ব্রায়ান বুথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলার পাশাপাশি অলিম্পিকেও খেলেছেন
ব্রায়ান বুথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলার পাশাপাশি অলিম্পিকেও খেলেছেন

অলিম্পিক–বিশ্ব অ্যাথলেটিকসেও পদক জিতেছেন টেস্ট ক্রিকেটাররা

ব্রায়ান বুথকে না চেনাই স্বাভাবিক। ভদ্রলোক অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন ষাটের দশকে। ‘স্পোর্টসম্যানশিপে’র জন্য খ্যাতি পেয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৯ টেস্টে ৫ সেঞ্চুরিও আছে, তবু বুথকে আহামরি ক্রিকেটার বলা যায় না। তবে একটি ব্যাপারে বুথ স্মরণীয়।

১৯৬১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরুর আগে খেলেছেন অস্ট্রেলিয়া ফিল্ড হকি দলে। ১৯৫৬ মেলবোর্ন অলিম্পিকও খেলেছেন হকি দলের হয়ে। তথ্যটি জানতে জানতে মাথায় হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, পরশু পর্দা নেমেছে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের। এই প্রতিযোগিতায় কি কখনো কোনো টেস্ট ক্রিকেটার পদক জিততে পেরেছেন? কিংবা অলিম্পিকেই–বা কজন টেস্ট ক্রিকেটার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন?

পরের প্রশ্নটির উত্তর আগে দেওয়া যাক। ক্রিকইনফোর ‘আস্ক স্টিভেন’ এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ব্রায়ান বুথ অলিম্পিকে খেলা ষষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার। আর এই পথ দেখানো প্রথম ক্রিকেটারটি এসেক্স এবং ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার ক্লদ বাকেনহাম। ইংল্যান্ডের হয়ে চারটি টেস্ট খেলা বাকেনহাম ১৯১০ সালেই সবগুলো টেস্ট খেলেছেন। তার এক দশক আগে ১৯০০ সালে প্যারিস অলিম্পিকে ফুটবলের প্রথম ইভেন্টে ব্রিটেন দলের হয়ে সোনা জিতেছিলেন বাকেনহাম। অধুনালুপ্ত আপটন পার্ক এফসিতে কিছুদিন ফুটবলও খেলেছেন।

জনি ডগলাস বক্সিংয়ে পদক জিতেছেন

এসেক্সেরই আরেক ক্রিকেটার জনি ডগলাস ১৯০৮ লন্ডন অলিম্পিকে বক্সিংয়ের মিডলওয়েটে সোনা জিতেছিলেন। ইংল্যান্ডের হয়ে (১৯১১-১৯২৫) ২৩ টেস্ট খেলা সাবেক পেস অলরাউন্ডার অপেশাদার দলের হয়ে ফুটবলও খেলেছেন। জনি ডগলাসের প্রায় সমসাময়িক সময়েও ছিলেন জ্যাক ম্যাকব্রায়ান। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, সমারসেট ও ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা সাবেক এই ব্যাটসম্যান ১৯২০ অ্যান্টওয়ার্প অলিম্পিকে সোনার পদক জিতেছেন ব্রিটিশ হকি দলের হয়ে।

১৯২৪ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র একটি টেস্ট খেলার সুযোগ পেলেও ম্যাকব্রায়ান অমর হয়ে আছেন অন্য কারণে। ম্যানচেস্টারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই টেস্ট বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। সে ম্যাচে ম্যাকব্রায়ান ব্যাটিং-বোলিং করা দূর অস্ত, ফিল্ডিংয়ে কাউকে আউট করায়ও অবদান রাখতে পারেননি। ইতিহাসের একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ডটি এখনো ম্যাকব্রায়ানের। ব্রায়ান বুথের মতো এ বছরই মারা যাওয়া নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কিথ থম্পসন ১৯৬৮ সালে দেশের জাতীয় হকি দলের হয়ে মেক্সিকো অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন। সে বছরই ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলেন কিথ থম্পসন।

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার সুনেত্তে ভিলিয়ন বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলেছেন

টেস্ট ক্রিকেটার আবার অলিম্পিকেও খেলেছেন এমন পুরুষ ক্রীড়াবিদ আছেন চারজন। বাকি দুজন নারী—দক্ষিণ আফ্রিকার সুনেত্তে ভিলিয়ন ও নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি সুজি বেটস। দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের হয়ে ১টি টেস্ট ও ১৭টি ওয়ানডে খেলা ভিলিয়ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে ২০০৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত চারটি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে শেষটিতে (রিও ডি জেনিরো) বর্শা নিক্ষেপে জিতেছেন রৌপ্য পদক। বেটস ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে খেলেছেন নিউজিল্যান্ড বাস্কেটবল দলের হয়ে।

এ তো গেল অলিম্পিকের হিসাব। বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের খোঁজটা এবার নেওয়া যাক। তার আগে একটি বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো। বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে ১৯৮৩ সালে। তত দিনে ক্রীড়াবিদেরা আরও পেশাদার হয়ে ওঠায় এক অঙ্গনের ক্রীড়াবিদের জন্য আরেক অঙ্গনে গিয়ে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন হয়ে ওঠে। অর্থাৎ খেলাধুলার একাধিক অঙ্গনে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন হয়ে উঠেছিল। আর তাই বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী টেস্ট ক্রিকেটার মাত্র একজনই আছেন বলে জানিয়েছে ক্রিকইনফোর ‘আস্ক স্টিভেন’—দক্ষিণ আফ্রিকার সুনেত্তে ভিলিয়ন। ২০১১ দেগু বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের বর্শা নিক্ষেপে রৌপ্য জিতেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১ টেস্ট ও ১৭ ওয়ানডে খেলা ভিলিয়ন। ২০১৫ বেইজিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছেন ব্রোঞ্জ।

মিচেল স্টার্কের ভাই ব্রান্ডন স্টার্ক

বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে আর কোনো টেস্ট ক্রিকেটার না পাওয়া গেলেও অন্য উদাহরণ আছে। এবার বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের ৪০০ মিটার হার্ডলসে ব্রোঞ্জ জেতেন রাই বেঞ্জামিন। টোকিও অলিম্পিকেও পদকজয়ী এই বেঞ্জামিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক পেসার উইনস্টন বেঞ্জামিনের ছেলে। উদাহরণ আরও আছে। এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ছেলেদের উচ্চ লম্ফে অষ্টম হওয়া ব্রান্ডন স্টার্ক কে বলুন তো?

ঠিকই ধরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্কের ভাই।