নিউজিল্যান্ড সফরে নাজমুল হোসেনের শুরুটা একদম ভালো হয়নি। ব্যাটিং ভালো হচ্ছিল না, অধিনায়কত্বও। বৃষ্টির কারণে সংক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া সে ম্যাচে মূল বোলারদের আগে বোলিং করিয়ে ফেলায় শেষের দিকে অনিয়মিতদের দিয়ে বোলিং করাতে হয়েছিল। ম্যাচ হারে হিসাবের এই গড়মিলই যথেষ্ট ছিল। এরপর সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য নাজমুলের কিছু করার ছিল না। নিউজিল্যান্ডের দাপুটে পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে রীতিমতো উড়িয়ে দেয়।
তবে নিজের ভুল শুধরে নিতে নাজমুল বেশি সময় নেননি। তৃতীয় ম্যাচে সবাই দেখতে পেল নাজমুলের ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক কতটা তুখোড়। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে কন্ডিশন বুঝে বোলিং পরিবর্তন থেকে শুরু করে ফিল্ডিং সাজানোয় নাজমুলকে লেটার মার্কস দিতেই হয়।
পরে ব্যাট হাতেও আলো ছড়িয়েছে নাজমুলের ব্যাট। নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে হারানোর পেছনে পেসারদের সরাসরি ভূমিকা আছে ঠিকই। তবে কোন পেসার কখন কার্যকর হতে পারেন, সে সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছে নাজমুলকে।
এই যেমন তানজিম হাসানের প্রথম স্পেলে হেনরি নিকোলস ও রাচিন রবীন্দ্র আউট হলেও উইল ইয়াং ও টম ল্যাথামের ৩৬ রানের জুটি নিউজিল্যান্ডকে বিপদ থেকে উদ্ধারের আভাস দিচ্ছিল। নাজমুলের হাতে তখন উইকেট শিকারের হাতিয়ার নেই বললেই চলে। মূল স্ট্রাইক বোলার শরীফুল ইসলামের প্রথম স্পেলটা ভালো যায়নি। তানজিমের প্রথম স্পেল মাত্রই শেষ হলো। আরেক পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে অতটা ভয়ংকর মনে হচ্ছিল না।
কিন্তু নাজমুল জানতেন, ওই জুটি ভাঙতে না পারলে নিউজিল্যান্ডকে আর থামানো যাবে না। তাই নিজের মূল বোলার শরীফুলের ওপর আস্থা রেখে ড্রিংকস ব্রেকের পর দ্বিতীয় স্পেলের জন্য তাঁকে বোলিংয়ে ফিরিয়ে আনেন। শরীফুল সেই স্পেলে ল্যাথাম, ইয়াং ও মার্ক চ্যাপম্যানকে আউট করে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন। বাঁহাতি পেসারের সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। এ তো গেল শরীফুলের কথা। সৌম্য সরকারের মিডিয়াম পেস থেকেও তিনি ৩ উইকেট আদায় করে নিয়েছেন।
ম্যাচ শেষে নাজমুলই বললেন, ‘উইকেটে কোনো পাশ থেকে বাড়তি কোনো সহায়তা ছিল না। শুধু কৌশলগত পরিবর্তন করা হয়েছে। সকালে (উইকেটে) পেস বোলারদের অনেক সহায়তা ছিল। আমি এটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি, কতক্ষণ পেস বোলারদের চালু রাখা যায়। আলাদা কোনো সহায়তা ছিল না উইকেটে।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে নাজমুল বলেছেন, ‘পুরো সিরিজে আমরা প্রক্রিয়া মেনে চলার চেষ্টা করেছি। লম্বা সময় ধরে ভালো বোলিং করায় উইকেট অটোমেটিক পড়ছিল। ১০০ বা ৯৮ রানে অলআউট করে ফেলব—এমন আশা নিয়ে আসিনি। ভালো জায়গায় কত লম্বা সময় ধরে বল করতে পারি—এটাই পরিকল্পনা ছিল। বোলাররা এটাই করেছে। আগের দুই ম্যাচ হারের পর বোলাররা যেভাবে কামব্যাক করেছে, খুবই গর্ববোধ হচ্ছে।’
পরিকল্পনা কাজে লাগার অনুভূতিটাও প্রকাশ করেছেন তরুণ অধিনায়ক, ‘জিততে পেরে ভালো লাগছে। আমার পরিকল্পনা আজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। সবচেয়ে বড় কথা দল জিতেছে।’