সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরির আক্ষেপ থাকতেই পারে। সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহিমেরও আক্ষেপ থাকতে পারে ইনিংসটা আরেকটু বড় করতে না পারার। আউট হওয়ার ধরনে আক্ষেপে পুড়তে পারেন লিটন দাসও। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের তোপে পড়ে ৩৮ রানে শেষ ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দলও হয়তো আরেকটু বড় লিড না পাওয়ার আক্ষেপ করবে।
তবে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ১৫৫ রানের লিডের জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ঠিকই ধুঁকছে আয়ারল্যান্ড। দ্বিতীয় দিনশেষে ২৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে তারা। সাকিব ও তাইজুল ভাগ করে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ৬৬তম ওভারে প্রথম বোলিং করতে আসা সাকিব এবার আসেন প্রথম ওভারেই, চতুর্থ বলে সফলও হন। জেমস ম্যাককলামের উইকেটটি অবশ্য তিনি পান এলবিডব্লুর রিভিউ নিয়ে, ম্যাচে সেবারই প্রথম আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ডিআরএসে বদলে যায়।
অন্যপ্রান্তে আসা তাইজুল ইসলাম আঘাত করেন নিজের দ্বিতীয় ওভারে, এলবিডব্লু মারে কমিন্স। তাইজুলের লেংথ বল এরপর মিস করে বোল্ড অ্যান্ডি বলবার্নি। সাকিবের পরের শিকার কার্টিস ক্যাম্ফার, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি। ১৩ রানেই আয়ারল্যান্ড হারায় চতুর্থ উইকেট। দ্বিতীয় দিনেই টেস্ট শেষ হচ্ছে কি না, তখন এমন আলোচনা উঠলেও পিটার মুর ও হ্যারি টেক্টরের জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকেই দিন শেষ করে।
গতকাল দিনের শেষ বলে তামিম ইকবালের উইকেট নেওয়ার পর আজ দিনের শুরুতেই মুমিনুল হকের উইকেট নিয়ে উজ্জীবিতই ছিল আয়ারল্যান্ড। তৃতীয় ওভারে মুমিনুল হক পায়ের পেছন দিক দিয়ে বোল্ড হন মার্ক অ্যাডাইরের বলে।
এরপরই সাকিব ও মুশফিকের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। মধ্যাহ্নবিরতির আগে-পরে সাকিব ও মুশফিকের জুটিতে ওঠে ১৮৮ বলে ১৫৯ রান। এ জুটির পথে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি জুটির (৫) তালিকায় জাভেদ ওমর ও হাবিবুল বাশারকে ছুঁয়ে ফেলেন দুজন।
সাকিব নেমে প্রথম বলেই চার মারেন, এরপর থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের চেষ্টাই করে গেছেন অধিনায়ক। শুরুতেই সফল না হলেও সাকিব নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন দারুণভাবে, যোগ দেন মুশফিকও। অ্যাডাইর ও গ্রাহাম হিউমের স্পেলে যা চাপ তৈরি হয়, মিলিয়ে যায় তা-ও।
মধ্যাহ্নবিরতির আগেই হোয়াইটকে টানা দুই চারে টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩১তম ফিফটি পান সাকিব, মাইলফলকে যেতে তাঁর লাগে মাত্র ৪৫ বল। মুশফিকের ফিফটিতে লাগে ৬৯ বল। দুজনেরই সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে শেষ হয় প্রথম সেশন।
তবে বিরতির পর সাকিবের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য ছয় বছরের অপেক্ষা বাড়ে আরেকটু। অফ স্পিনার অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল টেনে সুইপের মতো খেলতে গিয়ে অদ্ভুতভাবে কট বিহাইন্ড হন। সেঞ্চুরির আক্ষেপ থাকলেও ৯৪ বলে ৮৭ রানের ইনিংসে দারুণ কিছু শট খেলে গেছেন সাকিব—পেসারদের বলে একের পর এক ড্রাইভ আর স্পিনারদের করেছেন লেট কাট। আর বাজে বলে খেলেছেন স্লগ সুইপ আর পুল শট।
মুশফিক অবশ্য সাকিবের ভুলটা করেননি। অমন গতিতে না হলেও দ্রুতই রান তুলেছেন, যদিও শুরুতে টেস্ট ধাঁচের ব্যাটিং-ই করছিলেন। তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় আইরিশদের বাজে ফিল্ডিংও। ১৩৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন চার মেরে, মুশফিকের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি।
সাকিব ফেরার পর লিটন দাসকে নিয়ে আরেকটি আগ্রাসী জুটি মুশফিকের, দুজন মিলে ৮৭ রান যোগ করেন মাত্র ৮৪ বলে। ইনিংস বড় করার সুযোগ ছিল লিটনেরও।
কিন্তু অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে বেন হোয়াইটের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে মিড অফের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দেন। আউট হওয়ার ঠিক আগের বলেই প্রায় নিশ্চিত রানআউটের হাত থেকে বেঁচে গিয়ে পাওয়া সুযোগটা তাই কাজে লাগাতে পারেননি, ৪১ বলে ৮ চারে ৪৩ রান করেই থামতে হয় তাঁকে।
চা-বিরতিতে বাংলাদেশ যায় ১০২ রানের লিড নিয়ে। তবে বিরতির পর মুশফিক বেশিক্ষণ টেকেননি। ম্যাকব্রাইনকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে মারে কমিন্সের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ম্যাকব্রাইন পরে ফেরান তাইজুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলামকেও, শরীফুলের উইকেট দিয়ে আয়ারল্যান্ডের প্রথম স্পিনার হিসেবে টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন ম্যাকব্রাইন।
ম্যাকব্রাইনের ষষ্ঠ শিকার এরপর ইবাদত। অন্যদিকে টেলএন্ডারদের নিয়ে নিজের ‘পরিচিত’ লড়াইটা চালিয়ে যান মিরাজ। শেষ ব্যাটসম্যান খালেদ আহমেদ ক্রিজে থাকার সময় ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি পান মিরাজ।
শেষ পর্যন্ত বেন হোয়াইটের বলে স্টাম্পিং হন তিনি, ৮০ বলে ৫৫ রান করে। ৩৬৯ রানে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ম্যাকব্রাইন ৬ উইকেট নেন ১১৮ রানে।