দিল্লির রাস্তায় ধোঁয়াশা পরিবেশ। বায়ুদূষণের ফল
দিল্লির রাস্তায় ধোঁয়াশা পরিবেশ। বায়ুদূষণের ফল

ভারত থেকে উৎপল শুভ্র

ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন দিল্লিতে কীভাবে খেলবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা

সেমিফাইনালের দৌড় থেকে এরই মধ্যে ছিটকে গেছে দুই দল। বিশ্বকাপের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের তাই কোনো গুরুত্বই নেই। এটা শুধুই দুই দলের মধ্যকার পারস্পরিক বোঝাপড়ার ম্যাচ। আগামী সোমবার সেই ম্যাচের আগে দুই দলের জন্যই কমন এক প্রতিপক্ষ এসে হাজির। সেই প্রতিপক্ষের নাম বায়ুদূষণ।

বায়ুদূষণ দিল্লির চিরন্তন সমস্যা। গত কয়েক দিন অবস্থা খুবই খারাপ। এতটাই যে, গত বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল। সব ধরনের নির্মাণকাজও। গতকাল মানে শুক্রবার বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বের সব শহরের মধ্যে এক নম্বরে ছিল দিল্লি। সেটিও পাকিস্তানের লাহোরকে বিপুল ব্যবধানে পেছনে ফেলে। সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার বিশ্বের সব শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ে কাজ করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দিল্লির একিউআই ছিল ৬৪০। খারাপের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাহোরের ৩৩৫।

দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে ধোঁয়াশা পরিবেশের এই ছবিটি গতকালের। এদিন বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বের সব শহরকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল দিল্লি

তা এই একিউআই-টা কী? এটা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের সংক্ষেপিত রূপ। যা শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত থাকলে ‘ভালো’, ৩০০ থেকে ৪০০ পর্যন্ত উঠে গেলে তা ‘বিপজ্জনক’। এ থেকে বুঝে নিতে পারেন, একিউআই ৬৪০-এর অর্থ কী। স্বাস্থ্যের জন্য তা কতটা হুমকি।

আজ শনিবারের অবস্থাও শুক্রবারের চেয়ে ভালো বলে মনে হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শীর্ষস্থানটা এদিনও ধরে রাখতে যাচ্ছে দিল্লি। শীতের ভোরে চারপাশ যেমন কুয়াশায় ঢাকা থাকে, আজ সকাল থেকেই শহর দিল্লি এমন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। হোটেলের সাত তলার রুমের জানালা দিয়েও খুব বেশি দূরে দেখা যায় না। সব ছায়া ছায়া। কুয়াশার মতো দেখালেও আসলে কুয়াশা নয়। এটা আসলে ধোঁয়া। ইংরেজিতে যেটিকে বলে, ‘টক্সিক হেজ’।

দিল্লির বাতাসের অবস্থা বলতে গেলে সারা বছরই খারাপ থাকে। বছরের এই সময়টায় তা আরও খারাপ হয়। তাপমাত্রা ও বাতাসের বেগ কমে যাওয়া একটা কারণ। আরেকটা কারণ, পাশের তিন রাজ্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে ভেসে আসা ধোঁয়া। যে ধোঁয়ার উৎস ধান কেটে ফেলার পর খড় পোড়ানো ঐতিহ্য। ওই খড় পোড়ানোর ধোঁয়া বাতাসে ভেসে এসে দিল্লিকে আরও ভারাক্রান্ত করে তোলে।

পরিস্থিতি কতটা খারাপ, তা টের পেলাম হোটেলের বাইরে একটু ঘুরে আসতে গিয়ে। বাতাস এমন ভারী যে, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চোখ জ্বালা করে। সম্ভব হলে সবাইকে যেখানে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে, কেউ কেউ কোভিডের সময়ের মতো লকডাউন দেওয়ার কথাও বলছেন, সেখানে ক্রিকেটের মতো এমন দীর্ঘ একটা খেলা কীভাবে হবে, এই প্রশ্ন তাই উঠছেই।

