টি–টোয়েন্টি সিরিজের আগে কাল অনুশীলনে লিটন–সাকিবরা
টি–টোয়েন্টি সিরিজের আগে কাল অনুশীলনে লিটন–সাকিবরা

ইংল্যান্ডের ‘পরীক্ষামূলক দল’ নেবে বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি পরীক্ষা

সাদা বলের দুই বিশ্বকাপেরই চ্যাম্পিয়ন ওরা। তারপরও যদি প্রশ্ন হয়—ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দল আর টি-টোয়েন্টি দলের মধ্যে কোনটা বেশি ভালো?

বাংলাদেশের দুই দলের মধ্যে কোনটি ভালো, এটা কোনো প্রশ্নই নয়। প্রশ্ন নয় উত্তরটা সবারই জানা বলে। দুই সিরিজের প্রথমটিতে বাংলাদেশকে যে সামান্য এগিয়ে রাখা যাচ্ছিল, তার কারণও ওটাই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে সেই কারণ, দেশের মাটিতে টানা সাতটি ওয়ানডে সিরিজ জয়। সেই জয়ের ধারায় যে ছেদ পড়েছে, এটা তিন দিনের বাসি খবর।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এমন জয়ের ধারা-টারা বলে তেমন কিছু নেই। এই সংস্করণটা এত বছর পরও বাংলাদেশের কাছে এমনই দুর্বোধ্য হয়ে আছে যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন না হলেও ইংল্যান্ডই হয়তো ফেবারিট থাকত। কিন্তু ওই প্রশ্নের উত্তরটা কী হবে! ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির মধ্যে কোনটিতে ইংল্যান্ড বেশি ভালো?

র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলের সুইমিংপুলের পাশে জাকুজ্জির গরম জলে গা ডুবিয়ে বসে থাকা তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ একটুও না ভেবে বলে দিলেন, টি-টোয়েন্টিতেই ইংল্যান্ড বেশি ভালো। উত্তরটা যেভাবে ঠোঁটের ডগায় এসে ছিল, তাতে অনুমান করতে সমস্যা হলো না, শক্তির এই বিচারটা তাঁরা করছেন সম্ভবত বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে। ওয়ানডের ইংল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে মোটেই অজেয় কোনো শক্তি নয়, টি-টোয়েন্টিতে যেখানে অনেকটা সে রকমই।

সাকিব ও কোচ হাথুরুসিংহের কৌশলে তাকিয়ে বাংলাদেশ

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সরাসরি উত্তর দিলেন না। তবে যে পার্থক্যটার কথা বললেন, তাতে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলই একটু এগিয়ে থাকে। আগামী অক্টোবরেই ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ বলে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দল মোটামুটি গোছানো হয়ে গেছে। টি-টোয়েন্টি দল যেখানে যাচ্ছে, সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। হাথুরুসিংহের ভাষায়, ইংল্যান্ডের এই টি-টোয়েন্টি দলটা ‌‘পরীক্ষামূলক দল’। আজ চট্টগ্রামে শুরু তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে কি তাহলে বাংলাদেশের জন্য কোনো আশা আছে?

দুই দলের টি-টোয়েন্টি ইতিহাস কী বলে! কিছুই বলে না। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ তো এটাই প্রথম। বিস্ময়করই বলতে হবে, এতগুলো বিশ্বকাপে একসঙ্গে খেলার পরও টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের দেখাই হয়েছে মাত্র একবার। সেটি বিশ্বকাপেই। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ।

গত অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় পরের বিশ্বকাপটা জেতার পর আজই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের প্রথম ম্যাচ। বিশ্বকাপজয়ী সেই দলে অবশ্য অনেক পরিবর্তন। স্কোয়াডে পাঁচটি, বিশ্বকাপ ফাইনালের একাদশে চারটি। স্কোয়াডে পরিবর্তনটা কাকতালীয়ভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। বিশ্বকাপ দলের পাঁচজনের বিকল্প হয়ে যাঁরা বাংলাদেশের এই দলে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনজনের এখনো টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়নি। তৌহিদ হৃদয়, রেজাউর রহমান ও তানভীর ইসলামের মধ্যে প্রথমজনের হয়তো আজ হয়ে যাবে।

