রংপুরের বিপক্ষে এলিমিনেটরের মতো বাঁচা-মরার ম্যাচে ব্যাটিংয়েই নামলেন না সাকিব
রংপুরের বিপক্ষে এলিমিনেটরের মতো বাঁচা-মরার ম্যাচে ব্যাটিংয়েই নামলেন না সাকিব

বাঁচা–মরার ম্যাচে কেন ব্যাটিং করেননি সাকিব?

এ ম্যাচটি ক্যারিয়ারে একটা মাইলফলকই ছিল সাকিব আল হাসানের জন্য। মুশফিকুর রহিম, এনামুল হক, ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ মিঠুনের পর বিপিএলে ১০০তম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সাকিব। এবার বিপিএলে ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সেই সাকিবই কিনা এলিমিনেটরের মতো বাঁচা-মরার ম্যাচে ব্যাটিংয়েই নামলেন না! কেন নামেননি, সেটির একটি ব্যাখ্যা ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন ফরচুন বরিশালের ব্যাটিং কোচ নাজমূল আবেদীন। বলেছেন, সাকিব নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আরেকটু পরে আসতে চেয়েছিলেন।

এবারের বিপিএলে সাকিব ব্যাটহাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন

১৭৪.৪১ স্ট্রাইক রেট, ৪১.৬৬ গড়, ৩টি ফিফটি—বিপিএলে ব্যাটিংয়ে এবার সাকিবের ব্যাটিং পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। পুরো টুর্নামেন্টেই ৩ ও ৪ নম্বরে খেলেছেন, সবচেয়ে বেশি ৩ নম্বরে ৭ বার, তিনবার ৪ নম্বরে। সবচেয়ে নিচে ব্যাটিং করেছেন ৫ নম্বরে, সেটাও মাত্র একবার। আজ পাওয়ারপ্লের মধ্যে ৪৬ রানে ১ উইকেট হারানোর পর তিনে পাঠানো হয় মাহমুদউল্লাহকে। মাহমুদউল্লাহ ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তবে তিনি যখন আউট হন, ইনিংসে বাকি ৬.৩ ওভার। সাকিব আসেননি এরপরও। এমনকি ১৬তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজ ফেরার পরও পাঠানো হয় এবার বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলা শ্রীলঙ্কার ভানুকা রাজাপক্ষেকে।

স্বাভাবিকভাবেই সেটি বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। কোচ নাজমূল পরে বললেন, দলীয় কৌশলই ছিল এমন, ‘এত ভালো একটা প্ল্যাটফর্ম হওয়ার পর ওর (সাকিব) মাথায় এটা হয়তো কাজ করেছিল—করিম (জানাত) বা রাজাপক্ষেকে আগে পাঠিয়ে ফ্রি করে দিলে, যা–ই হোক না কেন, যত রানই করুক না কেন, যে রেটেই করুক না কেন, সেটা দলের কাজে আসবে। শেষে গিয়ে সে তার কাজটা করবে।’

প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি করিম বা রাজাপক্ষে

তবে মাঝের ওই ওভারগুলোতে ঠিক ছন্দে ছিলেন না করিম বা রাজাপক্ষে। বরিশালের পরিকল্পনা যে বুমেরাং হয়ে গেছে, সেটি স্বীকার করে নিলেন নাজমূল, ‘আমরা যেটা প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটা তারা করতে পারেনি। সেটা উইকেটের কারণে হোক, প্রতিপক্ষের ভালো বোলিংয়ের কারণে হোক, নিজস্ব ইনটেন্টের অভাবে হোক, করতে পারেনি। এ কারণে পিছিয়ে গেছি। যে ভিতটা পাওয়া গিয়েছিল, আমাদের সুযোগ ছিল ১৯০ বা এর বড় স্কোর গড়ার। সেই ব্যাটিং শক্তিটা আমাদের ড্রেসিংরুমে ছিল, যেটি আমরা ব্যবহার করতে পারিনি।’

সাকিবের সিদ্ধান্তটি যে ভুল ছিল, নাজমূলের কথাতে সেটির ইঙ্গিত স্পষ্টই, ‘আমারও সেটাই ধারণা (একটা জুয়া খেলা হয়েছে)। সাকিব এখন যেভাবে ব্যাটিং করছে, এই উইকেটে, এই পরিস্থিতিতে ওর চেয়ে ভালো অপশন ছিল বলে আমার মনে হয় না। খুব ভালো হতো, নিজের মতো করে ও খেলত। এটা বোধ হয় সাকিবেরও উপলব্ধি এখন। তবে যেটা হয়ে গেছে, আমরা আর ফেরত আনতে পারব না। এটা একটা শিক্ষা। বোলিংয়েও দেখেছি কিন্তু, আমরা চেষ্টা করেছি অন্যদের ওপরে। তবে দেশি বোলাররাই ম্যাচে কিছুটা হলেও ফিরিয়ে এনেছিল। ব্যাপারটা এমনই।’

সাকিব এখন যেভাবে ব্যাটিং করছে, এই উইকেটে, এই পরিস্থিতিতে ওর চেয়ে ভালো অপশন ছিল বলে আমার মনে হয় না। খুব ভালো হতো, নিজের মতো করে ও খেলত। এটা বোধ হয় সাকিবেরও উপলব্ধি এখন। তবে যেটা হয়ে গেছে, আমরা আর ফেরত আনতে পারব না। এটা একটা শিক্ষা
নাজমূল আবেদীন, ফরচুন বরিশাল কোচ

উইকেটের তুলনায় কম সংগ্রহ হলেও বোলিংয়ে শুরুটা ভালোই ছিল বরিশালের। তবে শুরুর চাপ ধরে রাখতে পারেনি তারা। ব্যাটিংয়ে না আসার আক্ষেপ মেটাতেই কি না, ১১ ওভারের মধ্যেই নিজের স্পেল শেষ করে দেন সাকিব। প্রথম ওভারের মতো নিজের শেষ ওভারেও উইকেট পান।
সাকিবের এমন টানা বোলিংয়ের ব্যাখ্যায় নাজমূল বলেছেন, ‘এটাও ভাবনায় ছিল, পাওয়ারপ্লেতে রান দেব না। প্রথম ২ ওভারে ও কম রান দিয়েছিল। সেটা মনে হয় ওকে উৎসাহিত করেছিল। তবে একই বোলার যদি বারবার বোলিং করতে থাকে, তাহলে ব্যাটসম্যানের জন্য সহজ হয়ে যায়। প্রথম দিকে একটু ভুগল হয় পেস বা স্পিনে, কিন্তু (পরে) মানিয়ে নেয়।’

সাকিব আজ ক্যাচও মিস করেছেন একটা


তবে শেষ পর্যন্ত পার্থক্যটা গড়েছে ব্যাটিংই। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে সাকিব নিজেও বলেছেন, ১৫-২০ রান কম করে ফেলেছেন তাঁরা, ‘আমাদের ১৮০-১৯০ করা উচিত ছিল। শেষ ৫ ওভারে যেভাবে চেয়েছিলাম, ব্যাটিং করতে পারিনি। লড়াই করেছি, তবে উইকেট ভালো ছিল। এখানে এ স্কোর ডিফেন্ড করা কঠিন।’