দল ধারাবাহিকভাবে জিততে থাকলে কেউ একটু খারাপ করলেও তা চোখে পড়ে না। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত-ওমানে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনা যায়। ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ, ম্যাথু ওয়েড, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ভেলায় চড়ে আরাধ্য শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। দল বিশ্বকাপ জেতায় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও স্টিভেন স্মিথের ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে যায়।
তবে অস্ট্রেলিয়ায় এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লোকেশ রাহুলের বেলায় সেটা হচ্ছে না। পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ভারত সেমিফাইনালের দিকে এগিয়ে গেলেও দুই ম্যাচেই রাহুলের ব্যাটিং–ব্যর্থতা নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ভারতের অগণিত ভক্ত রাহুলকে বাদ দিয়ে ঋষভ পন্তকে খেলানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই ম্যাচের একটিতেও দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি রাহুল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ আর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে করতে পেরেছেন ৯ রান। শুরুতেই দলকে বিপদে ফেলে যাওয়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে তাঁর আউট হওয়ার ধরন।
পাকিস্তানের দেওয়া ১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নাসিম শাহর বলে বোল্ড হন রাহুল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে পল ফন মিকেরেনের বলে হন এলবিডব্লু। যদিও টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্পে লাগত না। মানে, রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
এ নিয়েও সমালোচনা কম হচ্ছে না। মজা করে একজন লিখেছেন, ‘কে এল রাহুল জানত সে নটআউট ছিল। রিভিউ না নেওয়া একধরনের ধাপ্পাবাজি। (পাকিস্তানের পর) নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও রান না করে সে তার বিদ্বেষীদের ট্রল করল। তোমাকে টুপি খোলা সালাম।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে রাহুলের ছন্দহীনতা নিয়ে যখন সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন কী ভাবছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট? আজ পার্থে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কি সহ-অধিনায়ককে বসিয়ে রাখার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে, নাকি ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে তাঁকে নিচে খেলানো হবে?
ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কাল সবকিছু খোলাসা করেছেন বিক্রম রাঠোর। ভারতীয় দলের ব্যাটিং কোচ বলেছেন, ‘সত্যি বলতে কি, এ মুহূর্তে সে রকম (রাহুলকে বাদ দেওয়া) পরিকল্পনা নেই। সবে দুই ম্যাচ হয়েছে। কাউকে যাচাই করার জন্য এটা যথেষ্ট নয়। প্রস্তুতি ম্যাচে সে দারুণ ব্যাটিং করেছে।’
রাহুল শিগগিরই ছন্দে ফিরবেন বলেও বিশ্বাস রাঠোরের, ‘সব খেলোয়াড়েরই কিছু স্বকীয়তা আছে। একেকজনের খেলার ধরন একেক রকম। সবাই নিজস্ব নিয়মে ইনিংস লম্বা করার চেষ্টা করে। সে একবার ভালো শুরু পেয়ে গেলে আগ্রাসী হতে সময় নেবে না।’
ভারতীয় দলে অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও রাহুল ছাড়া স্বীকৃত ওপেনার নেই। বিভিন্ন সময় পন্ত, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদবরা ইনিংসের গোড়াপত্তন করলেও বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে টিম ম্যানেজমেন্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যেতে চায় না বলেও জানিয়েছেন রাঠোর।
তা ছাড়া পন্ত উইকেটরক্ষক হওয়ায়ও বেধেছে বিপত্তি। এ মুহূর্তে দলের প্রথম পছন্দের কিপার দিনেশ কার্তিক। ৩৭ বছর বয়সী কার্তিক আছেন অবিশ্বাস্য ছন্দে। এই সময়ে ঘুরেফিরে যে ‘ইমপ্যাক্ট’ প্রসঙ্গটি উঠে আসছে, সেখানে বেশ সফল তিনি। যদিও সাম্প্রতিক সিরিজগুলোয় কার্তিকের সঙ্গে কিপিং গ্লাভস ভাগাভাগি করেছেন পন্ত। তবে দলের সেরা কম্বিনেশন বাছতে গিয়ে দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
এ ব্যাপারে ব্যাটিং কোচ রাঠোরের যুক্তি, ‘সন্দেহ নেই, ঋষভ (পন্ত) অসাধারণ খেলোয়াড়। জানি, যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বিধ্বংসী ব্যাটিং করার সামর্থ্য আছে ওর। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা ১১ জনের বেশি খেলাতে পারি না। তবে ওকে আমরা প্রস্তুত থাকতে বলেছি। যেকোনো সময় সুযোগ আসতে পারে।’