বলতে গেলে প্রতি ম্যাচেই যেখানে কারও না কারও অভিষেক হয়, এটা এমন কোনো বড় খবর নয়। বড় খবর হবে আভাস সত্যি প্রমাণ করে রনি তালুকদার যদি খেলেন। বাংলাদেশের হয়ে একটাই ম্যাচ খেলেছেন এর আগে। ২০১৫ সালের ৭ জুলাই মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই ম্যাচটাও ছিল টি-টোয়েন্টি। প্রায় আট বছর আগে সেই ম্যাচের বাংলাদেশ দল থেকে এখানেও আছেন শুধু তিনজন—সাকিব, লিটন আর মোস্তাফিজ।

কাল পাওয়ার হিটিংয়ের অনুশীলনে সতীর্থদের সঙ্গে রনি তালুকদার (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)

৭ নম্বরে নেমে ২২ বলে ২১ করার পর রনি কেন আর সুযোগ পাননি, এটা হাথুরুসিংহে ঠিক মনে করতে পারলেন না। এত দিন আগের কথা বলেই। নইলে তখন তো তিনিই কোচ, সঙ্গে বকলমে নির্বাচকও। বাংলাদেশের ইনিংসে রনির চেয়ে বেশি রানও করেছিলেন মাত্র একজনই। যাঁর কথা ওঠায় হাথুরুসিংহে কালও বললেন, ‘ড্যাম গুড প্লেয়ার’। নামটা হয়তো অনুমান করে ফেলেছেন—সৌম্য সরকার। বাংলাদেশের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া পাঁচজনের একজন।

ও হ্যাঁ, রনি তালুকদার খেললে কেন তা বড় খবর হবে, এটা তো বলাই হয়নি। রনির অভিষেক ম্যাচের পর মাঝখানে ঠিক ১০০টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ম্যাচের হিসাবে এত লম্বা বিরতি পড়েছে মাত্র একজনেরই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেভন টমাস মাঝখানে ১০২ ম্যাচে দর্শক হয়ে থাকার পর আবার টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছিলেন। সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচে না খেলে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে নামলেই রেকর্ডটা ছুঁয়ে ফেলবেন রনি। তবে এ রেকর্ড ছোঁয়াটা কি আর রনির কাছে আজই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার চেয়ে অগ্রাধিকার পাবে? প্রশ্নই আসে না।

এ সফরে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি দলে তেমন পার্থক্য নেই। নতুন যোগ হয়েছেন শুধু বেন ডাকেট ও ক্রিস জর্ডান। আর সাদা বলে তো ইংল্যান্ডের একজনই অধিনায়ক। ওয়ানডেতেও ইংল্যান্ড জস বাটলারের দল, টি-টোয়েন্টিতেও। বাংলাদেশ দলের ‌‘মালিকানা’ যেখানে বদলে গেছে। তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর কেউই আর নেই বলে এটি আরও বেশি করে সাকিবের দল। কাল সকালে বাংলাদেশ দলের প্র্যাকটিসে যা আরও বেশি বোঝা গেল সাকিবের তৎপরতায়।

কাল অনুশীলনে মনোযোগ ঢেলে দিয়েছিলেন সাকিব

সেই তৎপরতা অবশ্য মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকল। সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কের আসাটা মোটামুটি নিয়ম হলেও সাকিব এলেন না। সংবাদমাধ্যমকে কেন যেন একটু এড়িয়েই চলছেন। আসেননি দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স আর মাইলফলক ছোঁয়ার তৃতীয় ওয়ানডের পরও। ওই ম্যাচের পরদিন হোটেলে প্রায় চার–পাঁচ ঘণ্টা লেগে থাকার পরও একটা ‘অফিশিয়াল কোট’ বের করা যায়নি মুখ থেকে। সাক্ষাৎকার তো আর কখনোই দেবেন না বলে ঘোষণা করে দিলেন।

আজকের ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে কি আসবেন? অধিনায়ক হিসেবেই আসতে পারেন, আসতে পারেন সঙ্গে অন্য কোনো উপলক্ষ যোগ করেও। যে উইকেটে বাংলাদেশকে ওয়ানডে জিতিয়েছেন, আজকের প্রথম টি-টোয়েন্টিও সেই একই উইকেটে।

কী সাকিব, আরেকবার অমন কিছু হবে নাকি?