বাবর আজমের ওপর অতিনির্ভরশীলতা মোটেও তাঁর প্রতি ন্যায্য নয় বলে মনে করেন পাকিস্তানের নতুন প্রধান কোচ গ্যারি কারস্টেন। অধিনায়ক হিসেবে দলের যে বোঝা বাবরকে বয়ে নিতে হয়, সেটি কমাতে তাঁরা সহায়তা করবেন বলেও জানিয়েছেন এ দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ।
পাকিস্তানের সীমিত ওভারের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এখনো দলের সঙ্গে যোগ দেননি কারস্টেন। আয়ারল্যান্ড সিরিজ থাকলেও আগে থেকেই চুক্তি থাকায় আইপিএলে ছিলেন ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এ কোচ। অবশ্য ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজে পাকিস্তান দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা আছে কারস্টেনের।
এর আগে টকস্পোর্টে কথা বলার সময় কারস্টেন বাবর প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা (বাবরের ওপর নির্ভরশীলতা) কোনো খেলোয়াড়ের জন্যই ন্যায্য নয়। দলের জন্য সব সময়ই কিছু করতে হবে, তার এমন বোধ হওয়া উচিত নয়। আমার বাবরের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। সে দারুণ করেছে, দলের অনেকটা বোঝা সে নিজের কাঁধে বহন করে। কোচিং স্টাফ হিসেবে আমরা যা করব, সেই বোঝার ভার একটু কমাব। তাকে বোঝাতে হবে, সে একটা দলের একজন খেলোয়াড় মাত্র। সে নিজেকে আরেকটু স্বাধীনতা দিতে পারে সহজাত খেলাটা খেলতে।’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে ৪২ বলে ৭৫ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন বাবর। কারস্টেনের আশা, সামনে এমন আরও ইনিংস দেখা যাবে, ‘আমার মনে হয় তার ওই স্বাধীনসত্তাটা যদি বের করে আনতে পারি এবং আমরা বুঝতে পারি যে বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ম্যাচ জয়ে অবদান রাখার মতো আরও খেলোয়াড় আছে, তাহলে তার ওপর থেকে অনেকটা চাপ কমে আসবে।’
তবে পাকিস্তানের কোচ হিসেবে বাবরের ওপর থেকে চাপ কমানোই একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয়, কারস্টেন সেটি জানেন ভালোভাবেই। ভারতে কাজ করেছেন বলে উপমহাদেশের সংস্কৃতিটাও জানা তাঁর। কারস্টেনের মতে, ‘যখন কোনো দল জিতবে না, সে দলে বিভক্তি তৈরি হবে। এটি জানার মতো যথেষ্ট সময় ধরে আমি কোচিংয়ে আছি। ব্যাপারটা হচ্ছে, কোনো কোনো সংস্কৃতি ও পরিবেশে এটিকে আরও বড় করে দেখানো হবে। ২০ বছরেরও বেশি সময় কোচিংয়ে থাকলে একটা ব্যাপার হয়—আপনার অনেক কিছুতেই গা-সওয়া হয়ে যায়। আর এ ব্যাপারটি আমি কিন্তু ববের (উলমার) কাছে শিখেছি।’
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচ বব উলমার একসময় দক্ষিণ আফ্রিকাকে কোচিং করিয়েছেন। এরপর দায়িত্ব নেন পাকিস্তানের। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের কাছে পাকিস্তানের হারের পর হোটেলরুমে মৃত উদ্ধার করা হয়েছিল উলমারকে। সেই কোচকে এখনো প্রেরণা মনে করেন কারস্টেন, ‘তার সত্যিই এ রকম একটা গা-সওয়া ভাব ছিল কোচিং ক্যারিয়ারের শেষ দিকে। কারণ, নিজের কাজটি শুধু করে যেতে হয়। দল ভালো না করলে বেশ সমালোচনা হবে, এটিও মেনে নিতে হবে।’
কারস্টেন দায়িত্ব নিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেটের আরেকটি টালমাটাল সময়ে। এমন অবস্থায় কেন দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হলেন, সে প্রসঙ্গে কারস্টেন বলেছেন, ‘আইপিএলে থাকতে ফোনকল পাই, তারা জিজ্ঞাসা করে, আমি আগ্রহী কি না। আমি সব সময়ই আন্তর্জাতিক দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। এ পর্যায়ে কোচিং করা আসলে বড় ব্যাপার। ২০১৩ সালের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়িত্ব ছাড়ার পর আন্তর্জাতিক দায়িত্ব নিইনি। আমার সন্তানেরাও এখন একটু বড় হয়েছে, ফলে সফরে থাকা একটু সহজ হয়েছে। আর পাকিস্তানের মতো আন্তর্জাতিক দলের হয়ে কাজ করার আকর্ষণ আমার কাছে বেশ বড়।’
কোচ হিসেবে বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ভারতকে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জেতানো কারস্টেন, ‘ওপরের লোকদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, বোর্ডসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। তারা যাতে আপনার চিন্তাভাবনা গ্রহণ করে, সে জন্য একটা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার আশাও রাখতে হবে।’