কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম। যেটির গ্যালারি আর প্রেসবক্সে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি খুব একটা
কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম। যেটির গ্যালারি আর প্রেসবক্সে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি খুব একটা

কানপুরের গ্রিন পার্ক নামেই শুধু গ্রিন

‘গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম’, নাম শুনলেই সবুজে মোড়ানো স্টেডিয়ামের ছবি কল্পনায় আসে। কিন্তু কানপুরের এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এলে তেমন কিছুই মনে হবে না। প্রথম দেখায় তো অনেকে বলে বসতে পারেন, স্টেডিয়ামটি শুধু নামেই ‘গ্রিন’, কাজে নয়। বাইরে থেকে স্টেডিয়ামের ধূসর দেয়াল, ভাঙাচোরা গেট দেখলে নামের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাবেন না। ভেতরে ঢুকলে ৩০-৩৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সকে গ্যালারি আলাদা করা কঠিন।

প্রেসবক্স না বলে বরং গ্যালারি বলাই ভালো। ভাঙাচোরা টেবিল বসিয়ে প্রেসবক্সের একটা আবহ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অবশ্য এই প্রেসবক্স থেকে মাঠের আবহটা পুরোপুরি পাওয়া যাবে। কানপুরের প্রচণ্ড গরমে খেলোয়াড়দের কতটা কষ্ট হচ্ছে, তা ভালোভাবেই টের পাবেন সাংবাদিকেরা। কারণ, প্রেসবক্সে নেই কোনো কাচের দেয়াল। এসি থাকার তাই প্রশ্নই ওঠে না। টেস্ট শুরুর দুদিন আগে কোনো ফ্যানেরও দেখা পাওয়া গেল না।

মাঠের গ্যালারিও পুরোনো। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। দিল্লি থেকে আসা ভারতীয় সাংবাদিক প্রত্যুষ রাজ যা দেখে মহা বিরক্ত। প্রেসবক্সে দাঁড়িয়ে গ্যালারির দিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘ওই দিকটা দেখুন। পন্ত একটা ছক্কা মারলে মানুষ নাচানাচি শুরু করলেই মনে হয় ভেঙে পড়বে। এখনো যেন ওই সাহেবদের আমলে পড়ে আছে। এখানে টেস্ট দেওয়ার কী দরকার? দক্ষিণে হোক টেস্ট। দর্শকও হয়। দেখতেও ভালো।’
প্রত্যুষ ঠিকই বলেছেন।

উত্তর প্রদেশের শহর কানপুরের এ মাঠটি ভারতের পুরোনো স্টেডিয়ামগুলোর একটি। তবে মুম্বাই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা, আহমেদাবাদ, নাগপুরের মতো আধুনিক হয়ে ওঠেনি। ভারতের স্বাধীনতার আগে ১৯৪৫ সালে তৈরি এ মাঠটাকে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য ব্যবহার করত ইংরেজরা। নামকরণও হয়েছে ইংরেজ মহিলা ‘ম্যাডাম গ্রিন’-এর নামে। তিনি নাকি প্রতিদিন ভোরে এই মাঠে এসে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিতেন। এরপর এই মাঠ বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হলেও মরচে পড়া আবহটা যায়নি।

কানপুর গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামের প্রেস বক্স

একটা কারণ অবশ্য আছে। গ্রিন পার্ক ভারতের একমাত্র স্টেডিয়াম, যেটির সেই অর্থে কোনো অভিভাবক নেই। ভারতের প্রতিটি টেস্ট ভেন্যুই কোনো না কোনো অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। গ্রিন পার্ক নিয়ে উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সেই অর্থে মাথাব্যথা নেই। দুই দলের ড্রেসিংরুমের পাশেই বড় করে ‘উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন’ লেখা থাকলেও এ স্টেডিয়ামটি উত্তর প্রদেশ ক্রীড়া বিভাগের সম্পত্তি।

গ্রিন পার্ক ভারতের একমাত্র স্টেডিয়াম, যেটির সেই অর্থে কোনো অভিভাবক নেই।

উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ঘরের মাঠ লক্ষ্ণৌতে, ৫০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার ঝকঝকে নতুন স্টেডিয়ামটির নাম একানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, যেটি উত্তর প্রদেশ ও আইপিএল দল লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টের হোম গ্রাউন্ড। গ্রিন পার্ক উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কাছে জাদুঘরের মতো, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের অংশ। গ্রিন পার্কের কপালে তিন-চার বছর পর একটি টেস্ট ম্যাচ ভাগে পড়ে ওই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জোরে।

সর্বশেষ টেস্ট হয়েছে ২০২১ সালে, প্রথমটি হয়েছিল ১৯৫২ সালে। ওই সময় উত্তর প্রদেশের প্রথম গভর্নর স্যার এইচ পি মোদির নামে গ্রিন পার্ককে ‘মোদি স্টেডিয়াম’ বলা হতো। এ মাঠেই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানুয়াল স্কোরবোর্ড। ২০১৫ সালে সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।

একই জায়গায় নতুন করে স্কোরবোর্ড বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। পাশেই ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘স্টুডেন্ট গ্যালারি’। গ্রিন পার্কই ভারতের একমাত্র মাঠ যেখানে, ছাত্রছাত্রীদের খেলা দেখার জন্য নির্দিষ্ট করে গ্যালারি রাখা হয়েছে। গ্রিন পার্ক নিয়ে অনেক নেতিবাচকের কথার মধ্যে ইতিবাচক বলতে গেলে এটুকুই।