‘বাজবল’ আবির্ভাবের পর থেকেই ক্রিকেট–বিশ্বে আলোচনার খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইংল্যান্ড টেস্ট দলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকসের মিলিত চিন্তাধারার ফসল এ ধরনের ক্রিকেট, যার মূল দর্শন আগ্রাসী খেলে যেকোনো অবস্থা থেকে জয়ের চেষ্টা করা। এ দর্শন নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা মত আছে।
স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ডের চিরপ্রতিন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ানদের এই বাজবল খুব একটা পছন্দ নয়। অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে নাথান লায়নের বোধ হয় বাজবলের প্রতি একটু বেশিই বিরাগ। নয়তো কিছুদিন পরপর এ নিয়ে মন্তব্য করতে যাবেন কেন!
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল এই অফ স্পিনার গত আগস্টে বলেছিলেন, সর্বশেষ অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে তিনি ইংলিশদের খেলায় বাজবলের ছিটেফোঁটাও দেখেননি। এবার তিনি বাজবলকে সরাসরি ‘ফালতু’ বললেন।
এ বছরের জুন–জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজের লর্ডস টেস্ট লায়নের জন্য ছিল মাইলফলকের। টেস্ট ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে টানা ১০০তম টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন বিখ্যাত লর্ডসেই। কিন্তু মাইলফলক স্পর্শ করা ম্যাচই ৩৬ বছর স্পিনারের পথচলায় বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।
টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাউন্ডারির কাছে ফিল্ডিংয়ের সময় বেন ডাকেটের একটি শট আটকাতে গিয়ে ডান পায়ের মাংসপেশি ছিঁড়ে যায় তাঁর। চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্যাট করে মূল্যবান ১৫ রান যোগ করেন। দলের প্রতি এই অসামান্য নিবেদনের পর তাঁকে আর মাঠে দেখা যায়নি।
এজবাস্টনে প্রথম টেস্টের পর লায়নের ছিটকে পড়া সেই লর্ডস টেস্টও জিতে সিরিজে ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। লায়নের অনুপস্থিতিতে পরে ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য গল্প লেখে ইংল্যান্ড। সিরিজটি শেষ পর্যন্ত ২–২ সমতায় শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, আগের অ্যাশেজ জেতায় মর্যাদার ছাইদানিটা নিজেদের কাছেই রেখে দেয় অস্ট্রেলিয়ানরা।
কিন্তু লায়নের মতে, সর্বশেষ অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি এগিয়ে আছেন। কারণ, তিনি যে দুটি টেস্ট খেলেছেন, সেই দুটিতে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। আর ইংল্যান্ড যে দুটি টেস্ট জিতেছে ও অন্যটি ড্র করেছে, সেই ম্যাচগুলোতে চোটের কারণে তিনি খেলতে পারেননি। পরশু অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল সেভেনের ক্রীড়াবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘দ্য ফ্রন্ট বার’–এ লায়ন বলেছেন, ‘বাজবলের বিপক্ষে আমি ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে আছি। তাই আমি বেশ খুশি।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালকরা বাজবল নিয়ে লায়নের ধারণা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাথান লায়ন ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘এটা (বাজবল) ইংলিশদের এমন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট, যা তারা চালিয়ে যেতে চায়। শব্দটি অভিধানেও জায়গা করে নিয়েছে। ব্যাপারটা চমকপ্রদ, তাই না? কিন্তু আমার কাছে এটা একদম ফালতু।’
বাজবল খেলে হেরে যাওয়ার চেয়ে জেতাটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন লায়ন। অস্ট্রেলিয়ার এ বছরের সব অর্জনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাই তিনি বলেছেন, ‘বছরের শুরুতে কেউ যদি বলত, আমরা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতব, অ্যাশেজ ধরে রাখব এবং এরপর বিশ্বকাপও জিতব, তাহলে সবাই সুযোগটা লুফে নিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে (বাজবল খেলে) ইংল্যান্ডের শুধু নৈতিক জয়ই হলো।’
চোট থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেছেন লায়ন। আগামী মাসে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরবেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শেফিল্ড শিল্ডে খেলে পাকিস্তান সিরিজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তুলছেন।