দৃশ্যটা এখন নিয়মিতই হয়ে গেছে।
মাইলফলক স্পর্শ করে ব্যাট উঁচিয়ে ধরছেন সৌদ শাকিল। পাকিস্তানের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এমন একটি মুহূর্তের জন্ম দিলেন আজও। কলম্বো টেস্টের তৃতীয় দিনে আসিথা ফার্নান্দোকে কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে পঞ্চাশ পূর্ণ করেছেন তিনি।
আর এই ফিফটিতেই টেস্ট ইতিহাসে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন শাকিল। ক্যারিয়ারের প্রথম সাতটি টেস্টেই ফিফটি করা প্রথম ব্যাটসম্যান তিনি। ছাড়িয়ে গেছেন প্রথম ছয় টেস্টে ফিফটি করা ভারতের সুনীল গাভাস্কার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাসিল বুচার, পাকিস্তানের সাঈদ আহমেদ ও নিউজিল্যান্ডের বার্ট সাটক্লিফের যৌথ রেকর্ড।
২৭ বছর বয়সী শাকিলের টেস্ট অভিষেক হয় গত বছরের ডিসেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন শাকিল। একই দলের বিপক্ষে পরের টেস্টের দুই ইনিংসে করেন ৬৩ ও ৯৪ রান। আর করাচির তৃতীয় টেস্টে খেলেন ২৩ ও ৫৩ রানের ইনিংস। প্রথম সিরিজের এমন দারুণ পারফরম্যান্সের ছন্দ ধরে রাখেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের সিরিজেও। করাচিতে হওয়া দুই টেস্টের চার ইনিংসে খেলেন যথাক্রমে ২২, ৫৫*, ১২৫* ও ৩২ রানের ইনিংস।
পঞ্চম টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়া শাকিল এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে খেলতে নেমে তুলে নেন ডাবল সেঞ্চুরি। গলের প্রথম ইনিংসে তাঁর ২০৮ রানের অপরাজিত ইনিংসটি ছিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ ইনিংস। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডে জহির আহব্বাসের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম অ্যাওয়ে সিরিজে ডাবল সেঞ্চুরিও।
তবে ক্যারিয়ারের প্রথম ছয় টেস্টে অন্তত একটি করে পঞ্চাশ বা তার বেশি রানের ইনিংস শাকিলের আগে আরও ৪ ব্যাটসম্যানের ছিল। এর মধ্যে গাভাস্কারের শুরুটা ছিল সবচেয়ে ভালো। ভারতীয় কিংবদন্তি ১৯৭১ সালে টেস্টে অভিষেকের পর প্রথম ছয় টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন। শুধু পঞ্চাশোর্ধ্ব বললে অবশ্য গাভাস্কারের দুর্দান্ত শুরুটা বোঝানো যায় না, প্রথম ছয় টেস্টের ১২ ইনিংসের ৫টিতে ফিফটির পাশাপাশি তাঁর ছিল ৩টি সেঞ্চুরি।
৩৪ টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক গাভাস্কার ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট খেলেছিলেন ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৬ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরেছিলেন ‘ডাক’ নিয়ে। ১৯৪৭–৬৫ সময়ে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৪২টি টেস্ট খেলা বার্ট সাটক্লিপের দশাও ছিল একই রকম। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান প্রথম ছয় টেস্টের মধ্যে সাতবার পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস খেলার পর সপ্তম টেস্টে আউট হয়ে গিয়েছিলেন যথাক্রমে ২০ ও ১১ রানে, ম্যাচটি হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে।
সপ্তম টেস্টে ফিফটির দৌড় থেমে যাওয়া বাকি দুটি ঘটনাই ছিল ঢাকার মাটিতে, কাকতালীয়ভাবে একই ম্যাচে। ১৯৫৯ সালের মার্চে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়াম (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান–ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আগের ছয় টেস্টেই অন্তত একটি পঞ্চাশ+ ইনিংস খেলা সাঈদ আহমেদ পাকিস্তানের হয়ে আর বাসিল বুচার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন। সাঈদ প্রথম ইনিংসে ৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২২–এ থেমে যান। আর বুচার আউট হন ১১ ও ৮ রান করে।
সাঈদ, বুচার ও সাটক্লিপ থেকে শুরু করে গাভাস্কারও যা পারেননি, আজ কলম্বোয় সেটিই করে দেখান শাকিল। ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম।