২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফির উত্তেজনাময় ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জিতেছিল বাংলাদেশ
২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফির উত্তেজনাময় ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জিতেছিল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ–শ্রীলংকা

সেই চার জয় আর একটি ২ রানের আক্ষেপ

দুই দলই রীতিমতো ‘প্রহৃত’ হয়েছে আফগানদের কাছে। বাংলাদেশ হেরেছে ৭ উইকেটে, শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে।

এশিয়ান ক্রিকেটের নবীন দেশটির কাছে হেরে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা উভয় দলের এখন বাঁচামরার পরিস্থিতি। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে উঠতে হলে জেতা ছাড়া বিকল্প নেই, হারলেই দেশের উদ্দেশে দুবাই বিমানবন্দরের পথ ধরতে হবে।

এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ১২ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যার ৩ ভাগের ২ ভাগ, অর্থাৎ ৮ বারই জিতেছে লঙ্কানরা; বাংলাদেশ জিতেছে ৪ বার। বাংলাদেশ ৪টি জয় পেয়েছে আবার দুই দলের শেষ আট লড়াইয়ে। আজ ১৩তম বারের মতো যখন দেখা হবে দুই দলের, তার আগে চোখ বোলানো যাক বাংলাদেশের চার জয় আর আক্ষেপের একটি হারে।

১৬ মার্চ, ২০১৮, কলম্বো
নিদাহাস ট্রফির এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা করে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান। রানতাড়ায় বাংলাদেশ জয় পায় ২০তম ওভারের পঞ্চম বলে, হাতে উইকেট ছিল মাত্র ২টি।

স্কোরকার্ড অবশ্য কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ম্যাচটির আসল চিত্র বোঝাতে পারছে না। শেষ ওভারে বল-রানের টানাটানির উত্তেজনা তো ছিলই, ছিল মাঠের বাইরের উত্তাপও। ৬ বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১২ রান।

ইসুরু উদানার ওভারটিতে স্ট্রাইকে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম ২ বলে রান তো নিতে পারেনইনি, উল্টো রানআউট হয়ে যান। কাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়া বলে ‘নো’ আবেদন করলেও সাড়া দেননি আম্পায়ার।

ম্যাচজুড়ে আম্পায়ারের একাধিক সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তখন মাঠে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও রুবেল হোসেনকে খেলা বন্ধ করে ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে বলেন। কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে থাকে খেলা।

এরপর খেলা শুরু হলে মাহমুদউল্লাহ তৃতীয় বলে ৪ আর চতুর্থ বলে ২ রান তুলে ফেলেন। পঞ্চম বলে জয় এনে দেন স্কয়ার লেগ দিয়ে ছয় হাঁকিয়ে। ম্যাচের উত্তেজনাময় পরিস্থিতি পার করে জয় তুলতে পারার অতি উচ্ছ্বাসে গোটা বাংলাদেশ দল নাগিন নাচ-এ উদ্‌যাপন করতে শুরু করে।

১০ মার্চ, ২০১৮, কলম্বো
বাংলাদেশ জিতেছে ৫ উইকেটে, তবে জয়টি আসে মাত্র ২ বল বাকি থাকতে। প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা তোলে ৬ উইকেটে ২১৪ রান। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ২০০ বা তার বেশি রান তাড়া করে টি-টোয়েন্টি জেতেনি।

প্রতিপক্ষের মাঠে লক্ষ্যটা তাই বড়সড়ই ছিল। তবে লিটন দাস-তামিম ইকবাল মিলে উদ্বোধনী জুটিতে জয়ের ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে যান। ৩৫ বল স্থায়ী জুটিতে ৭৪ রান তুলে ফেলেন দুজনে। তাঁদের বিদায়ের পর হাল ধরেন ৪ নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিম।

৩৫ বলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে জেতানোর পর মুশফিকের উল্লাস।

প্রায় একা হাতে দলকে টেনে নিয়ে যান শেষ পর্যন্ত। ম্যাচের শেষ ওভারে থিসারা পেরেরার চার বল থেকে ৯ রান নিয়ে যখন দলের জয় নিশ্চিত করেন, তাঁর নামের পাশে তখন ৩৫ বলে ৭২ রান; যে ইনিংস গড়া ৫ চার আর ৪ ছয় দিয়ে।

৬ এপ্রিল, ২০১৭, কলম্বো
দুই টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টি ছিল এটি। আগেরটিতে জিতে এগিয়ে ছিল শ্রীলঙ্কা। সিরিজ হার এড়ানোর ম্যাচটিতে সাকিব একাই হারিয়ে দেন লঙ্কাকে। প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ তোলে ৯ উইকেটে ১৭৬।

ইমরুল কায়েস-সৌম্য সরকারের উদ্বোধনী জুটিই এনে দেয় ৭১ রান। ইমরুল ৩৬ আর সৌম্য ৩৪ রান করে আউট হয়ে গেলে সাকিব টেনে নেন বাকিটা, খেলেন দলীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রানের ইনিংস। এরপর বল হাতেও নেতৃত্ব দেন এই অলরাউন্ডার।

বোলিং ওপেন করে ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট, শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় ১৩১ রানে। বাংলাদেশ জেতে ৪৫ রানের বড় ব্যবধানে। এটিই ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, মিরপুর
এই ম্যাচের আগে চারবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলে সব কটিতে হেরেছিল বাংলাদেশ। হারের ধারা ভাঙে এশিয়া কাপের এই ম্যাচ দিয়ে। সাব্বির রহমানের ৫৪ বলে ৮০ রান আর সাকিবের ৩৪ বলে ৩২ রানে ভর করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৭ রান তোলে বাংলাদেশ দল।

রানতাড়ায় ১ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু আল আমিন হোসেনের পেস আর সাকিবের স্পিন আক্রমণের মুখে এরপর আর খেলার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি তারা, ২০ ওভার ব্যাটিং করলেও আটকে যায় ৮ উইকেটে ১২৪ রানে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কাকে হারায় ২৩ রানে।

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, চট্টগ্রাম
কুশল পেরেরার ৬৪ আর নুয়ান কুলাসেকারার ৩১ রানের সৌজন্যে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে দিয়েছিল ১৬৯ রানের লক্ষ্য। ভালো শুরু এনে দেওয়া তামিম ও শামসুর রহমান আউট হয়ে গেলেও ভরসা হয়ে মাঠে ছিলেন এনামুল হক।

৩ নম্বরে নামা এই ডানহাতি সপ্তম ওভার থেকে ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত ক্রিজেও ছিলেন; কিন্তু মাত্র ২ রানের জন্য দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। তাঁর রয়েসয়ে খেলা ব্যাটিংয়ের কারণে শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১৭ রানে।

২০১৪ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে ফিফটি করলেও ম্যাচ জেতাতে পারেননি এনামুল হক

এমন কঠিন সমীকরণ সহজের পর্যায়ে নামিয়েও আনেন তিনি নিজেই। থিসারা পেরেরার প্রথম পাঁচ বলের তিনটিতে চার মেরে আরেকটিতে ডাবল নিয়ে শেষ বলে প্রয়োজন নামিয়ে আনেন ৩ রানে।

জয় যখন নাগালে প্রায়, তখন কোমর উচ্চতার কাছাকাছি ফুলটসে টাইমিং গড়বড় করে ফেলেন এনামুল, ক্যাচ দেন থিসারার হাতেই। ৪৫ বলে ৫৮ রান করেও তাঁকে মাঠ ছাড়তে হয় হার নিয়ে।