জাতীয় দলের খেলা, ঘরোয়া ক্রিকেটের ব্যস্ততায় সময় কাটছিল মেহেদী হাসান মিরাজের। এতটাই যে নিজের চুল ছোট করার সময়ও পাচ্ছিলেন না। ঈদের ছুটি পেয়ে সবার আগে তাই সেলুনে যান।
আয়ারল্যান্ড সিরিজের সময় চোখে ফুটবলের আঘাত লেগেছিল মিরাজের। সে জন্য নিয়মিত চোখের ডাক্তার দেখাতে হতো। ছুটি পেয়ে সে কাজটাও সেরেছেন। সঙ্গে ঈদের প্রস্তুতি তো আছেই। পরিবারের সঙ্গে এবার ঢাকায়ই ঈদ কাটানোর পরিকল্পনা মিরাজের। সে জন্য সবার কেনাকাটাও সেরে রাখতে হচ্ছে।
যদিও এই দায়িত্বটা মূলত স্ত্রী রাবেয়া আক্তারই পালন করেন। মিরাজের কথা হচ্ছে, ‘আপনার ভাবিই পছন্দ করে দেয় সবকিছু। আমার কিছু করা লাগে না।’
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মিরাজদের ঈদের কেনাকাটার পরিধিও বাড়ছে। আগে নিজের জন্য পাঞ্জাবি কিনে ঈদ কাটিয়ে দিতে পারতেন। এখন সেটি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পরিবারে। স্ত্রী, পুত্র তো আছেই। মা–বাবা ও পরিবারের অন্যদের জন্যও কেনাকাটা করেন। বিষয়টি মিরাজ বেশ উপভোগও করেন, ‘দায়িত্ববোধের ব্যাপার আছে। এখন তো আমার দেওয়ার সময়। আগে বাবা দিতেন, এখন আমরা আয় করি, এখন আমাদের পালা। এটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হয়ে আসছে।’
মিরাজের দৃষ্টিতে পার্থক্যটা এসেছে ঈদের সালামিতেও। আগে সালামি পেতেন, এখন তাঁকে দিতে হয়। জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার অবশ্য সালামি দেওয়াতেই বেশি আনন্দ খুঁজে পান, ‘আগে মনে হতো সালামি পাওয়ার মধ্যেই আনন্দ। এখন দেখছি পাওয়ার চেয়ে দেওয়ার মধ্যে অন্য রকম আনন্দ আছে। এটা শুধু আমার জন্য না, সবাই নিশ্চয়ই দিয়ে বেশি আনন্দ পেয়ে থাকেন।’
বাচ্চাকে নিয়েই ঈদের নামাজে যাব। পরিবারের একটা রীতি এটা। আমরা বাবার সঙ্গে গিয়েছি। সে স্মৃতি এখনো মনে আছে।মেহেদী হাসান মিরাজ
তবে মিরাজের কাছে ঈদের আসল আনন্দ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। খেলার ব্যস্ততায় জাতীয় দলের শীর্ষ ক্রিকেটাররা পরিবারকে সময় দেওয়ার সুযোগ পান না। তাই ঈদটা পরিবারের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পেলে তো আর কথাই নেই, ‘ঈদ তো সবার জন্যই আনন্দের। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারলে খুবই ভালো লাগে। আমাদের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। কারণ, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে কখন কার ঈদ হবে, সেটার ঠিক থাকে না। এমনও হয়েছে যে ঈদের দিন খেলা ছিল। আমরা যারা অনেক দিন ধরে খেলছি, এসবে অভ্যস্তও হয়ে গিয়েছি। এমনও হয়েছে, খেলার কারণে ঈদ দেশের বাইরে কাটাতে হয়েছে। এবার তেমন না। সেদিক থেকে খুশির খবর। অল্প সময়ের জন্য হলেও পরিবারের সঙ্গে ঈদের সময়টা কাটাতে পারছি। এটাই বিরাট ব্যাপার মনে হয়।’
এবার অবশ্য মিরাজদের বাড়ি গিয়ে ঈদ করা হচ্ছে না। ঢাকাতেই স্ত্রী–পুত্রসহ মিরাজের ঈদ। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ির ঈদের অভিজ্ঞতাটা মিস করবেন এবার। সাধারণত ঈদের সৌজন্যে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় মিরাজের, সেটিও এবার হচ্ছে না, ‘বাড়ির ঈদ আর ঢাকার ঈদের পার্থক্য এটাই। বাড়িতে ঈদ হলে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটা ব্যাপার থাকে। এখানে তেমন না। ঢাকায় ঈদ হলে নিজেদের মধ্যেই পরিচিত যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে ঈদ করা হবে।’
মিরাজ সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত ছেলে মুদাসসের হাসানকে নিয়ে। তিন বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে ঈদের নামাজে যেতে চান মিরাজ। বাপ-বেটা একসঙ্গে ঈদের নামাজে যাবেন, এই পারিবারিক রীতিতে বড় হয়েছেন মিরাজ নিজেই। এবার নিজের ছেলেকেও সে সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চান জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার, ‘এটা কিন্তু অন্য রকম এক ভালো লাগার বিষয়। বাচ্চাকে নিয়েই ঈদের নামাজে যাব। পরিবারের একটা রীতি এটা। আমরা বাবার সঙ্গে গিয়েছি। সে স্মৃতি এখনো মনে আছে। ঈদ মানেই তো বাবার সঙ্গে নামাজে যাওয়া, এই ব্যাপারটা এখনো পরিষ্কার মনে পড়ে।’