মাহমুদউল্লাহ
মাহমুদউল্লাহ

সবার সম্মতিতেই বাদ মাহমুদউল্লাহ

মাহমুদউল্লাহর টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ার নিয়ে নানা রকম গুঞ্জনটা কদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। বিশ্বকাপের দলে তিনি থাকবেন কি থাকবেন না—এটাই হয়ে গিয়েছিল গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আজ সেই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে। দলের নীতিনির্ধারকদের সবার সম্মতিতেই মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর ব্যর্থতার দায়ে অধিনায়কত্ব হারাতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। নেতৃত্ব হারালেও দলে জায়গা ধরে রেখেছিলেন। তবে লম্বা সময়ের ছন্দহীনতা থেকে বেরোতে পারেননি এশিয়া কাপেও। কোনো কোনো ম্যাচে রান পেলেও প্রশ্ন ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন ও স্ট্রাইক রেট নিয়ে।

বিসিবির প্রস্তুতি ক্যাম্পে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ

বাদ পড়ার পরিস্থিতিটা তাই তৈরি হয়েই ছিল। মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মিনহাজুল বলেছেন, ‘রিয়াদের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। জাতীয় দলের হয়ে অনেক ভালো ভালো খেলা আমাদের উপহার দিয়েছে। শ্রীরাম আমাদের একটা পরিকল্পনা দিয়েছে। আগামী এক বছরের জন্য এই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগোচ্ছি। গতিপথটা একটু ভিন্ন। ওই পরিকল্পনার সঙ্গেই গিয়েছি আমরা।’

এশিয়া কাপে ব্যর্থতার পর টি–টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তামিম ইকবাল তো আরও আগেই নিজেকে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। অভিজ্ঞদের মাঝে বাকি ছিলেন কেবল সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।

তবে দলীয় সিদ্ধান্তে এবার বাদ পড়লেন মাহমুদউল্লাহও। তাঁকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গে মিনহাজুল বলেছেন, ‘সবার সম্মতিক্রমে রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সবার সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। সাকিব তো এশিয়া কাপ থেকেই অধিনায়ক। টিম ম্যানেজমেন্টের সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সবার সম্মতিক্রমে রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সবার সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। সাকিব তো এশিয়া কাপ থেকেই অধিনায়ক। টিম ম্যানেজমেন্টের সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মিনহাজুল আবেদীন, প্রধান নির্বাচক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

বিশ্বকাপ যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তখনই দল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে টিম ম্যানেজেমন্ট। দল গোছানোর কাজটা আরও আগে করা যেত কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে মিনহাজুল বলেছেন, ‘না, দেরি না। আমরা টানা অনেক ম্যাচ খেলেছি। কিছু খেলোয়াড়ের লম্বা চোট ছিল। এ কারণে অনেক খেলোয়াড়কে অনেকভাবে (পরীক্ষা করে) দেখতে হয়েছে। এমনিতেই এই ফরম্যাটে অনেক পিছিয়ে আছি। তবে এখনকার খেলোয়াড়দের যে সামর্থ্য আছে, এশিয়া কাপ থেকে মনমানসিকতার যে পরিবর্তন দেখছি, আশা করছি এই বিশ্বকাপে আমরা ভালো কিছু করব।’

আজ ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দল

বিশ্বকাপ সামনে রেখে শুরু হওয়া অনুশীলনে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগে জানানো হলো না কেন? উত্তরে মিনহাজুল বলেছেন, ‘একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় জুনিয়রদের সঙ্গে থাকলে জুনিয়ররা অনেক কিছু শিখতে পারে। সে আমাদের সাবেক অধিনায়ক। তার সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা মানে নতুনদের অনেক কিছু শেখার আছে। ওকে যখন অনুশীলনে আনা হয়েছে, দল নিয়ে কিন্তু কোনো আলোচনা হয়নি। তখন বসা শুরু করেছি মাত্র। তরুণেরা ওর কাছ থেকে চলাফেরা–খেলা অনেক কিছু শিখতে পারে। অনুশীলনের পরই আমরা দল নিয়ে আলোচনা করেছি।’

বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের আগেই বাদ পড়লেন মাহমুদউল্লাহ। এর মধ্য দিয়ে বিদায়ের ইঙ্গিতই কি পেলেন তিনি? দুই নির্বাচক অবশ্য এখনই দুয়ার বন্ধ করতে চান না। অবসর না নিলে বিবেচনায় রাখা হবে বলে জানালেন তাঁরা। নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলেছেন, ‘সময় বলে দেবে। কোনো খেলোয়াড় অবসর না নিলে তার অবশ্যই সুযোগ থাকবে।’ এর সঙ্গে মিনহাজুল যোগ করেন, ‘অবশ্যই (বিবেচনায়) থাকবে। এটা তো অপ্রত্যাশিত কিছু না।’

মুশফিক নির্বাচকদের বাছাইয়ের সুযোগ না দিয়ে এশিয়া কাপ শেষেই টি–টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহকে ছেঁটে ফেললেন নির্বাচকেরাই। এ দুজন না থাকায় দলে অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখা দেবে কি না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

তবে সময় নিয়েই বিকল্প তৈরি করতে চান বলে জানালেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল, ‘এই দুজনের অবদান কিন্তু অনস্বীকার্য। অন্য কারও সঙ্গে তাদের তুলনা করতে পারবেন না। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দীর্ঘ সময় সার্ভিস দিয়ে গেছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে। ওদের সঙ্গে অন্য খেলোয়াড়দের তুলনা করতে পারবেন না। কিন্তু ভালো খেলোয়াড় তৈরির জন্য সময়ের প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প তৈরি করতে পারবেন না, সময় দিতে হয়। আমাদের বসয়ভিত্তিকে যথেষ্ট ভালো খেলোয়াড় আছে, ওদের নার্সিং চলছে। আশা করছি, ওরা দেশের জন্য ভালো কিছু করবে।’