পাকিস্তানের এই দলটির ওপর কোনো আস্থা নেই রশিদ লতিফের
পাকিস্তানের এই দলটির ওপর কোনো আস্থা নেই রশিদ লতিফের

পাকিস্তান দল ভেঙে গেছে, দাবি রশিদ লতিফের

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নিজেদের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু দেশটির ক্রিকেটে সুদিন ফেরা দূরে থাক, বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে তারা।

এমন বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ও খেলোয়াড়দের সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করছেন সাবেকেরা। পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান ও পিসিবির সাবেক চেয়ারম্যান রমিজ রাজা যেমন বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের ধবলধোলাই হওয়াকে তাঁর ভাষায় বলেছেন, ‘পাকিস্তানকে শুইয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।’ আরেক সাবেক ক্রিকেটার বাসিত আলী গতকালের হারকে বলেছেন পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘কালো দিন’।

এবার ক্ষোভ উগরে দিলেন রশিদ লতিফও। পাকিস্তানের সাবেক এ অধিনায়কের দাবি, বর্তমান দলটি ভেঙে পড়েছে। দলে কোনো ধরনের ঐক্য নেই। দলে এমন ভাঙন ধরানোর জন্য তিনি পিসিবির সাবেক চেয়ারম্যান জাকা আশরাফকে দায়ী করেছেন। গত জানুয়ারিতে আশরাফ পদত্যাগ করলেও মহসিন নাকভির নেতৃত্বাধীন বোর্ডের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ তাঁর চাওয়াতেই হয়েছে বলেও দাবি করেছেন লতিফ।

অনলাইনে ক্রিকেটবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান ‘কট বিহাইন্ড’-এ ৫৫ বছর বয়সী লতিফ আজ জাকা আশরাফকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার বানানো পাকিস্তান দল ভেঙে পড়েছে। গত চার বছরে যাঁরা (বোর্ডের) চেয়ারম্যান হয়েছেন, তাঁরা সবাই পাকিস্তান ক্রিকেটকে ধ্বংস করেছেন।’

গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপেরও প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নেয় পাকিস্তান। ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে দেশে ফেরার পরপরই সব সংস্করণের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন বাবর আজম। বাবরের জায়গায় টি-টোয়েন্টিতে শাহিন আফ্রিদি ও টেস্টে শান মাসুদের হাতে নেতৃত্বভার তুলে দেন জাকা আশরাফ। পরবর্তী সময় বাবরকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বে ফেরানো হলেও মাসুদকে টেস্ট নেতৃত্ব থেকে সরানো হয়নি।

সম্প্রতি স্থানীয় এক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতৃত্ব বদলের প্রসঙ্গে আশরাফ বলেন, ‘বাবরের জায়গায় আফ্রিদি ও মাসুদকে অধিনায়ক বানানোয় দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সৃষ্টি হয়নি; বরং দল আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’ এমনকি মাসুদের নেতৃত্বে পাকিস্তান টানা ৫ টেস্টে হারের (বাংলাদেশের বিপক্ষে ২টি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩টি) পরও তাঁকে অধিনায়ক বানানোর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে সাক্ষাৎকারে দাবি করেন আশরাফ।

বাবর আজমকে অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করতে জাকা আশরাফ জোরজবরদস্তি করেছিলেন বলে দাবি রশিদ লতিফের

তবে ‘কট বিহাইন্ড’ অনুষ্ঠানে রশিদ লতিফ দাবি করেছেন, বাবর সদিচ্ছায় নেতৃত্ব ছাড়েননি; আশরাফই তাঁকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছেন, ‘বাবরকে সরিয়ে মাসুদকে টেস্ট অধিনায়ক বানালেন কে? পাকিস্তান দলে ভাঙন ধরিয়েছেন কে? দেশের ক্রিকেটের সংকটকালে তিনি কী করছেন? শুধু সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’

দল গঠন প্রক্রিয়ার দায়িত্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের নয়, নির্বাচকদের বলে মনে করেন পাকিস্তানের হয়ে ৩৭টি টেস্ট ও ১৬৬টি ওয়ানডে খেলা লতিফ, ‘দল সাজানোর কাজ কার, জাকা আশরাফের নাকি মিসবাহ-উল-হকের (পিসিবির কারিগরি কমিটির প্রধান)? আশরাফই যদি সবকিছু করেন, নিজেই দল সাজিয়ে দেন, অধিনায়ক বানান, তাহলে (দল ব্যর্থ হলে) তিনি কাকে দায়ী করবেন—বাবর আজমকে? বাবরকে অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করতে তিনি জোরজবরদস্তি করেছেন। এর পর থেকেই দলীয় সংহতি নষ্ট হতে শুরু করেছে। আপনিই নিজ স্বার্থে শান মাসুদকে অধিনায়ক বানিয়েছিলেন। আর এখন আপনার দল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।’

লতিফ আরও বলেছেন, ‘আপনি এমনভাবে বোর্ড গড়ে তুলেছেন যে যাবতীয় ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দিয়েছেন। অথচ তাঁরা ক্রিকেট সম্পর্কে কিছুই জানেন না।’

আজ সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে পিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সবার নাম-পরিচয় ও পদবি তুলে ধরেন লতিফ। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তান ও তাদের ক্রিকেট বোর্ড। তাঁরা নাকি একেকজন কিংবদন্তি। অথচ তাঁরা ক্রিকেটের ধারেকাছেও নেই।’

পাকিস্তানের সামনে আরও বড় পরীক্ষা। আগামী অক্টোবরে নিজেদের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে তারা। বেন স্টোকস–জো রুটদের বিপক্ষেই ২০২২ সালে ৩–০ ব্যবধানে হেরেছিল পাকিস্তান, যা দেশের মাটিতে তাদের প্রথমবার ধবলধোলাই হওয়ার ঘটনা।