ইংরেজিতে প্রশ্ন, উত্তর হতে হতে হঠাৎ সিংহলিজ। যাঁকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন, তিনিও সহজ দৃষ্টিতেই তাকালেন প্রশ্নকর্তার দিকে। প্রশ্ন শেষে সিংহলিজ ভাষাতেই দিলেন দীর্ঘ উত্তর।
নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, প্রশ্নকর্তা ও উত্তরদাতা দুজনই শ্রীলঙ্কার মানুষ। তবে উত্তরদাতা চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অন্য একটা পরিচয়ও আছে। বাংলাদেশ দলের কোচ তিনি। অন্য দেশের কোচ হলে যে মাতৃভাষায় করা প্রশ্নের উত্তর মাতৃভাষায় দেওয়া যাবে না, বিষয়টা তেমন নয়। তবে মজার ব্যাপার, এখন সিংহলিজের চেয়ে ইংরেজি বেশ ভালো বলা হাথুরুসিংহে আজ শ্রীলঙ্কার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একবার সিংহলিজটাই ভুলে গিয়েছিলেন!
কলম্বোর রানাসিঙ্গে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে কাল এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দল। অনুশীলনের আগে আজ সেটারই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন কোচ হাথুরুসিংহে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব যথারীতি শুরু হলো ইংরেজিতে। কিন্তু প্রতিপক্ষে স্বদেশি কোচ পেয়ে নিজেদের ভাষায় প্রশ্ন করার সুযোগ কেন ছাড়বেন শ্রীলঙ্কান সাংবাদিকেরা! ১৪–১৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কান সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অন্তত গোটা পাঁচেক প্রশ্ন হলো সিংহলিজ ভাষায়।
হাথুরুসিংহে সাবলীল (অন্তত দেখে তাই মনে হচ্ছিল) সিংহলিজ ভাষাতেই সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের শেষের দিকে করা এক সিংহলিজ প্রশ্নে সিংহলিজ ভাষাতেই বলা শুরু করে পরে চলে গেলেন ইংরেজিতে। এরপর বাকি উত্তরটা তিনি দিয়েছেন ইংরেজিতেই।
সংবাদ সম্মেলন শেষে মজা করে এই প্রতিবেদক হাথুরুসিংহেকে বললেন, ‘আপনি তো বেশ ভালো সিংহলিজ বলতে পারেন!’ কথা শুনে হেসে দিলেন হাথুরুসিংহে এবং এরপর হাসতে হাসতেই যা বললেন তাতে অবশ্য জানা গেলে, এতক্ষণ অন্য ভাষাভাষির সাংবাদিকদের জন্য যে দুর্বোধ্য সিংহলিজ ভাষা তিনি বলে এলেন, শ্রীলঙ্কান হলেও সেই ভাষায় কথা বলাটা অনেক সময় তাঁর জন্যও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হওয়া হাথুরুসিংহে বলছিলেন, ‘সিংহলিজ ভাষায় কথা বলতে এখন আমাকেও খুব সংগ্রাম করতে হয়। আজও বেশ কষ্টই হচ্ছিল। তবে এই ভাষায় প্রশ্ন হচ্ছিল বলে আমিও চেষ্টা করেছি সিংহলিজে উত্তর দিতে।’
তাহলে ওই প্রশ্নটয় কেন হঠাৎ ইংরেজিতে উত্তর দিলেন? এবার হাথুরু বললেন, ‘ওই যে বললাম, এই ভাষাটা এখন যেহেতু আর বেশি ব্যবহার করতে হয় না, সিংহলিজ বলতে কখনো কখনো সমস্যা হয়ে যায়। ওই প্রশ্নটায় হঠাৎ দ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছিলাম সিংহলিজ ভাষায় আসলে কী বললে ঠিক হবে। উপযুক্ত শব্দ মনে করতে না পেরে পরে আবার ইংরেজিত বলেছি।’
শ্রীলঙ্কার মানুষ হলেও অনেক বছর ধরেই পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন হাথুরুসিংহে। সন্তানেরাও সেখানেই পড়াশোনা করছে। আর অন্য দেশে দীর্ঘদিন থাকলে যা হয়, সেই দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যেতে যেতে একসময় মুখের ভাষাটাও হয়ে যায় সেই দেশের। হাথুরুসিংহের পরিবারেরও একই অবস্থা।
বাইরে ইংরেজি বলতে হলেও ঘরে সন্তানদের সঙ্গে সিংহলিজ ভাষাতেই কথা বলার চেষ্টা করেন হাথুরুসিংহে। তবে ঝামেলা হয়ে যায় সেখানেও, ‘চেষ্টা করি সন্তানদের সঙ্গে সিংহলিজ ভাষায় কথা বলতে, যেন ওরা দেশ আর দেশের ভাষাটা ভুলে না যায়। কিন্তু বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, আমি তাদের সঙ্গে সিংহলিজ ভাষায় কথা বলছি, যখন তাদের কোনো কারণে বকাঝকা করতে হচ্ছে।’