‘এ তো শুধু পেশা নয়, নেশাও বটে।’
সত্যজিৎ রায়ের নায়ক সিনেমায় প্রধান চরিত্র অরিন্দম মুখার্জির (উত্তম কুমার) সংলাপ। আগামী মাসে ৪১ পূর্ণ করতে চলা ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসনের ক্ষেত্রেও খুব যায় কথাটি। অন্তত তাঁর দীর্ঘদিনের বোলিংসঙ্গী স্টুয়ার্ট ব্রড বলছেন অমনই। বয়স ৪০ পেরিয়ে গেলেও ইতিহাসের সফলতম পেসার অ্যান্ডারসন সাফল্য পেয়েই চলেছেন, বয়সের ভারে ধার হারিয়ে ফেলার বদলে দিন দিন আরও ধারালো হচ্ছে তাঁর বোলিং। অ্যান্ডারসনের এমন সাফল্য–খিদের রহস্য কী? ব্রড বলছেন, অ্যান্ডারসন এখনো ক্রিকেটের প্রতি দারুণ ‘আসক্ত’।
৬৮৫ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সফলতম বোলার অ্যান্ডারসন, ইতিহাসের সফলতম পেসার। এ বছর সবচেয়ে বয়স্ক বোলার হিসেবে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার রেকর্ডও গড়েছেন। এবার ক্যারিয়ারে দশম অ্যাশেজ খেলতে যাচ্ছেন অ্যান্ডারসন।
অ্যাশেজের আগে অবশ্য এবারও চোটের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল তাঁকে ঘিরে। কুঁচকির চোটে এ মাসের শুরুতে লর্ডসে হওয়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে খেলতে পারেননি তিনি। তবে ১৬ জুন এজবাস্টনে শুরু হতে যাওয়া অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের আগে অবশ্য ফিট হয়ে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে হওয়া সর্বশেষ অ্যাশেজে ৪ ওভার বোলিং করেই উঠে যেতে হয়েছিল তাঁকে চোটের কারণে।
তবে এবারের অ্যাশেজে খেলতে অ্যান্ডারসনের নাকি তর সইছে না, লিজেন্ডস অব অ্যাশেজ পডকাস্টে এমনই জানিয়েছেন ব্রড। এখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ‘নেশা’ অ্যান্ডারসনকে পেয়ে বসে, ব্রড মনে করেন, ‘জিমি দারুণ লড়াকু। এটিই তার মূল শক্তি। আমার মনে হয় যে খেলাই খেলুক না কেন, সে বোধহয় জস বাটলারকে বাদ দিলে আমার দেখা সবচেয়ে লড়াকু একজন। অ্যান্ডারসন দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী। সত্যি বলতে কী, সে ক্রিকেটে আসক্ত। সে অনুশীলনে আসক্ত। আরও ভালো করার, উন্নতি করার নেশা আছে তার।’
সতীর্থ পেসারে ব্রড রীতিমতো মুগ্ধই, ‘এটা তো এখন দেখাই যাচ্ছে। তার বয়স ৪০, কিন্তু চার বছর আগের চেয়েও সে এখন আরেকটু ভালো বলেই মনে হয়। এটা তার নিজের ও ক্রিকেটের প্রতি দারুণ একটি বার্তা।’
অ্যান্ডারসনের মতো অত বয়স না হলেও কম হয়নি ব্রডেরও। এ মাসে ৩৭ পূর্ণ করবেন তিনি। অ্যান্ডারসনের সঙ্গে এটি হতে যাচ্ছে ব্রডের নবম অ্যাশেজ সিরিজ। ১৩৪ টেস্টে দুজন মিলে নিয়েছেন ১০১৭টি উইকেট, ইতিহাসের সফলতম বোলিং জুটিও তারা।
অথচ সর্বশেষ অ্যাশেজের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাদ দেওয়া হয়েছিল দুজনকেই। অনেকেই তখন এ দুই পেসারের ক্যারিয়ারের শেষই ধরে নিয়েছিলেন। অধিনায়ক বেন স্টোকস ও প্রধান কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধীনে যে নতুন ধাঁচের টেস্ট খেলছে ইংল্যান্ড, অ্যান্ডারসন-ব্রড অবশ্য তার মধ্যে আছেন ভালোভাবেই।
স্টোকস ও ম্যাককালাম দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৩টি টেস্টের মধ্যে ১১টিতেই জিতেছে ইংল্যান্ড। এ সময়ে অ্যান্ডারসনেরও উন্নতি হয়েছে বলেই মনে করেন ব্রড, ‘বাজ (ম্যাককালাম) ও স্টোকসি (স্টোকস) দায়িত্ব নেওয়া পর গত এক বছরে অন্য যে কারও মতো তারও উন্নতি হয়েছে।’
দুজনের জুটির ‘রসায়নটা’ও খুলে বলেছেন ব্রড, ‘তার সঙ্গে নিজের জুটিকে আমি এভাবে দেখি—প্রথম ১০ ওভারে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চেয়ে দ্রুত কন্ডিশন বুঝতে পারা। তখনই আমরা ব্রেকথ্রু পাই এবং এটি যোগাযোগের মাধ্যমেই হয়। এটা ক্রমাগত একটা তথ্যপ্রবাহের মতো, এবং এটিই যে আমাদের জুটিকে পরের ধাপে নিয়ে গেছে, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।’