চাঞ্চল্যকর তথ্যই বটে!
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ নিয়ে জন্মেছেন। জন্মের পর চিকিৎসকেরা তাঁর পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বড়জোর ১২ বছর বেঁচে থাকবেন।
তবে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি সমস্যা থেকে অনেকটাই সেরে উঠেছেন গ্রিন। ২৪ বছর বয়সী অলরাউন্ডার ক্রিকেট ক্যারিয়ারও ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল সেভেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রথমবার নিজের শারীরিক সমস্যার কথা সামনে এনেছেন তিনি।
পার্থে আজ থেকে শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি। অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে জায়গা হয়নি গ্রিনের। তাঁর জায়গায় খেলছেন আরেক মিডিয়াম পেস বোলিং অলরাউন্ডার মিচেল মার্শ।
তবে গ্রিন চ্যানেল সেভেনকে তাঁর লড়াকু জীবনের যে গল্প শুনিয়েছেন, তাতে আলোচনায় উঠে আসাই স্বাভাবিক। লাজুক ও চাপা স্বভাবের এই ক্রিকেটার দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তের বিষয়টি তাঁর সতীর্থ ও বন্ধুবান্ধবদের কাছেও এত দিন গোপন রেখেছিলেন।
সাক্ষাৎকারের গ্রিন বলেন, ‘আমার জন্মের সময় মা–বাবাকে জানানো হয়েছিল, আমার দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হয়েছে। সে সময় কোনো উপসর্গ ছিল না। আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে রোগটি ধরা পড়েছিল।’
কিডনি রোগ ধীরে ধীরে মানবদেহের কার্যকারিতা নষ্ট করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। জটিল এই রোগের পাঁচটি পর্যায় রয়েছে। পঞ্চম ধাপে এলে কিডনি প্রায় বিকল হয়ে যায়। তখন হয় ডায়ালাইসিস, নয় তো কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়।
গ্রিন জানিয়েছেন, তাঁর কিডনি বর্তমানে ৬০ শতাংশের মতো সচল আছে। এর মানে, তিনি রোগটির দ্বিতীয় পর্যায়ে আছেন। এই অবস্থায় থাকাকে ভাগ্যবান মনে করছেন তরুণ অলরাউন্ডার, ‘নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। কারণ, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের পরও শারীরিকভাবে খুব একটা অস্বস্তিতে পড়িনি, যতটা প্রভাব অন্যদের শরীরে পড়ে।’
খেলার সময় রোগটির একটাই দৃশ্যমান লক্ষণ বুঝতে পারেন গ্রিন। মাঝেমধ্যে শরীরে টান লাগে তাঁর। তিনি ভালো করেই জানেন, এই রোগ থেকে কখনোই পুরোপুরি সেরে উঠবেন না।
ব্যাপারটা মেনে নিয়েই খেলে যেতে চান, ‘কিডনি নষ্ট হতে থাকলে কখনো সেরে ওঠে না। আপনি শুধু এর নষ্ট হওয়ার গতি কমাতে পারেন। তার জন্য একটা উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারেন। খেলতে নামলেই মনে হতো আমি যথেষ্ট পানি পান করিনি, যথেষ্ট খাওয়াদাওয়া করিনি, নিজের প্রতি যত্নশীল হইনি। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি বুঝতে পারি, আমি সবকিছু ঠিকঠাক করেছি। দুর্ভাগ্যবশত এরপরও আমার শরীরে টান পড়ে।’
পৃথিবীর আলো দেখার আগেই গ্রিনের রোগটি ধরা পড়ে। তাঁর মা বি ট্রাচি তখন ১৯ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে গ্রিন যে আজ বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারদের একজন হতে পেরেছেন, তাতে তাঁর বাবা গ্যারি গ্রিনের অবদান অনেক। গ্যারিই ছেলেকে সব সময় দেখভাল করতেন এবং ক্রিকেট ক্যারিয়ার এগিয়ে নেওয়ার সাহস দিতেন। তবে চিকিৎসকেরা যখন জানিয়ে দেন তাঁর ছেলে হয়তো ১২ বছরের বেশি বাঁচবে না, তখন তিনি ভয় পেয়েছিলেন।
গ্যারির কথায়, ‘সে সময় রোগটি সম্পর্কে পুরোপুরি জানা ছিল না। তবে পূর্বাভাস যা ছিল, তা খুব একটা ভালো নয়। বলা হয়েছিল ও ১২ বছরের বেশি বাঁচবে না।’ একই কথা বলেছেন গ্রিনের মা বি ট্রাচিও, ‘ওর মূত্রনালির ভাল্ভে ব্লকেজ ছিল, যার কারণে প্রস্রাব কিডনিতে ফিরে আসত এবং কিডনির বিকাশ সঠিকভাবে হতো না। এটি যখন জানতে পারি, তা পুরো পরিবারের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছিল।’
গ্রিনের মনে হয়েছে, তাঁর এই দুরারোগ্য সমস্যার কথা আর গোপন রাখা ঠিক হবে না। তাই বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন। তাঁর বিশ্বাস, লড়াকু জীবনের এই গল্প অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।