দিল্লিতে রান হবে—এটা অনুমিতই ছিল। এই বিশ্বকাপে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে যে চারটি ম্যাচ হয়েছে, এর মধ্যে শতক হয়েছে ছয়টি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানও (৪২৮) এ মাঠে। এমন ব্যাটিং–স্বর্গেই আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
এমন উইকেটে লঙ্কানদের কম রানে থামাতে হলে নিয়মিত উইকেট নিতে হবে। সাকিব আল হাসানের দল সেটাই করার চেষ্টা করেছে। সে জন্য সব ধরনের সুযোগও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। এতটাই যে সুযোগ পেয়ে শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘টাইমড আউট’ও করেছে সাকিবের দল।
তবু লঙ্কানদের অল্প রানে থামাতে পারেনি বাংলাদেশ। চারিত আসালাঙ্কার শতকে শ্রীলঙ্কা ইনিংসের ৪ বল বাকি থাকতে ২৭৮ রানে অলআউট হয়। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন পেসার তানজিম হাসান। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শরীফুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান।
দিল্লির কন্ডিশনের পুরো সুবিধা নিতে আজ শ্রীলঙ্কার একাদশে ফিরিয়ে আনা হয় দ্রুত রান তোলার জন্য পরিচিত কুশাল পেরেরা। বাঁহাতি ওপেনারকে আউট করার জন্য বিশেষ পরিকল্পনাও ছিল বাংলাদেশের। কাট, পুল ভালো খেলেন বলেই হয়তো পেরেরাকে ইনিংসের শুরু থেকেই অনেক বাইরে বল করছিলেন বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম। সেটি করতে গিয়ে একটি বাউন্ডারি খরচ করলেও প্রথম ওভারেই পেরেরাকে আউট করেন বাঁহাতি পেসার।
তবে পেরেরাকে ৪ রানে আউট করার কৃতিত্বটা যতটা না শরীফুলের, তার চেয়ে বেশি উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের। সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বল পেরেরার ব্যাট ছুঁয়ে যায় প্রথম স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেনের দিকে। মুশফিক ঝাঁপিয়ে নাজমুলের সামনে থেকে অবিশ্বাস্য ক্যাচ লুফে নেন। দলীয় ৫ রানের সময় প্রথম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় উইকেট পতনেও ছিল শরীফুলের অবদান।
ইনিংসের ১২তম ওভারে তিনে নামা কুশল মেন্ডিস সাকিব আল হাসানের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ তোলেন। শরীফুল সেখানে ক্যাচ লুফে নেওয়া ৩০ বলে ১৯ রানে থামে লঙ্কান অধিনায়কের ইনিংস। কুশলকে অবশ্য আরও আগেই আউট করার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল।
মোস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় আজকের ম্যাচে সুযোগ পাওয়া পেসার তানজিম হাসান তাঁর প্রথম স্পেলে দারুণ বল করছিলেন, কুশল ও ওপেনার পাথুন নিশাঙ্কা তাঁর বোলিংয়ে বেশ কয়েকবার স্লিপে ক্যাচ তোলেন। কিন্তু লঙ্কানদের ভাগ্য ভালো, তানজিমের বোলিংয়ে কোনো ফিল্ডার না থাকায় রক্ষা। তবে সেটা বেশিক্ষণের জন্য নয়। ১৩তম ওভারে করা তানজিমের বোলিংয়েও ‘প্লেড অন’ হন নিশাঙ্কা। আউট হওয়ার আগে ৩৬ বল খেলে ৪১ রান করেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার রান তখন ১২.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৭২ রান। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারালেও সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিত আসালাঙ্কা জুটি গড়ে রান বাড়াতে থাকেন। দিল্লির উইকেটের সুবিধা নিয়ে ঝুঁকিহীন ক্রিকেট খেলে ওভারপ্রতি ৬-এর কাছাকাছি রান রেটে ব্যাটিং করছিলেন দুজন। ২৫তম ওভারে এসে সামারাবিক্রমাকে (৪২ বলে ৪১ রান) আউট করেন সাকিব। দুজনের ৬৯ বলে ৬২ রানের জুটি ভাঙে তাতে।
বিতর্কিত মুহূর্তটা ঘটে এর পরেই। সামারাবিক্রমা আউট হওয়ায় নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে আসেন অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। কিন্তু তিনি যে হেলমেট নিয়ে ক্রিজে এসেছিলেন, সেটির স্ট্র্যাপ ছিল ছেঁড়া। তাই ড্রেসিংরুমে ইশারায় নতুন হেলমেট চাইলেন তিনি। ক্রিজে আসা, নতুন হেলমেটের জন্য ডেকে পাঠানো, পুরো প্রক্রিয়ায় একটু বেশিই সময় লেগে যায়। এই সুযোগে ম্যাথুসের বিপক্ষে ‘টাইমড আউটের’ আবেদন করেন সাকিব। আম্পায়ারও ম্যাথুসকে আউট ঘোষণা করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টাইমড আউটের ঘটনা এটি।
শ্রীলঙ্কার রান তখন ৫ উইকেটে ১৩৫। সামারাবিক্রমার পর ম্যাথুস—জোড়া ধাক্কার পর সেখান থেকে শ্রীলঙ্কার ইনিংসটাকে টেনে তুলতে হতো। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার (৩৪) সঙ্গে ৭৮ রানের জুটি গড়ে সে কাজ দারুণভাবে করেছেন আসালাঙ্কা। মিরাজের বলে ধনাঞ্জয়া স্টাম্পিংয়ের শিকার হলে মহেশ তিকসেনাকে (২২) নিয়ে আরও ৪৫ রান যোগ করেন এই বাঁহাতি। ছোট ছোট জুটি গড়ে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে শতকও ছুঁয়ে ফেলেন আসালাঙ্কা। ১০৫ বলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০৮ রান করে তানজিমের বলে আউট হন তিনি। শ্রীলঙ্কার রান তখন ২৭৮। সেখান থেকে দ্রুত পরের ২ হারিয়ে ২৭৯ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা।