ভারত কি বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম বড় ‘চোকার’? একটা সময় ছিল যখন ‘চোকার’ তকমা এককভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার নামের সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হালে কেউ কেউ ভারতকেও যে ‘চোকার’ হিসেবে বিশেষায়িত করতে চান।
এর পক্ষে যুক্তি বেশ জোরালোই। বিশেষ করে ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার পর যত দিন যাচ্ছে, ভারতের নামের সঙ্গে এই চোকিং ব্যাপারটি চলে আসছে। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কী দুর্দান্তই না খেলেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। গ্রুপ পর্ব আর কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত প্রতিপক্ষ পাত্তাই পায়নি ভারতের সামনে।
কিন্তু সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হলো ভারতের। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও একই ব্যাপার। দারুণ গতিতে ছুটে চলা ভারতের বিদায় হলো সেমিফাইনালে হেরে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আচমকা ব্যাটিং বিপর্যয়ে। তাও ধোনি আর রবীন্দ্র জাদেজা মিলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে জয়ের পথেই নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ধোনির সেই বিখ্যাত রান আউটে।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাদ দিন, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তো এক দশকে একই ব্যাপার। ২০১৪ সালে ঢাকায় ফাইনালে হার, ২০১৬ সালে সেমিফাইনালে বিদায়। ২০২১ সালে সেমিফাইনালেই উঠতে না পারা ভারত ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিতে হেরে গেল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, তা–ও ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পরপর দুইবার ফাইনালে উঠেও হার; ভারতকে এরপর কেউ যদি ‘চোকার’ বলেন, তাহলে তাঁকে কি দোষ দেওয়া যায়?
বিশ্বকাপের আরও একটি সেমিফাইনালে নামছে ভারত। এবার ঘরের মাটিতে। রাউন্ড রবিন লিগের প্রতিটি ম্যাচই জিতেছে রোহিত শর্মার দল। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে। তবে রাউন্ড রবিন লিগে যে দলের সঙ্গে প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ভারত হয়েছিল, সেমিফাইনালটা তাদের সঙ্গেই। কাল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘সেমিফাইনাল জুজু’ কি ভারতকে তাড়া করবে?
রোহিত শর্মাকে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে হলো ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে।
সেমিফাইনালের আগে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়েরা ইতিহাসকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন? ইতিহাস তাঁদের কতটা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে? রোহিত এমন প্রশ্নের দারুণ এক জবাব দিয়েছেন, ‘এই যে আমরা সেমিফাইনালে উঠে বারবার হেরেছি, এটাই খেলাটার সৌন্দর্য। দেখুন, আমরা যখন ১৯৮৩ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জিতি, তখন আমাদের বর্তমান দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের জন্মই হয়নি। এমনকি ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার সময় এই স্কোয়াডের অনেকে ক্রিকেট খেলাই শুরু করেনি। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, সেটা হলো, তারা অতীত নিয়ে অতটা ভাবে না। তারা বরং বর্তমানটাই মাথায় রাখে। আজ কী করল, কাল কী করবে, তাদের ভাবনা এই নিয়েই। আমি কাউকেই অতীত নিয়ে কথা বলতে দেখিনি বা শুনিনি। তাদের মনোযোগ ক্রিকেটার হিসেবে নিজেদের তারা কতটা এগিয়ে নিতে পারবে, তা নিয়েই। এটিই এই স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের বৈশিষ্ট্য। এটা আমি মনে করি খুব ভালো একটা ব্যাপার।’
বিশ্বকাপে ম্যাচ ধরে ধরেই ভারত এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক, ‘বিশ্বকাপের মতো বড় ও দীর্ঘ এই টুর্নামেন্টে ম্যাচ ধরে ধরে এগোনোই ভালো। আমরা সেটিই করেছি।’
রোহিত অতীত নিয়ে ভাবছেন না। কিন্তু অতীত থেকেই তো লোকে শিক্ষা নেয়। এতগুলো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আসল সময়ে হেরে যাওয়ার ব্যাপারটি থেকে ভারত কি আসলেই কোনো শিক্ষা নেবে না, যে শিক্ষা মুম্বাইয়ে অধিনায়ক হিসেবে রোহিত কাজে লাগাবেন!
এমন প্রশ্নের জবাবেও গতানুগতিক ভারত অধিনায়ক, ‘অবশ্যই সাফল্য না পেলে অনেক কিছু শিক্ষণীয় থাকে সেসব ব্যাপারে। কোন জায়গায় ভুলটা হলো, কেন হারলাম—এসব নিয়ে আলোচনা হয়। খেলোয়াড়েরাও শেখে। তবে আমি বলতে চাই, অতীতে যেসব দল খেলেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের এই দলের কোনো সম্পর্কই নেই। এটা পুরোপুরি ভিন্ন ধরনের দল। এমনকি ২০১৯ সাল থেকেও এই দল ভিন্ন। আমরা অবশ্যই আগের ব্যর্থতাগুলো থেকে শিখেছি। তবে এটা বলব, সেই সব ম্যাচ, ব্যর্থতাগুলো আমরা অতীতেই ফেলে এসেছি।’