়ে এশিয়া কাপ খেলতে অস্বীকৃতি জানায় ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। শেষ পর্যন্ত হাইব্রিড মডেলে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় হবে এ টুর্নামেন্ট। আয়োজক হওয়ার পরও পাকিস্তানে হবে মাত্র চারটি ম্যাচ, আগামী ৩১ আগস্ট থেকে শুরু টুর্নামেন্টের নয়টি ম্যাচ হবে শ্রীলঙ্কায়।
এদিকে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভারত বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা করা হলে এ টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের অংশ নেওয়া দেশটির সরকারের অনুমতিসাপেক্ষ বলে সম্প্রতি জানিয়েছে পিসিবি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার আইসিসি সভায় ভারতে খেলার ব্যাপারে নিজেদের আপত্তির কথা জানাতে যাচ্ছে পিসিবি। দেশটির মন্ত্রী মাজারি বলেছেন, ‘যখন ভারতের দল পাকিস্তানে এশিয়া কাপ খেলতে যেতে পারছে না, তখন কেন পাকিস্তানের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হবে পারবে না—জাকা আশরাফ এ ব্যাপারই উত্থাপন করবেন (আইসিসি সভায়)।’
ডারবানে আইসিসি সভায় যোগ দিতে আশরাফ ছাড়াও আছেন পিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সালমান তাসির। সেখানে নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের পাকিস্তান সফরে আপত্তির কথা আলোচনা হতে পারে। মাজারির দাবি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ যে বিশেষ কমিটি গঠন করে দিয়েছে, তারাই ভারত সফরের ব্যাপারে পিসিবিকে পরামর্শ দেবে। সে কমিটির সদস্য মাজারি নিজেও, যার নেতৃত্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো। তবে কমিটির সদস্যদের ব্যক্তিগত মত, ভারত সফরে যেতে অস্বীকৃতি জানানোর মাধ্যমে নিজেদের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানানোর সময় এসেছে।
মাজারি বলেছেন, ‘এশিয়া কাপের জন্য ভারত যদি দল পাঠাতে না চায়, তাহলে আমিও বিশ্বকাপের ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে চাই। ভারতীয় বোর্ডের মতে, যদি তাদের পাকিস্তানে নিরাপত্তা নিয়ে ঝামেলা থাকে, তাহলে আমরাও ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি।’
আশরাফ আসার পর পিসিবির অবস্থান আরেকটু কঠোর হবে, মাজারির কথায় আভাস আছে সেটিরই। আশরাফের আগে পিসিবির দায়িত্বে থাকা নাজাম শেঠি শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপের হাইব্রিড মডেলের পক্ষে ছিলেন। তিনি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বোঝাতে পেরেছিলেন, অন্তত ৪-৫টি ম্যাচ পাকিস্তানে হতে পারে। বাকি ম্যাচগুলো হবে শ্রীলঙ্কায়। হাইব্রিড মডেল নিয়ে এক সময় বিসিসিআই আপত্তি তুললেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয় তারা। তবে পিসিবির বিশ্বকাপ নিয়ে অবস্থানের পর বিসিসিআইয়ের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, সেটিই দেখার বিষয়।
ভারতীয় বোর্ডের মতে, যদি তাদের পাকিস্তানে নিরাপত্তা নিয়ে ঝামেলা থাকে, তাহলে আমরাও ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি।পাকিস্তানের আন্তপ্রাদেশিক সমন্বিত মন্ত্রী (ক্রীড়া) আহসান মাজারি
দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয় না বলে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ দেখার সুযোগ বলতে এশিয়া কাপ ও আইসিসি ইভেন্টই। সেটিও না হলে অন্যান্য বোর্ডেরও এক রকম ক্ষতিই হবে। পিটিআইকে একটি সূত্র বলেছে, ‘ব্যাপারটি স্পষ্ট। আইসিসি ইভেন্টে পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ না হলে অন্যান্য বোর্ডও লভ্যাংশ হারাবে।’
এদিকে শেঠি আইসিসির প্রস্তাবিত লভ্যাংশ শেয়ারিং মডেলে ভারতের সিংহভাগ পাওয়া নিয়েও আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁর মতে, হিসাবে ভারতেরই বেশি অংশ পাওয়া উচিত। তবে সেটি কেন এত এবং কিসের ভিত্তিতে ঠিক হচ্ছে, সে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে আশরাফের অবস্থান কী হবে, সেটি নিশ্চিত না হলেও পাকিস্তানের লভ্যাংশের আরও বেশি অংশ পাওয়ার ব্যাপারে দাবি তুলতে পারেন পিসিবির নতুন প্রধান।