দুর্দান্ত বোলিংয়ের পুরস্কার পেলেন শরীফুল
দুর্দান্ত বোলিংয়ের পুরস্কার পেলেন শরীফুল

শরীফুলের আগুনে বোলিংয়ে আফগান ব্যাটিংয়ে ধস

শরীর তাক করা বোলিংয়েই আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে সিংহভাগ উইকেট নিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই টেস্টে খেলেছিলেন শরীফুল ইসলাম। দুই ইনিংসেই নতুন বলে দারুণ বোলিং করেছিলেন। এরপর আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ খেলা হয়নি এই বাঁহাতি পেসারের। আজ সিরিজের শেষ ম্যাচে দুই পেসারে সাজানো বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণে সুযোগ হয় শরীফুলের।

ক্যারিয়ার–সেরা ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শরীফুল সে সুযোগটা দুই হাতে লুফে নেন। এ নিয়ে ওয়ানডেতে তৃতীয়বার ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। শরীফুলের প্রথম স্পেলেই ১৫ রানে ৪ উইকেট হারায় আফগানরা। দ্রুতই তা ৫ উইকেটে ৩২ রানে পরিণত হয়। শেষ পর্যন্ত আজতমউল্লাহ ওমরজাইয়ের ফিফটিতে ৪৫.২ ওভারে আফগানরা থামে ১২৬ রানে।

আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে আউট করার কৌশলটা হয়তো শরীফুলের ভালোই জানা। ২০২২ সালে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজে একবার ইব্রাহিমকে আউট করেছিলেন শরীফুল। এবারের মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংসেই এই আফগান ওপেনার আউট হয়েছিলেন শরীফুলের বলে। আজ ওয়ানডে সিরিজে নিজের প্রথম ম্যাচেও ইব্রাহিমের ইনিংস বড় হতে দেননি বাংলাদেশের এই বাঁহাতি পেসার। ইব্রাহিমকে আউট করতে শরীফুলের লেগেছে মাত্র একটি বল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে কট বিহাইন্ড হন ইব্রাহিম। ৬ বল খেলে ১ রান করেই থামে গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ানের ইনিংস। এ নিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে চার ইনিংসে চারবার শরীফুলের বলে আউট হয়েছেন ইব্রাহিম।

শুরুতে শরীফুলের বাউন্স খেলতে পারেনি আফগান টপ অর্ডার

তখন এই তরুণ বাঁহাতি ফাস্ট বোলারের আক্রমণাত্মক বোলিং শুরু হলো মাত্র। শরীফুলের গতি, বাউন্স, আগ্রাসন আর বাঁহাতি অ্যাঙ্গেল—এসবের মিশেল আফগান টপ অর্ডারে খুব দ্রুতই ফাটল ধরে। তিনে নামা রহমত শাহকে তৃতীয় ওভারেই আউট করেন শরীফুল। আউটের ধরনও এক—কট বিহাইন্ড। রহমত নাক ছুঁয়ে যাওয়া বলটায় ব্যাট ছুঁইয়ে আউট হন কোনো রান না করেই।

বাউন্সার থিওরি কাজে লেগেছে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রহমানউল্লাহ গুরবাজের বিপক্ষেও। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে তাসকিন আহমেদের মাথা তাক করা বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ধরা পড়েন গুরবাজ। বলটা মুশফিক ধরেছেন অনেকটুকু লাফিয়ে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত গুরবাজ আউট হওয়ার আগে ৬ রান করেছেন, খেলেছেন ২২ বল। আফগানিস্তান তখন ৬ ওভারের মধ্যেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ধুঁকছিল। দলের রান তখন মাত্র ১৪।

তাসকিনও ভালো বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়েছেন

আরও একটি উইকেটের জন্য অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। আফগানিস্তানের স্কোরবোর্ডে আরও ১ রান যোগ হলো মাত্র, ইনিংসের নবম ওভারেই শরীফুল আরও একবার আঘাত হানেন। এবার আফগান ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী আউট হন শরীফুলের লেংথ বলে। নিজের স্পেলের প্রথমবারের মতো শরীর তাক করা বোলিং থেকে সরে এসে ওভার উইকেটে আসেন শরীফুল। নতুন অ্যাঙ্গেলে করা প্রথম বলেই নবী এলবিডব্লু! রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি ১ রান করা নবীর। আফগানিস্তানের রান তখন ১৫, এর মধ্যেই ৪ উইকেট নেই। আফগান বোলিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া শরীফুলের বুনো উদ্‌যাপনে যখন একে একে যোগ দেন জাতীয় দলের বাকি সদস্যরা।

শরীফুলের আগুনে স্পেলের শেষ হওয়ায় যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে আফগানিস্তান। প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়ে শরীফুলের শিকার ৩ উইকেট, ডট বল ২৮টি। এমন বোলিংয়ের পর ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যান হাশমতউল্লাহ শহীদি ও নাজিবুল্লাহ জাদরান যেন ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে খেলছিলেন, সেটাও বেশিক্ষণের জন্য নয়। দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম এসে আফগান ব্যাটিংয়ের দুই অভিজ্ঞকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান।

১৬তম ওভারে সাকিবের বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু হন নাজিবুল্লাহ। ২২ বল খেলে ১০ রান করেন তিনি। ২২তম ওভারে শহীদিও আউট। নাজিবুল্লাহর মতো সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন এই বাঁহাতি। আফগান অধিনায়ক ৫৪ বল খেলে ২২ রান করে আউট হন। আসা–যাওয়ার মিছিলে যোগ দিয়েছেন অভিষিক্ত আবদুল রহমানও। এবার নতুন স্পেলে বোলিংয়ে আসা শরীফুলের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ আউট হন তিনি।

আফগানিস্তানকে কম রানে বেঁধে হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ দল

দলের রান তখন ৬৭। সেখান থেকে আফগান পেস বোলিং অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের দৃঢ়তায় আফগানদের রান যায় এক শর ওপারে। তাসকিনের বলে ৪৬তম ওভারে আউট হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৫৬ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তাঁর প্রথম ফিফটি। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন জিয়াউর রহমান (৫) ও মুজিব উর রেহমান (১১)।