বিতর্ক আর অ্যাশেজ যেন সমান্তরালে চলছে! বিতর্কের মাত্রা এতটাই বেশি যে, মাঠ ও মাঠের বাইরে মিলিয়ে কী ঘটেছে বলার চেয়ে ‘কী ঘটেনি এবার’ বলাই শ্রেয়। বিশেষ করে লন্ডনে কোনো ম্যাচ হলেই বাগ্বিতণ্ডা শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, লেগে যাচ্ছে দর্শকদের সঙ্গেও।
লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে যেমন জনি বেয়ারস্টোর আলোচিত স্টাম্পিং ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল বিখ্যাত লং রুমেও। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা মধ্যাহ্নভোজ বিরতিতে মাঠ ছেড়ে লং রুম দিয়ে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার সময় তাঁদের দুয়ো দেন ক্রিকেটের আইনপ্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সদস্যরা। কেউ কেউ ‘প্রতারক’ বলে চিৎকার করেন। কয়েকজন ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানোর প্রমাণ মেলায় এমসিসি পরদিনই তিন সদস্যকে নিষিদ্ধ করে।
লন্ডনের আরেক ভেন্যু ওভালে শেষ টেস্টেও ঘটেছে কথা-কাটাকাটির ঘটনা। এবার উসমান খাজা ও মারনাস লাবুশেনের সঙ্গে লেগে গেছেন ইংল্যান্ডের এক সমর্থক।
পরশু তৃতীয় দিনের খেলা শেষে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা ড্রেসিংরুমে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। ওই দিনই সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন স্টুয়ার্ট ব্রড। পরশুর সেই ঘটনার ভিডিও কাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল সেভেন নিউজের সাংবাদিক প্যাট ম্যাককরমিক। এরপরেই অ্যাশেজ ঘিরে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
গত শনিবার ওভালে সারা দিন ব্যাট করে ইংল্যান্ড। ‘বাজবল’ কায়দায় ৮০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩৮৯ রান। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বোলার-ফিল্ডারদের কঠিন এক দিন পার করতে হয়েছে। সাংবাদিক ম্যাককরমিকের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, খেলা শেষে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় স্ট্যান্ডে থাকা ইংল্যান্ডের এক সমর্থক খাজা ও লাবুশেনকে উদ্দেশ্য করে ‘তুমি বিরক্তিকর, তুমি বিরক্তিকর’ বলতে থাকেন।
কথাটা কানে আসতেই থেমে যান অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান। লডর্সের লং রুমের ঘটনার মতো এবারও প্রতিবাদের শুরুটা করেন খাজা। ওই দর্শককে বলেন, ‘থামো, শান্ত হও।’ লাবুশেন বলেন, ‘এই, কী বললে তুমি? আবার বলো।’ লাবুশেনের এই কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চান ওই দর্শক। এরপর লাবুশেন বলেন, ‘আমি না থামালে তুমি (অস্ট্রেলিয়ার) সবাইকে এ কথা বলতে।’
যাই হোক, জল আর বেশি দূর গড়ায়নি। এরপর খাজা ও লাবুশেন ড্রেসিংরুমে যান। তাঁদের কাছে ক্ষমা চাওয়া ওই দর্শকও অস্ট্রেলিয়ার বাকি খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে আর আপত্তিকর মন্তব্য করেননি। বরং মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউডকে ভালোভাবেই সম্বোধন করেন, ‘কী খবর মিচি (স্টার্কের ডাকনাম), কী খবর জশা (হ্যাজলউডের ডাকনাম)।’
কাল চতুর্থ দিনে আর ৬ রান যোগ করতেই অলআউট হয় ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়াকে দেয় ৩৮৪ রানের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য তাড়া করতে অস্ট্রেলিয়াকে ওভালে গড়তে হবে রেকর্ড। এই মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা ইংল্যান্ডের, সেই ১৯০২ সালে ১ উইকেট হাতে রেখে ২৬৩ রান তাড়া করে জিতেছিল আর্চি ম্যাকলারেনের দল।
১২১ বছর পর সেই রেকর্ডটা আজ অস্ট্রেলিয়া ভেঙে দিলেও দিতে পারে। মাঠের বাইরে শুধু দর্শককেই নয়, মাঠেও ভালোই জবাব দিচ্ছেন খাজা। কাল ওয়ার্নারকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ১৩৫ রান তুলে ফেলেছেন খাজা। দুজনই ফিফটি পূর্ণ করে অপরাজিত আছেন। ব্রডের বিদায়ের দিনে রেকর্ড গড়তে হলে অস্ট্রেলিয়ার দরকার আরও ২৪৯ রান।