রংপুর বিভাগের কী ভাগ্য! যাদের হাত ধরে গতবার জাতীয় ক্রিকেট লিগের শিরোপা জিতেছে রংপুর, সেই তিন পেসার মুশফিক হাসান, মুকিদুল ইসলাম ও রবিউল ইসলামকে ছাড়াই আজ ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে নেমেছে রংপুর। মূল পেসারদের অবর্তমানে নতুন বলটা তুলে নেন অলরাউন্ডার ও অধিনায়ক আরিফুল ইসলাম। সোহেল রানা, আসাদুল্লাহ হিল গালিব ও নবীন ইসলামের মতো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের নতুন মুখরা মিডিয়াম পেস বোলিং করেছেন। তাতেই ধসে পড়ে ঢাকার ব্যাটিং।
টিকে ছিলেন শুধু রনি তালুকদার। তাঁর ১০২ রানের বিস্ফোরক ইনিংসের সৌজন্যে ঢাকা বিভাগ ১৬৬ রান করে অলআউট হয়। নবীন সর্বোচ্চ ৫ উইকেট শিকার করেন। জবাবে রংপুর দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৩৩ রান। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও দুটি সেঞ্চুরি হতে পারত। বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে চট্টগ্রামের দুই ব্যাটসম্যান পিনাক ঘোষ (৯৬) ও মুমিনুল হক (৯৪) আউট হয়েছেন নব্বইয়ের ঘরে। বরিশালের সোহাগ গাজী ৫ উইকেট নিয়েছেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ২ নম্বর মাঠে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ঢাকা মহানগর ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪২ রান করেছে। রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে খুলনা বিভাগকে ২৮৮ রানে অলআউট করেছে স্বাগতিকেরা। শেষ বেলায় ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য ১৫ রান তুলতেই ২ উইকেট হারায় তারা।
ডিউক বলে সুইং হবে, সেটা কাজে লাগাবেন পেসাররা, বিশেষ করে ইনিংসের শুরুতে। এই সহজ মন্ত্রটা রংপুরের অনভিজ্ঞ পেসাররা যেন বুঝতেই পারছিলেন না। সকালে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আগে বোলিং করতে নেমে এলোমেলো বোলিংই বেশি করেছেন সোহেল, আসাদুল্লাহ ও নবীনরা। নিয়মিত অধিনায়ক আকবর আলীর অবর্তমানে নেতৃত্ব দেওয়া আরিফুল অবশ্য নতুন বলে ২ উইকেট নিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন, ডিউক বলে কোন লেংথে বল করতে হয়। তবু নিশানা ঠিক হচ্ছিল না রংপুরের।
তাতে অবশ্য বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ, রংপুরের অমন বোলিংয়েই একের পর এক ভুল শটে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন ঢাকার ব্যাটসম্যানরা। ব্যতিক্রম ছিলেন রনি। ওপেনিংয়ে নেমে তিনি রংপুরের বাজে বলগুলোকে বাউন্ডারিতে পাঠাতে ভুল করেননি। সব মিলিয়ে ১৯টি বাউন্ডারি মেরেছেন। আউট হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১১২ বলে ১০২ রান, ৯১.০৭ স্ট্রাইক রেটে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তাঁর ১১তম সেঞ্চুরি।
ঢাকার ইনিংসের চার ভাগের তিন ভাগ রানই আসে রনির ব্যাট থেকে। বাকিদের যাওয়া-আসায় ঢাকার ইনিংস থামে ১৬৬ রানে। নবীন সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়েছেন, ১০.৪ ওভার বল করে মাত্র ২৮ রান দিয়ে। রংপুরের ব্যাটিং সেই তুলনায় ভালোই হয়েছে। ওপেনিংয়ে নামা মেহেদী মারুফের ৪৩ ও উইকেটকিপার মোসাদ্দেক মীমের অপরাজিত ৫৫ রানে দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৩৩ রান করেছে রংপুর।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম বিভাগের বড় রান করার সুযোগ ছিল। বরিশালের বিপক্ষে তাদের শুরুটাও ভালোই হয়েছিল। সৈকত আলী ৬ রানে আউট হলেও তিনে নামা মুমিনুল হক ও ওপেনার পিনাক ঘোষ দারুণ খেলছিলেন। ফিফটি করে দুজনই এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু সোহাগের এক স্পেলেই ঘুরে যায় ম্যাচ। ৬০তম ওভারে মুমিনুলকে আউট করেন তিনি। পরের ওভারেই রানআউট হন ইয়াসির আলী। সোহাগ ৬২তম ওভারে এসে পিনাককে বোল্ড করেন। চট্টগ্রামের রান তখন ৩ উইকেটে ২০৩।
সেখান থেকে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রানে থামে চটগ্রামের ইনিংস। সোহাগ ২২ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তাঁর ২৩তম ৫ উইকেট। জবাবে বরিশালের ইনিংসের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। দিনের শেষ দিকে ৯ ওভারের জন্য ব্যাটিংয়ে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ২৮ রান তুলেছে তারা।
সিলেটের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে সাদমান ইসলামের ফিফটিতে ভালো শুরু পেয়ে যায় ঢাকা মহানগর। ১২৭ বল খেলে করেন ৫৭ রান। বড় রান পাননি মোহাম্মদ নাঈম, আইচ মোল্লারা। ব্যর্থ হয়েছেন মার্শাল আইয়ুব, আমিনুল ইসলামও। তবে ঢাকার ইনিংসটিকে আগলে রাখেন নাঈম হাসান। দিন শেষে অপরাজিত আছেন ৬৫ রানে, বল খেলেছেন ২১১টি। তাঁর সৌজন্যেই ৯ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে দিন শেষ করে ঢাকা মহানগর। সিলেটের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন আবু জায়েদ ও শাহানুর রহমান।
খুলনার ইনিংসেও ছিল দুটি ফিফটি। মোহাম্মদ মিঠুন ও আফিফ হোসেনের জোড়া ফিফটিতে রাজশাহীর বিপক্ষে সব কটি উইকেট হারিয়ে ২৮৮ রান করে খুলনা। আফিফ সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেছেন মাত্র ৫০ বলে। ৯৯ বল খেলে ৫৯ রান করেছেন মিঠুন। রাজশাহীর সুইং বোলার মোহর শেখ নিয়েছেন ৩ উইকেট। জবাবে আল আমিন হোসেনের কাছেই ২ উইকেট হারায় রাজশাহী।