মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার তালিকার নাম এগুলো। শীর্ষে থাকা মাহমুদউল্লাহ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে মেরেছেন ৭২টি ছক্কা। ৫৫ ছক্কা মেরে দুইয়ে থাকা লিটনের ক্যারিয়ার ৯ বছরের। ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে ৫২ ছক্কা নিয়ে তৃতীয় সাকিব। সৌম্য (৫২) অবশ্য ৯ বছরের ক্যারিয়ারেই ধরে ফেলেছেন সাকিবকে। তামিম ২০২০ সালের পর আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেননি। এই সংস্করণে ১৩ বছর খেলে তাঁর ছক্কা ৪৪টি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অবসরে যাওয়া আরেক ব্যাটসম্যান মুশফিক ১৬ বছরে মেরেছেন ৩৭টি।
ভাবছেন, হুট করে ছক্কার খতিয়ান কেন? কারণটা পরের অনুচ্ছেদে।
তাওহিদ হৃদয়ের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বয়স ১ বছর ৩ মাস। এর মধ্যে ২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ২০ ইনিংসে ব্যাটিং করে মেরেছেন ২২টি ছক্কা। ইনিংসপ্রতি ১.১টি ছক্কা হৃদয়ের। ওপরের নামগুলোর মধ্যে কারোরই গড়ে ইনিংসে ১টি ছক্কাও নেই।
তবে এতে সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললে ভুল হবে। ব্যাপারটা আসলে মেজাজের। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ের মেজাজটা যেমন হওয়া প্রয়োজন, সে পথে অন্তত ছক্কা মারায় হৃদয়ের দক্ষতাটা নিশ্চয়ই সবার চোখে পড়েছে। ছক্কা মারাটাই হয়তো ব্যাটিংয়ের সবকিছু নয়, তবে টি-টোয়েন্টিতে ছক্কা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়।
যেমন ধরুন, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ লো স্কোরিং ‘থ্রিলার’ হলেও সেখানে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে হৃদয়ের চারটি ছক্কা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে এ মুহূর্তে দ্বিতীয় সেরা বোলার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকেই মেরেছেন টানা তিনটি ছক্কা। ওই তিন ছক্কা কতটা পার্থক্য গড়েছিল, সেটা স্কোরবোর্ডে তাকালেই টের পাওয়া যায়। ১২৪ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ জিতেছে ২ উইকেটে, মাত্র ৬ বল হাতে রেখে। ২০ বলে ৪০ রানের ইনিংসে হৃদয় ৪টি ছক্কা না মারলে শেষ দিকে বাংলাদেশ আরও চাপে পড়ত। তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশে আর কেউ হৃদয়ের চেয়ে বেশি ছক্কা মারতে পারেননি।
চট্টগ্রামে গত বছরের ৯ মার্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে হৃদয়ের আন্তর্জাতিক অভিষেক। তিন সংস্করণ মিলিয়ে এ সময়ে বাংলাদেশের মধ্যে হৃদয়ই বেশি ছক্কা মেরেছেন—৫৩ ম্যাচে ৪৬ ইনিংসে ৪২টি। দুইয়ে থাকা লিটনের ছক্কা ২৯টি, তিনে থাকা নাজমুলের ২৪টি। তবে লিটন এ সময়ে খেলেছেন ৫২ ইনিংস, নাজমুল ৫৯টি।
নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা, তাই হৃদয়ের ছক্কা মারার সামর্থ্যটা চাইলে এই দলের সঙ্গেও বিচার করে নেওয়া যায়। হৃদয়ের অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত তিন সংস্করণ মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কা মেরেছেন ডেভিড মিলার। দ্বিতীয় হাইনরিখ ক্লাসেন। এ সময়ে ৪৪টি ছক্কা মিলারের, ক্লাসেনের ৪৩টি। তবে দুজনই খেলেছেন হৃদয়ের চেয়ে বেশ কয়েকটি কম ইনিংস—২৬টি।
টি-টোয়েন্টিতে এ সময়ে ২২ ছক্কা মেরেছেন হৃদয়। এ সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এ সংস্করণে সর্বোচ্চ ছক্কা মেরেছেন রিজা হেনড্রিকস—১৩ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে ২০ ছক্কা। ইনিংসপ্রতি ছক্কা মারার দিক দিয়ে হৃদয় পিছিয়ে এখানেও। এ সময়ে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে হৃদয়ের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কা মেরেছেন জাকের আলী। ১৩ ম্যাচে ১১ ইনিংসে ১২ ছক্কা তাঁর।
এ সুযোগে একটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভালো। বাংলাদেশের বর্তমান স্কোয়াডের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে হৃদয়ের স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে বেশি (১৩৫.৩৪)। শুধু এই দল কেন, মাশরাফি বিন মুর্তজাকে (১৩৬.১০) বাদ দিলে বাংলাদেশের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট হৃদয়ের। যেটা আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।
জানতে ইচ্ছা করতে পারে, হৃদয়ের আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে তিন সংস্করণ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ছক্কা কার? নাম এবং ছক্কার সংখ্যাটা শুনে চমকে যেতে পারেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুহাম্মদ ওয়াসিম—৫১ ম্যাচে ৫১ ইনিংসে ১১১ ছক্কা!
৪০ ম্যাচে ৪৮ ইনিংসে ৭৯ ছক্কা নিয়ে দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শ। তিনে থাকা ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৩৭ ম্যাচে ৪৪ ইনিংসে মেরেছেন ৭৮টি ছক্কা।
শুধু টি-টোয়েন্টি বিচার করলে হৃদয়ের অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ সংস্করণে সর্বোচ্চ ছক্কা হংকংয়ের বাবর হায়াতের। ৩২ ইনিংসে ৬৭টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। ৩০ ইনিংসে ৬৩ ছক্কা নিয়ে দ্বিতীয় আরব আমিরাতের ওয়াসিম। জাপানের কাডওয়াকি-ফ্লেমিং ২০ ইনিংসে ৫০ ছক্কা নিয়ে তৃতীয়।