বায়ুদূষণের কারণে শ্রীলঙ্কা দল আজ অনুশীলন করেনি। ছবিটি পূর্বের অনুশীলনের

এরই মধ্যে এই ম্যাচের আগে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলেছে এই বায়ুদূষণ। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই দলের প্রস্তুতিতে। গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় দিল্লিতে আসা বাংলাদেশ দল গতকাল এখানে প্রথম অনুশীলনে নামতে চেয়েছিল। বায়ুদূষণের মাত্রা দেখে সেটি বাতিল করা হয়েছে। আজ দুপুরে অনুশীলন সেশন বাতিল করেছে শ্রীলঙ্কাও। দলের ডাক্তার এই অবস্থায় ক্রিকেটারদের মাঠে যাওয়ার অনুমতি দেননি।

শহরে একেক জায়গায় বায়ুদূষণের মাত্রা একেকরকম। এখন অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম নাম নেওয়া এক সময়কার ফিরোজ শাহ কোটলা যে এলাকায়, সেখানকার অবস্থাও ভালো নয়। আজ সকাল ৯টার দিকে স্টেডিয়ামে একিউআই ছিল ৪১৩। আজও তাই অনুশীলন করা না-করা নিয়ে দোদুল্যমানতা ছিল বাংলাদেশ দলে। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা-সন্ধ্যা বিকেল বেলায় স্টেডিয়ামে গেছে বাংলাদেশ দল। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অনুশীলন করার কথা। তবে অনুশীলন কতক্ষণ হবে, তা নির্ভর করছে ক্রিকেটাররা কেমন বোধ করেন, তার ওপর।

পূর্বাভাস যা বলছে, তাতে আগামী দুই/তিন দিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাহলে খেলা কি হবে? দুপুরের দিকে আইসিসির মুখপাত্র রাজশেখর রাওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বললেন, আইসিসি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্যের বিষয়টা আইসিসির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছুক্ষণের মধ্যে আইসিসি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এটিই জানানো হয়েছে সবাইকে।

অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নেমেছে বাংলাদেশ দল। মুশফিকের নেটের এ ছবিটি পুরোনো

আরেকটু খোঁজখবর করে জানা গেল, আবহাওয়ার অন্য সব প্রতিকূলতার মতো এই বায়ুদূষণে খেলা হওয়া না-হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ারও ম্যাচ রেফারির। ম্যাচের দিন সকালে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষেত্রে বিবেচনায় আসবে বায়ুদূষণের মাত্রা এবং দৃষ্টিসীমা। কুয়াশা বা ধোঁয়ার মাত্রা এমন থাকলে তো বল দেখতেই সমস্যা হওয়ার কথা। তবে আপাতত খেলা হবে বলে ধরে নিয়েই অনুশীলনে গিয়েছে বাংলাদেশ দল। কারণ এর আগেও দিল্লিতে এমন পরিস্থিতিতে খেলা হয়েছে। ক্রিকেটারদের জন্য যা মোটেই সুখকর হয়নি। শ্রীলঙ্কা দলের তো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাই আছে। ২০১৭ সালে এখানে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে ড্রেসিংরুমে বমি করেছেন শ্রীলঙ্কার অনেক ক্রিকেটার। ছয়-সাতজন ক্রিকেটার ফিল্ডিং করতে নেমেছেন মুখে মাস্ক পরে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছে প্রায় চার বছর আগে। সেই সময়েও বায়ুদূষণ নিয়ে যথেষ্টই উৎকণ্ঠা ছিল। ক্রিকেটারদের অনেকের টুকটাক সমস্যাও হয়েছিল। তবে ২০১৯ সালের ওই ম্যাচটা ছিল টি-টোয়েন্টি। এবার তো ওয়ানডে, মাঠে থাকতে হবে আরও অনেক বেশি সময়। চ্যালেঞ্জটাও তাই অনেক বেশি।

এই বিশ্বকাপে বিপর্যস্ত দুই দলকে ব্যাটিং-বোলিংয়ের সঙ্গে 'কমন' এই প্রতিপক্ষকে নিয়েও তাই যথেষ্টই ভাবতে হচ্ছে।