তরুণ বয়সে রাগবি লিগে খেলতেন জনি বেয়ারস্টো। এখনকার বেশির ভাগ ক্রিকেট দর্শকই যা দেখেননি। বুধবার ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া লর্ডস টেস্টের প্রথম দিনে সেই রাগবির দক্ষতাই দেখিয়েছেন বেয়ারস্টো। মাঠে ঢুকে পড়া এক ব্যক্তিকে কোলে তুলে নিয়ে প্রায় ৬০ গজ হেঁটে মাঠের বাইরে নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে তুলে দিয়ে এসেছেন। ছুটে যাওয়া ওই ব্যক্তির উদ্দেশ্য ছিল, পিচে কমলা রঙের পাউডার ছুড়ে দেওয়া, যাতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে খেলা বেশিক্ষণের জন্য বন্ধ হয়নি। খেলোয়াড়দেরও মাঠ ছাড়তে হয়নি। ম্যাচে বড় ধরনের ঝামেলা রুখে দেওয়ায় বেয়ারস্টোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ৩৩ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকে ‘হিরো’ বলে অভিহিত করেছেন ইংলিশ পেসার জশ টাং।
ঘটনাটি ছিল লর্ডস টেস্টের প্রথম দিনের দ্বিতীয় ওভারে। মাঠের মিডিয়া সেন্টার প্রান্ত থেকে বোলিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। এমন সময় লর্ডসের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড থেকে দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়েন দুই ব্যক্তি। তাঁদের টি-শার্টে লেখা ‘জাস্ট স্টপ অয়েল’। হাতে কমলা রঙের পাউডার। তাদের একজনকে পিচের দিকে ছুটে যেতে দেখে হাত বাড়িয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ও অস্ট্রেলীয় ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার।
আরেকজনকে ছুটে আসতে দেখে আগেভাগেই সামনে চলে যান বেয়ারস্টো। ওই ব্যক্তিকে দুই হাতে তুলে নিয়ে মাঠের বাইরে রেখে আসেন তিনি। তার আগেই অবশ্য ওই ব্যক্তি কিছু পাউডার ছিটিয়ে যান মাঠে, যা বেয়ারস্টোর গায়েও লাগে। এ সময় মাঠ পরিষ্কার করতে ও বেয়ারস্টো ড্রেসিংরুম থেকে জার্সি বদলে আসতে ৬ মিনিটের মতো খেলা বন্ধ ছিল।
পরে জাস্ট স্টপ অয়েলের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৬৯ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাও মাঠে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গ্যালারি থেকে বের হওয়ার পর নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে আটকে দেন। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, খেলায় বিঘ্ন ঘটানো ওই তিন ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
লর্ডসের কর্তৃপক্ষ মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) এক বিবৃতিতে ‘জাস্ট স্টপ অয়েল’ আন্দোলনকারীদের কর্মকাণ্ডে নিন্দা জানিয়েছে। জাস্ট স্টপ অয়েল যুক্তরাজ্যের পরিবেশবাদী সংগঠন, যারা দেশটিতে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।
যুক্তরাজ্যের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের খবরে বলা হয়, মাঠে ঢুকে পড়া আন্দোলনকারীকে থামাতে বেয়ারস্টোর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তাঁর মুখপাত্র এ বিষয়ে বলেন, লাখ লাখ মানুষকে আনন্দ দেয়, এমন অনুষ্ঠানকে লক্ষ্য করে এ ধরনের স্বার্থপর ও গেরিলা কৌশলের বিষয়ে সরকারকে ক্ষমতা দেখাতে হয়, যেখানে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী খুশি যে খেলাটি দ্রুত পুনরায় শুরু করা গেছে। তিনি নিরাপত্তাকর্মী, জনি বেয়ারস্টোর কর্মতৎপরতা এবং এগিয়ে আসা ইংল্যান্ডের অন্য খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
প্রথম দিনের খেলা শেষে বেয়ারস্টোকে ধন্যবাদ জানান তাঁর সতীর্থ জশ টাংও। মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা এই পেসার এক আন্দোলনকারীকে বেয়ারস্টোর তুলে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে বলেন, ‘জনি যা করা দরকার, করেছে। কে জানে, ওদের না আটকালে খেলা হয়তো বন্ধই হয়ে যেত। জনি এ ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও নায়কের মতো কাজ করেছে।’
ছুটে আসা ব্যক্তিদের সময়মতো না আটকাতে পারলে খেলা বন্ধ হতে পারত বলে মনে করেন ওয়ার্নারও। অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ওপেনার দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, জানতাম না। ওই সময় মনে হয়েছিল, ওরা উইকেটের ক্ষতি করতে পারে। যে কারণে আমাদের হস্তক্ষেপ দরকার। উইকেট রক্ষা করতেই আমরা ওদের আটকানোর চেষ্টা করেছি।’